জনগণকে ঝুঁকিতে ফেলে মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান নয়: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন জনগণকে ঝুঁকিতে ফেলে মুজিববর্ষ পালন করবেন না। তিনি বলেছেন, জনগণ যেন কোনো ঝুঁকির মধ্যে না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রেখে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করা হবে। মুজিব শতবার্ষিকীতে লাখো মানুষ জমায়েত হওয়ার কথা রয়েছে। আমরা সে জমায়েত বন্ধ করে দিয়েছি। অনুষ্ঠান হবে, তবে সীমিত ও ছোট আকারে। তবে আমরা অন্যান্য কর্মসূচি অব্যাহত রাখব। অন্যান্য আয়োজন সবকিছু ঠিকঠাক থাকবে। এটি তো বছরব্যাপী অনুষ্ঠান। গণজমায়েত হবে এমন অনুষ্ঠান আমরা স্থগিত করে দিয়েছি।

আজ সোমবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের এক জরুরি বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

universel cardiac hospital

মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে লোকসমাগম কম হয় সেদিকে বিশেষ গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, লোকসমাগম যাতে একটু কম হয়, সেটা দেখে আমরা অনুষ্ঠান করব। এই সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করব, আমরা এমনভাবে করব যেন জনগণ কোনো ঝুঁকির মধ্যে না পড়ে। এমনকি ২৬ মার্চ শিশুদের যে অনুষ্ঠান আমরা করি, সেটাও স্থগিত করে দিয়েছি; যাতে কোনোভাবে এটা মানুষের ক্ষতি করতে না পারে। তবে আমরা অন্যান্য কর্মসূচি অব্যাহত রাখবো। পুষ্পমাল্য অর্পণ ও টুঙ্গিপাড়ায় শিশুদের অনুষ্ঠান সীমিত পরিসরে করবো।

মুজিববর্ষের সব অনুষ্ঠানসূচি পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গতকাল রোববার আমি, রেহেনা, সায়মা, রেদওয়ান সবাই ছিলাম পরিবারের পক্ষ থেকে। আমরা সবাই মতামত দিয়েছি, জনগণের কল্যাণটা সবথেকে বড়। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী পালন আমাদের জন্য একটা বিশাল পাওয়া। আমরা সেটা উদযাপন করব। সেটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সেটা একটু ভিন্নভাবে।’

মুজিববর্ষে আগত বিদেশি অতিথিদের না আসার কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে অনেকই তাদের নিজ নিজ দেশের কারণে তারা দেশ থেকে বাহিরে যেতে পারছেন না। যে সমস্যাটা তাদের আভ্যন্তরীণভাবে রয়েছে। তারা আমাদের জানিয়েছেন তারা খুবই আগ্রহী কিন্তু তাদেরও সমস্যা রয়েছে।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সারাদেশে বিভিন্ন হাসপাতাল প্রস্তুত রয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকায় তিনটি হাসপাতাল আমরা প্রস্তুত করেছি। জেলা-উপজেলা হাসপাতালগুলোতেও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আমরা টেলিভিশনে সবসময় সচেতনতার বিষয় প্রচার করাচ্ছি। করোনা প্রতিরোধে সারা দেশ প্রস্তুত। করোনা ভাইরাসের কারণে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এই রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকারে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি অনুরোধ করব কারো মধ্যে এতটুকু লক্ষণ দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে। আমাদের দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সচেতন থাকতে হবে। নিজের হাতমুখ পরিষ্কার রাখতে হবে। ঘর পরিষ্কার রাখতে হবে। বাড়ির পাশে রাস্তাও পরিষ্কার রাখতে হবে। এই ভাইরাসটি বেশি দিন থাকবে না। এটি বাতাসে ওড়ে না।

এ সময় সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারাবিশ্বে যখন করোনা এমন আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে, তখন দেশের সকল মানুষের স্বাস্থ্যের প্রতি নজর রাখা আমাদের দায়িত্ব-কর্তব্য বলেই মনে করি। আর সে কারণেই আমরা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিয়েছি। এটা নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।

ইতালি-ফেরতদের আত্মীয়দের পরীক্ষা করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্দেহভাজনদের আমরা পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছি। যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের কোয়ারান্টাইনে নিয়েছি। তারা কোথায় কোথায় গেছে সে খোঁজ নিয়ে আমরা তাদের পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছি। তাদের আত্মীয়-স্বজনদের পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছি।

হ্যান্ডশেক করা বন্ধ জানিয়ে তিনি বলেন, হাঁচি-কাশির সময় হাতের বদলে বাহু ব্যবহার করা যেতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অহেতুক মাস্ক পরার দরকার নেই। কিন্তু সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। অনেকেই পাগল হয়ে মাস্ক কিনছে। এটা করার দরকার নেই। শুধু যাদের সর্দি-কাশি আছে তাদের সাবধানে থাকতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাদের সঙ্গে আমাদের অন অ্যারাইভাল ভিসা চুক্তি করা আছে। এটা আপাতত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঞ্চালনায় বৈঠকে কার্যনির্বাহী কমিটির বেশির ভাগ সদস্যই উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে