ইসলামি ব্যাংকিংয়ে রূপান্তরের অনুমোদন পেল যমুনা ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক

যমুনা ব্যাংক
যমুনা ব্যাংক

পূর্ণাঙ্গ শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি ব্যাংকিংয়ে রূপান্তরের অনুমোদন পেল বেসরকারি খাতের যমুনা ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্ষদ সভায় এ অনুমোদন দেয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, আজকে পর্ষদ সভায় বেশ কয়েকটি এজেন্ডা ছিল। এরমধ্যে পূর্ণাঙ্গ শরিয়াহভিত্তিক ইসলামী ব্যাংকিংয়ে রূপান্তরের জন্য যমুনা ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এছাড়া লেটার অব ইনটেন্ড (এলওআই) এর শর্ত পূরণে সিটিজেন ব্যাংকের আবেদনের প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত সময় দেয়া হয়েছে।

এর আগে গত ৯ ফেব্রুয়ারি বোর্ড সভায় স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক এবং এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের পূর্ণাঙ্গ শরিয়াহভিত্তিক ইসলামী ব্যাংকিংয়ে রূপান্তরের অনুমোদন দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

জানা গেছে, ইতিমধ্যে তিনটি ব্যাংক পূর্ণাঙ্গ শরিয়াহভিত্তিক ইসলামী ব্যাংকিংয়ে রূপান্তরের অনুমোদন পেলেও আরও বেশ কিছু ব্যাংক এখনও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর মধ্যে আইএফআইসি, এনসিসি এবং সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক রয়েছে। এসব ব্যাংক তাদের পরিচালনা পর্ষদে সিদ্ধান্ত নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দেশের বেশিরভাগ মানুষ ধর্মপ্রাণ। দিন দিন সুদভিত্তিক ব্যাংকিংয়ের চেয়ে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিংয়ে মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। ফলে ব্যাংকগুলো তাদের ব্যবসায়ীক কৌশল পাল্টাচ্ছে। এছাড়া প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোকে ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে ৮৫ টাকা ঋণ দিতে পারে। অন্যদিকে ইসলামী ব্যাংকগুলো সেখানে ৯০ টাকা দিতে পারে। এছাড়া প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর নগদ জমা সংরক্ষণ হার এসএলআর ১৩ শতাংশ রাখার বাধ্যবাধ্যকতা রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য এ হার মাত্র সাড়ে পাঁচ শতাংশ। ইসলামী ব্যাংকগুলো যে কোনো সময় আমানতে মুনাফার হার পরিবর্তন করতে পারে। প্রচলিত ধারার ব্যাংক মেয়াদ পূর্তির আগে তা পারে না। এসব কারণে প্রচলিত ধারার ব্যাংকের তুলনায় শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক বেশি লাভজনক। তাই ব্যাংকগুলো ইসলামী ব্যাংকিংয়ে রূপান্তরে আগ্রহ দেখাচ্ছে।

বর্তমানে দেশে মোট ৫৯টি তফসিল ব্যাংক কার্যক্রমে আছে। এরমধ্যে পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংক রয়েছে আটটি। আর ১৭টি ব্যাংকের ইসলামী ব্যাংকিং শাখা বা উইন্ডো রয়েছে। পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, আল-আরাফাহ্, শাহ্জালাল ইসলামী, এক্সিম, এসআইবিএল, ফার্স্ট সিকিউরিটি, আইসিবি ইসলামিক ও ইউনিয়ন ব্যাংক। এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডো রয়েছে- রাষ্ট্রীয় মালিকানার সোনালী ও অগ্রণী ব্যাংকের। তালিকায় আছে বেসরকারি খাতের পূবালী, এবি, দি সিটি, প্রাইম, সাউথইস্ট, ঢাকা, স্ট্যান্ডার্ড, প্রিমিয়ার, ব্যাংক এশিয়া, ট্রাস্ট ও যমুনা ব্যাংক। আর সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বরে মার্কেন্টাইল ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডোর অনুমতি পেয়েছে। এ ছাড়া বিদেশি মালিকানার স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, আল-ফালাহ ও এইচএসবিসি ব্যাংকে ইসলামী ব্যাংকিং রয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, দেশের পুরো ব্যাংক খাতের আমানত ও বিনিয়োগ উভয় দিক দিয়েই এক-চতুর্থাংশ শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকগুলোর দখলে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতে মোট আমানতের স্থিতি ছিল ১১ লাখ ৩৬ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকগুলোর সংগৃহীত আমানতের পরিমাণ ছিল দুই লাখ ৮০ হাজার ২২৮ কোটি টাকা, যা মোট আমানতের প্রায় ২৪ শতাংশ।

অন্যদিকে গত সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতের বিনিয়োগকৃত অর্থ বা ঋণের স্থিতি ছিল ১০ লাখ ১৭ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ ছিল দুই লাখ ৫০ হাজার ৩২৩ কোটি টাকা, যা গোটা ব্যাংক খাতের বিনিয়োগের ২৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে