ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আদর্শভিত্তিক প্রজন্মের দল গড়ে তুলতে চায়। এই উদ্যোগেরই অংশ হিসেবে নতুন সদস্য সংগ্রহের পাশাপাশি পুরনোদের সদস্যপদ নবায়ন অভিযান শুরু করেছে দলটি। আর এক্ষেত্রে যাদের বিরুদ্ধে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে, তাদের দলে ঠাঁই দেওয়া হবে না। দলটির নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
এর আগে, জাতীয় নির্বাচন, দলের জাতীয় সম্মেলন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ বেশকিছু কারণে বারবার পেছানো হয় সদস্য সংগ্রহ অভিযান। দীর্ঘদিন পর ৪ মার্চ থেকে সদস্য সংগ্রহ অভিযান পুনরায় শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক সদস্য সংগ্রহের বই জেলা নেতাদের হাতে তুলে দিয়ে এই কার্যক্রমের সূচনা করেন। প্রথমে দলের জেলা পর্যায়ে এই কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়েও এই অভিযান শুরু হবে।
দলের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, একদশক আগে ক্ষমতায় এসে ২০১০ সালে বেশ প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করেছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু বিভিন্ন কারণে বছর না ঘুরতেই ওই প্রক্রিয়া এগোনোর আগেই বন্ধ হয়ে যায়। খোদ ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সদস্যপদই নবায়ন হয়নি তখন। বিষয়টিকে তখন সাংগঠনিক দুর্বলতা হিসেবে আখ্যায়িত করেন দলের নেতাকর্মীরা।
এর দীর্ঘ সাত বছর পর ২০১৭ সালের ২০ মে গণভবনে দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সদস্য সংগ্রহ-নবায়ন কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। কিন্তু বিভিন্ন কারণে আবারও তা মুখ থুবড়ে পড়ে। একাধিকবার উদ্যোগ নিলেও রাজনৈতিক ও দলের সাংগঠনিকসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন অভিযান অব্যাহত রাখতে পারেনি দলটি।
তবে, মুজিববর্ষকে সামনে রেখে এবার দলের সদস্য সংগ্রহ অভিযান পুরোদমে চলবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। এবার সদস্য সংগ্রহ অভিযানে দলের মূল ফোকাস হচ্ছে—কোনোভাবেই বিতর্কিত ও অনুপ্রবেশকারীরা যেন দলের নতুন সদস্য না হতে পারেন।
এই বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা জেলা পর্যায়ে এই নির্দেশনা পাঠিয়েছি, যেন কোনো বিতর্কিত ব্যক্তি দলের প্রাথমিক সদস্য হতে না পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের নতুন সদস্য সংগ্রহ বা নবায়ন কার্যক্রমে বিতর্কিত ব্যক্তিদের বাদ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছি—সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ভূমিদখলকারী মাদক কারবারি, সাম্প্রদায়িক শক্তি ও স্বাধীনতাবিরোধীরা আওয়ামী লীগের সদস্য হতে পারবে না।’
আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যদের কারও বিরুদ্ধে বিতর্ক থাকলে তাদের সদস্যপদ নবায়ন করা হবে না জানিয়ে কাদের বলেন, ‘বিতর্কমুক্তদের দলের প্রাথমিক সদস্যপদ দেওয়া হবে।’
টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ গত কয়েক মাসে দলের শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে বিতর্কিত ও দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় আনছে। এর মাধ্যমে দলের জনপ্রিয়তা সাধারণ মানুষের কাছে আরও বেড়েছে বলে মনে করছেন নেতারা।
তারা বলছেন, ক্যাসিনোকাণ্ডে ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট থেকে শুরু করে সর্বশেষ শামিমা নূর পাপিয়ার বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযানের এই প্রভাব সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রমেও ফেলতে চায় আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, গত একদশকে আওয়ামী লীগকে তরুণ প্রজন্মের কাছে বেশি জনপ্রিয় হয়েছে। সরকারও তরুণদের প্রাধান্য দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। তাই এবারের সদস্য সংগ্রহ অভিযানে তরুণদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে দলটি।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘দল থেকে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া আছে—কোনো বিতর্কিত ব্যক্তিকে যেন আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য করা হয়। দলের পুরনো কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার সদস্যপদও নবায়ন হবে না।’ কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে তদন্ত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট জেলার নেতার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।