‘সাম্যের গান গাই-আমার চক্ষে পুরুষ রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই।…বিশ্বের যা-কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের রচনায় নারীর বীরত্বগাথা এভাবেই প্রকাশ পেয়েছে।
আজ ৮ মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারীর অর্জন, আর অগ্রযাত্রার প্রতীক এই দিবস। পরিপূর্ণ অধিকারের দাবিতে নারীরা সুদীর্ঘকাল ধরে যে আন্দোলন চালিয়ে আসছে তারই সম্মানস্বরূপ ১৯৭৫ সাল থেকে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস।
সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিনটি উদযাপিত হয়। দিবসটি উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গতরাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মোম জ্বেলে নারী সমাবেশ করেছে।
১৯৮৩ সালে পুলিৎজার পুরস্কারজয়ী মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গ লেখক এবং নারীবাদী অ্যালিস ওয়াকারের প্রশংসিত উপন্যাস ‘দ্য কালার পারপল’ বইটি এই রঙ নির্ধারণে অনুপ্রেরণা জোগায়। এ বইতে তিনি নারীদের অধিকারের কথা তুলে ধরেছেন। ধারণা করা হয়, সেখান থেকেই নারীবাদী আন্দোলনের সঙ্গে জুড়ে গেছে বেগুনি-সাদা রঙ।
এ নারী দিবস পালনের পটভূমি হচ্ছে এই দিনে আমেরিকায় ঘটে যাওয়া এক আন্দোলন। ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ নিউইয়র্কের সুতা কারখানায় কর্মরত নারীশ্রমিকরা সড়কে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হন। সেদিন বেতন বৈষম্য, নির্দিষ্ট কর্মঘন্টা আর কাজের বৈরী পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে নারীরা একজোট হলে তাদের ওপর কারখানা মালিকেরা আর মদদপুষ্ট প্রশাসন দমন-পীড়ন চালায়।
প্রায় অর্ধশতাব্দী পর ১৯০৮ সালে জার্মানীতে এ দিনটি স্মরণে প্রথম নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় । ১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭টি দেশ থেকে প্রায় ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে অংশ নিয়েছিলেন।
এ সম্মেলনেই প্রথমবারের মতো ক্লারা প্রতি বছরের ৮ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন। এ প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে ১৯১৪ সাল থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ নারী দিবস পালিত হয়। বাংলাদেশে ১৯৭১ সাল থেকেই ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
১৯৭৫ সালে জাতিসংঘ ৮ মার্চ দিনটিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের আহ্বান করলে এরপর থেকে সারা বিশ্বব্যাপী দিনটি পালিত হয়ে আসছে।