ভারত প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা: বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে স্থবিরতা

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর
ফাইল ছবি

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস আতঙ্কে বাংলাদেশি পাসপোর্ট এবং বৈধ ভিসা নিয়ে ভারত প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। শনিবার থেকে আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা থাকবে। একই সঙ্গে অন্য কোনো দেশের পাসপোর্ট ও ভিসা নিয়েও এ স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে প্রবেশ করা যাবে না। তবে ভারত থেকে পাসপোর্ট এবং বৈধ ভিসা নিয়ে যে কেউ বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারবে। শুক্রবার বিকেলে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন সূত্র জানায়, করোনা আতঙ্কের কারণে ১৩ মার্চ বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন দিয়ে বাংলাদেশসহ অন্য কোনো দেশের নাগরিক ভারতে প্রবেশ করতে পারবে না। তবে ভারতীয় পাসপোর্টধারীদের মধ্যে যারা বাংলাদেশি ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে অবস্থন করছেন, তারা ভারতে প্রবেশ করতে পারবেন। তবে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী ভারতীয় ভিসা নিয়ে যারা ভারতে অবস্থান করছেন তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারবেন।

universel cardiac hospital

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী জানান, আমাদের ইমিগ্রেশন বন্ধ নিয়ে কোনো নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত এ স্থলবন্দর দিয়ে বৈধ ভিসা নিয়ে যে কেউ বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারবেন। তবে ভারতের নিষেধাজ্ঞার কারণে আমাদের কোনো পাসপোর্টধারী ভারতীয় ভিসা নিয়ে ভারতে যেতে পারবেন না।

শুক্রবার সরেজমিন বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর গিয়ে দেখা গেছে, উত্তরের সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে নভেল করোনা ভাইরাস আতঙ্কে কর্মচাঞ্চল্য কমে গেছে। স্থবির হয়ে রয়েছে চতুর্দেশীয় এ স্থলবন্দর। তবে ইমিগ্রেশন দিয়ে যাতায়াত বন্ধের ঘোষণায় বৃহষ্পতি ও শুক্রবার দুই দিনে মানুষ পারাপার বেড়ে যায়। কয়েক দিন ধরে কমে গেছে পণ্য আমদানি রফতানি কাজে নিয়োজিত পরিবহন যাতায়াত। বেকার হয়েছে বন্দরের কুলি শ্রমিকসহ বন্দর সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে বিশেষ শতর্কতা গ্রহণ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। সেখানে ১০ সদস্যের দুটি মেডিকেল টিমের মাধ্যমে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে যাতায়াতকারিসহ পণ্য আনা নেয়ার কাজে নিয়োজিত ট্রাক চালক ও সহকারী চালকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছিল।

গত ২৮ জানুয়ারি থেকে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে হ্যান্ড থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে আগতদের জ্বর পরীক্ষা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত এ ইমিগ্রেশন দিয়ে আসা সাড়ে ১১ হাজারের মতো যাত্রীর তালিকা করা করা হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শুরুর ৪৬ দিনে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে আসা কারো শরীরে ভাইরাস শনাক্ত হয়নি। দুই একজনের জ্বর পাওয়া গেলেও পরবর্তীতে তা সাধারণ জ্বর বলে মনে হলে তাদের বাসায় থাকার পরামর্শ দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

এদিকে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরসহ জেলায় করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে জেলা প্রশাসনসহ স্বাস্থ্য বিভাগ। আধুনিক সদর হাসপাতালের তৃতীয় তলার ছাদে ১০ শয্যা বিশিষ্ট আইসোলেশন ইউনিট প্রস্তুত করা হয়েছে। সেখানে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা দিতে প্রস্তুত রয়েছেন চিকিৎসক। পাশাপাশি জেলা সদরের শিংপাড়া এলাকায় মহাসড়কের পাশে একটি পরিত্যক্ত ভবনে কোয়ারেন্টাইনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। সেখানে ৫০ জনের বেশি মানুষকে কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একই সঙ্গে অন্য চার উপজেলাতেও আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানায় স্বাস্থ্য বিভাগ।

শুক্রবার দুপুরে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের কুলি শ্রমিক আসকত আলী বলেন, করোনা আতঙ্কে কয়েক দিন ধরে পণ্য আনা নেয়া কমে গেছে। আমরা সাবধান থেকেই কাজ করছিলাম। এখন তেমন কাজও নেই। কিন্তু আতঙ্ক রয়েছে। যদি স্থলবন্দরটির পণ্য আনা নেয়া বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের বেশি সমস্যা হবে।

স্থানীয় বাস চালক মো. রবি বলেন, আমরা বাংলাবান্ধা থেকে পঞ্চগড় জেলা শহরে যাত্রী পরিবহন করি। কয়েক দিন ধরে সব রকম যাত্রী কমে গেছে। এ রুটে গাড়ি চলাচলে কদিন ধরে আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। একই কথা জানালেন, স্থলবন্দর এলাকার এক হোটেল ব্যবসায়ী।

পঞ্চগড় জেলার সিভিল সার্জন ডা. ফজলুর রহমান বলেন, বাংলাবান্ধায় ১০ সদস্যের মেডিকেল টিম কাজ করছে। ৪৬ দিনে সাড়ে ১১ হাজারের বেশি মানুষের তালিকা করা হয়েছে। কারও শরীরে করোনার কোনো উপসর্গ পাওয়া যায়নি। সন্দেহজনক মনে হলে তাদের কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আধুনিক সদর হাসপাতালের তিন তলার ছাদে ১০ শয্যা বিশিষ্ট আইসোলেশন ইউনিট প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে