প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকতে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
আজ মঙ্গলবার মাউশির মহাপরিচালক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক স্বাক্ষরিত আদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং অধিদপ্তরের অধীন সব অফিসকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
‘করোনা ভাইরাস রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় করণীয়’ শীর্ষক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সরকার এরই মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধ ও আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার্থে সব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। এ ভাইরাস সংক্রমণরোধে সবার সতর্কতা ও সচেতনতা প্রয়োজন। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন সব অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সচেষ্ট থাকার নির্দেশ দেওয়া হলো।
গত ৮ মার্চ দেশে তিনজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। এ পরিপ্রেক্ষিতে আইইডিসিআরের করোনাভাইরাসের তথ্য সম্বলিত নির্দেশনা ও পরামর্শ অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছে মাউশি।
২০১৯ এন-করোনা ভাইরাস
অনেক প্রজাতির করোনাভাইরাসের মধ্যে যে সাতটি মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে তার একটি ২০১৯ এন-করোনা ভাইরাস।
যেভাবে ছড়ায়
এ ভাইরাস কোনো প্রথমে প্রাণী থেকে মানুষের দেহে প্রবেশ করেছে। এখন মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হচ্ছে। করোনাভাইরাস মানুষের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায় এবং শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমে (হাঁচি, কাশি, কফ, থুথু) অথবা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে একজন থেকে আরেকজনে ছড়ায়।
লক্ষণসমূহ
- ভাইরাস শরীরে ঢোকার পর সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিতে প্রায় ২-১৪ দিন লাগে।
- বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রথম লক্ষণ জ্বর। এছাড়া শুকনো কাশি বা গলা ব্যথা হতে পারে।
- শ্বাসকষ্ট বা নিউমোনিয়া দেখা দিতে পারে।
- অন্যান্য অসুস্থতা (ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ বা শ্বাসকষ্ট বা হৃদরোগ বা কিডনি সমস্যা বা ক্যানসার) থাকলে অরগ্যান ফেইলিওর বা দেহের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ বিকল হতে পারে।
প্রতিকার
যেহেতু এই ভাইরাসটি নতুন, তাই এর কোনো টিকা বা ভ্যাকসিন এখনো নেই। চিকিৎসা লক্ষণভিত্তিক।
প্রতিরোধে করণীয় (ব্যক্তিগত সচেতনতা)
- ঘন ঘন সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে (অন্তত ২০ সেকেন্ড)।
- অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করা যাবে না।
- ইতিমধ্যে আক্রান্ত এমন ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে।
- কাশির শিষ্টাচার মেনে চলতে হবে (হাঁচি বা কাশির সময় বাহু বা টিস্যু বা কাপড় দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখতে হবে)।
- অসুস্থ পশু বা পাখির সংস্পর্শ পরিহার করতে হবে।
- মাছ-মাংস ভালোভাবে রান্না করে খেতে হবে।
- অসুস্থ হলে ঘরে থাকুন, বাইরে যাওয়া অত্যাবশ্যক হলে নাক-মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
- জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত বিদেশ ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকুন এবং প্রয়োজন ব্যতীত এ সময়ে বাংলাদেশ ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করতে হবে।
- প্রবাসী আত্মীয়-স্বজনকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাংলাদেশ ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করতে হবে।
- প্রয়োজন ছাড়া যেকোনো জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে।
- অত্যাবশ্যকীয় ভ্রমণে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
সন্দেহভাজন রোগের ক্ষেত্রে করণীয়
- প্রবাসী আত্মীয় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাংলাদেশ ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা।
- অসুস্থ রোগীকে ঘরে থাকতে বলুন।
- মারাত্মক অসুস্থ রোগীকে নিকটস্থ সদর হাসপাতালে যেতে বলুন।
- রোগীকে নাক-মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করতে বলুন।
- রোগীর নাম, বয়স, যোগাযোগের জন্য পূর্ণ ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর সংরক্ষণ করুন।
- আইইডিসিআরের করোনা কন্ট্রোল রুমে (০১৭০০-৭০৫৭৩৭) অথবা হটলাইন (০১৯৩৭১১০০১১, ০১৯৩৭০০০০১১, ০১৯২৭৭১১৭৮৪ ও ০১৯২৭৭১১৭৮৫) যোগাযোগ করুন।