এক সময়ের দুই মিত্র রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে। বেশ আগে থেকেই তাদের টানাপোড়েন শুরু হলেও এখনো তা অব্যাহত আছে। আগামী দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকার পর্যন্ত সব নির্বাচনে জামায়াতকে ছাড়াই অংশ নেবে বিএনপি।
সর্বশেষ গত ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জামায়াতের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছাড়াই অংশ নেয় দলটি। সে নির্বাচনে ২০-দলীয় জোটের অন্য সব শরিক দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সর্বাত্মক সমর্থন দিলেও জামায়াত দূরে ছিল।
আগামী ২১ ও ২৯ মার্চ অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদের পাঁচটি উপনির্বাচনসহ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও জামায়াত ছাড়াই অংশ নিচ্ছে বিএনপি। বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই জামায়াতে ইসলামী বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়েছে। এমনকি নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়েই তারা আর কোনো প্রয়োজনবোধ করছে না। সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক কোন পর্যায়ে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ গণমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর। এ বিষয়ে অনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে আমরা জানা নেই। তবে কেউ আসুক বা না আসুক, আমরা রাজনৈতিক মুখোশ খুলে এই সরকারের চরিত্রটা জনগণের সামনে বারবার তুলে ধরার জন্যেই সব ধরনের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। যাতে বারবার প্রমাণিত হয় যে, এই আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কখনই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, নির্বাচনে অংশ নেবে কি না-এটা জামায়াতের নিজেদের দলীয় সিদ্ধান্ত। তারা মনে করে এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। এ জন্য তাদের কোনো রকমের অংশগ্রহণ নেই। কিন্তু আমরা মনে করি গণতন্ত্রের স্বার্থে সব নির্বাচনেই যাওয়ার প্রয়োজন আছে। এতে এ সরকারের অধীনে যে কখনই নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়-সেটা বারবার প্রমাণ হচ্ছে।
সূত্রে জানা গেছে, জামায়াত যেমন বিএনপির সঙ্গে কোনো পর্যায়ের নির্বাচনে আর অংশ নিচ্ছে না, তেমনি জামায়াতে ইসলামীকে ছাড়া আগামীতে সব দল, জোট ও ফ্রন্টকে নিয়ে সব ধরনের নির্বাচনেই অংশ নেবে বিএনপি। ২০-দলীয় জোটের বৈঠকেও জামায়াতের প্রতিনিধিরা এখন আসেন না। জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের সর্বস্তরের নির্বাচনেই যে কোনো পরিস্থিতিতে অংশ নেবে দলটি। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই সাম্প্রতিক সবগুলো নির্বাচনেই অংশ নিচ্ছে সংগঠনটি।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেন, কোন নির্বাচনে কোন দল অংশ নেবে কিংবা নেবে না- সেটা তাদের নিজেদের দলীয় সিদ্ধান্ত। তবে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের স্বার্থে আমরা সব ধরনের নির্বাচনেই অংশ নেব। এমনকি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনেও আমরা অংশ নেব। কারণ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল বিএনপি সবসময়েই নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বিশ্বাস করে। আগামী ২১ ও ২৯ মার্চ আসন্ন পাঁচটি উপনির্বাচন ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে জামায়াতকে বাদ দিয়ে অংশ নেওয়ার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে বিএনপি। রাজপথে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের পাশাপাশি সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদারসহ ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণের পরিকল্পনা নিচ্ছেন দলীয় নীতিনির্ধারকরা।
বিএনপির একজন নীতিনির্ধারক জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে বলেন, সারা দেশে ক্ষমতাসীন দলের দিকেই জামায়াত নেতা-কর্মীরা এখন বেশি ঝুঁকছেন বলে সবার ধারণা। এ জন্যই সম্ভবত জামায়াতের নেতা-কর্মীদের ওপর বর্তমানে নির্যাতন ও ধরপাকড়ের কথা সচরাচর শোনা যাচ্ছে না।