পুঁজিবাজারে স্বস্তি ফেরাতে আইসিবির উদ্যোগ

মত ও পথ প্রতিবেদক

শেয়ারবাজার
ফাইল ছবি

অস্থির পুঁজিবাজারে স্বস্তি ফেরাতে আরও বেশি সহায়তার হাত বাড়িয়েছে ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ- আইসিবি। নিজেদের গৃহীত মেয়াদি আমানতের (টার্ম ডিপোজিট) সুদহার সাড়ে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারি মালিকানাধীন বিনিয়োগ কোম্পানিটি। এ সংক্রান্ত প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলামের কাছে সুদহার নামিয়ে আনার প্রস্তাব-সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল হোসেন। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র মতে, বর্তমানে আইসিবিতে ১০ হাজার ৬৭১ কোটি ৩৫ লাখ টাকার মেয়াদি আমানত রয়েছে। সাধারণত সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক আইসিবিতে মেয়াদি আমানত রাখে। এসব মেয়াদি আমানতের বিপরীতে আইসিবিকে বর্তমানে ৮ থেকে ১২ শতাংশ হারে সুদ দিতে হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আগামী ১ এপ্রিল থেকে দেশের ব্যাংক খাতে আমানতের সুদহার, সরকারি ব্যাংকে সাড়ে ৫ শতাংশ এবং বেসরকারি ব্যাংকে ৬ শতাংশ বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। তবে আইসিবির আমানতে এটি কার্যকরের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তাই সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আইসিবিও আমানতে সুদহার সাড়ে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায়।

আইসিবি থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিবের নিকট পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে ১৯৯৮ সালের ১২ জানুয়ারি সম্পাদিত “দি ক্যাপিটাল মার্কেট ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম লোন এগ্রিমেন্ট (সিএমডিপিএল)” চুক্তির ফলে স্টক ব্রোকারেজ, মিউচ্যুয়াল ফান্ড অপারেশনস এবং মার্চেন্ট ব্যাংকিং সংক্রান্ত আইসিবির নতুন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ফলে, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সঞ্চয় সংগ্রহ করে মার্কেট সাপোর্ট দেয়ার ক্ষমতা কমে যায়। ব্যবসা পরিচালনার জন্য অন্যান্য প্রতিষ্ঠান হতে গৃহীত মেয়াদি আমানতের (টার্ম ডিপোজিট) ওপর আইসিবিকে নির্ভরশীল হতে হয়।

চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশের পুঁজিবাজারে ১৯৯৬ ও ২০১০ সালে বড় ধরনের বিপর্যয় সংঘটিত হয়েছিল। ফলশ্রুতিতে, মার্কেট সাপোর্ট দেয়ার জন্য আইসিবিকে সময় সময় উচ্চ সুদহারে মেয়াদি আমানত (টার্ম ডিপোজিট) সংগ্রহ করতে হয়। বিশেষত ২০১০ সালের উত্থান-পতন পরবর্তী সময়ে ধারাবাহিকভাবে মার্কেট সাপোর্ট এবং বাজার নিম্নমুখী ধারায় শেয়ার বিক্রি করতে না পারায় উচ্চ সুদহারের মেয়াদি আমানতের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা ও আইসিবির ন্যায় বৃহৎ বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান না থাকায় বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী আইসিবি সিকিউরিটিজ বিক্রি করতে পারেনি।

গত ২০০১-০২ অর্থবছরে আইসিবির মেয়াদি আমানত ছিল মাত্র ৪২৪ কোটি টাকা, ২০১৯-২০ অর্থবছরের জানুয়ারি শেষে তা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৬৭১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এছাড়া ২০১৭ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক আইসিবি-কে সিঙ্গেল বোরোয়ার এক্সপোজার লিমিট বা একক গ্রাহক ঋণসীমায় অন্তর্ভুক্ত করে। ফলে আইসিবি ব্যাংক হতে নতুন মেয়াদি আমানত (টার্ম ডিপোজিট) সংগ্রহ করতে পারেনি, অধিকন্তু সিঙ্গেল বোরোয়ার এক্সপোজার লিমিটের অতিরিক্ত মেয়াদি আমানতের কিছু অংশ ফেরত দেয়। তাই আইসিবির মার্কেট সাপোর্ট দেয়ার সক্ষমতা সঙ্কুচিত হয়ে যায় এবং ক্ষেত্রবিশেষ উচ্চ সুদহারে মেয়াদি আমানত নবায়ন করতে হয়।

আইসিবি বলছে, ২০১৮ সালের ১৮ জুন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বরাবর আইসিবিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিঙ্গেল বোরোয়ার এক্সপোজার লিমিট হতে অব্যাহতির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য চিঠি দেন। কিন্তু সেটি আর কার্যকর হয়নি।

এদিকে ২০১৮ সালের নভেম্বর হতে মার্কেট সাপোর্টের জন্য ৯ শতাংশ সুদহারে আইসিবি কর্তৃক ২ হাজার কোটি টাকার বন্ড বাজারজাত করা হয়। বন্ডটি গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে এক হাজার ৫৯০ কোটি টাকা সাবস্ক্রাইব হয়। যার সুদও ইতোমধ্যে আইসিবিকে প্রদান করতে হচ্ছে। ফলে সার্বিকভাবে আইসিবির সুদ-ব্যয় ক্রমাগত বাড়ছে।

ওই সময় আইসিবি কর্তৃক মার্কেট সাপোর্টের ফলে গত বছরের ২৪ জানুয়ারি ডিএসইএক্স সূচক ৫৯৯০ দশমিক ৬০-এ উন্নীত হয়, যা ২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর ছিল ৫২৪৩ দশমিক ৭০। বর্তমানে এর সঙ্গে সংযুক্ত তালিকায় বিদ্যমান উচ্চ সুদহারের মেয়াদি আমানতের কারণে সরকারের সঙ্গে সম্পাদিত বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনসহ আইসিবির লাভজনকতা ঝুঁকির সম্মুখীন হয়।

রাষ্ট্রমালিকানাধীন একমাত্র আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আইসিবি এখন পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে শেয়ার মালিকগণকে লভ্যাংশ দিয়ে আসছে। পুঁজিবাজারের স্বার্থে আইসিবির বর্তমান বিদ্যমান মেয়াদি আমানতের সুদের হার কমানো গেলে ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে সরকারের সঙ্গে সম্পাদিত বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনসহ আইসিবির লাভজনকতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

এ অবস্থায় মার্কেট সাপোর্টের জন্য আইসিবি কর্তৃক উচ্চ সুদহারে গৃহীত মেয়াদি আমানতসমূহের সুদের হার ৫ দশমিক ৫০ শতাংশে কমানোর বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রতি অনুরোধ জানানো হয় ওই চিঠিতে।

এ বিষয়ে আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল হোসেন বলেন, ব্যাংক খাতে আমানতের সুদহার কমানোর সিদ্ধান্ত রয়েছে সরকারের। আইসিবিকেও সেই সিদ্ধান্তের আওতায় আনা গেলে আমরা আরও বেশি করে পুঁজিবাজার-কে সাপোর্ট দিতে পারব। এছাড়া আইসিবি যে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান সেটিও অব্যাহত থাকবে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে