করোনা আতঙ্ক : নিত্যপণ্য কেনায় বাড়াবাড়িতে বেড়েছে চালের দাম

মত ও পথ প্রতিবেদক

নিত্যপণ্য
ফাইল ছবি

বিশ্বজুড়ে মহামারি আকার ধারণ করা কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসে বাংলাদেশে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ১০ জনের আক্রান্ত হওয়ার তথ্য জানিয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। তাদের মধ্যে আছেন বিদেশফেরত সাতজন এবং তাদের মাধ্যমে আক্রান্ত তিনজন। এর মধ্যে দুজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু প্রবাসী বিদেশ থেকে এসেছেন। এ নিয়ে দেশে মানুষের মধ্যে আছে এক ধরনের অস্বস্তি। এ ছাড়া দেশে দেশে প্রার্দ্ভুাব বাড়ছে করোনা ভাইরাসের। নানা গুজব ও আশঙ্কা ঘরে ঘরে।

করোনা ঠেকাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ লক ডাউনে গেছে। সবকিছু বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি লোকজনকে ঘরের বাইরে না আসতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে পরিস্থিতি অনুকূলে রাখতে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে। আগামীতে সবকিছু বন্ধ করে দিতে পারে আশঙ্কা করছেন অনেকে। সঙ্গে আরও নানা গুজব।

তাদের ধারণা, করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে বড় আকার ধারন করলে খাদ্যসামগ্রীর সংকট দেখা দিতে পারে। তাই আগেভাগে অনেকে পুরো মাস, কেউবা একত্রে দু-তিন মাসের খাদ্যসামগ্রী কিনে রাখছেন।

বিক্রেতারা বলছেন, হঠাৎ পণ্যসামগ্রীর চাহিদা বেড়ে গেছে তিন-চার গুণ। তাদের দম ফেলার ফুরসত নেই। তবে বাজারে পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও একসঙ্গে বিপুল চাহিদার কারণে খাদ্যসামগ্রীর দাম কিছুটা বেড়েছে।

মঙ্গলবার রাত এবং বুধবার সকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ক্রেতাদের বাড়তি বাজার করার প্রবণতা দেখা গেছে। রাজধানীর শেওড়াপাড়া, যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, রায়ের বাজার, খিলক্ষেত বাজারসহ বিভিন্ন এলাকার ঘুরে দেখা যায়, দোকানে দোকানে নারী-পুরুষের স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ভিড়। সবাই প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পণ্য কিনছেন। দেখে মনে হতে পারে তারা খুচরা বিক্রির জন্য পাইকারি দরে পণ্য নিয়ে যাচ্ছেন। এই বাড়তি বাজার করার চাপ মাছ, মুরগি, গরুর মাংসের দোকানেও।

শেওড়াপাড়ায় ভাড়া থাকেন আবু রোকাইয়া। বেসরকারি চাকুরে। তিনি এ মাসে অন্য সময়ের মতোই সাপ্তাহিক বাজার-সওদা করেছেন। কিন্তু তার পরিচিত অনেকে বলেছেন, তারা এক-দুই মাসের খাদ্যসামগ্রী কিনে মজুত করেছেন। এমনকি তার বাসার কাজের বুয়াও নাকি এক মাস চলার মতো চাউল-ডাল, আলু স্টক করেছেন। বাড়তি কিছু বাজার করে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তার পরিচিতরা।

যা কিছু শুনেছেন, বাজারে এসে তার সত্যতা পেলেন আবু রোকাইয়া। আধা কেজি, এক কেজি পণ্য বেচায় মন নেই বিক্রেতাদের। তারা দু-চার, পাঁচ কেজি করে পাল্লা মাপতে ব্যস্ত। সাধারণ মানুষের পণ্য কেনার এই হিড়িককে বাড়াবাড়ি বলে মন্তব্য করেন তিনি। কারণ এমন বাড়তি বাজার করার প্রবণতা বাজারদর বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ তার।

যাত্রাবাড়ীতে বাজার করতে আসা পারভেজ হোসেন মত ও পথের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘বাজারের ওপর এভাবে হুমড়ি খেয়ে পড়ার মতো কিছু হয়ে যায়নি দেশে। কিছু লোক খুব বাড়াবাড়ি করছে। গুজবে কান দেয়া ছাড়া তাদের কোনো কাজ নেই। এসব লোকের কারণে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এতে গরিব মানুষগুলো বিপদে পড়বে।’

খিলক্ষেত এলাকার বাসিন্দা লিয়াকত ফেরদৌস জানান, মঙ্গলবার রাতে তার মা সাত বস্তা চাল কিনেছেন। যদিও তার পরিবারের সদস্যসংখ্যা তিনজন। তিন থেকে চারজনের পরিবারে দুই-চার বস্তা পর্যন্ত চাল কেনার নজির আরও পাওয়া গেছে। ক্রেতারা চালের পাশাপাশি আলু, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, তেল কিনছেন।

এসব বাজারে মিনিকেট চাল বিক্রি হতে দেখা গেছে কেজিপ্রতি ৫১ থেকে ৫৮ টাকায়। মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৮ থেকে ৪২ টাকায়। গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ৩ থেকে ৫ টাকা বেশি। বিক্রেতারা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়েছে গত তিন দিনে।

আজ পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৬০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা।  রসুন ৮০ থেকে ১২০ টাকা, আদা ১২০ টাকা, দেশি মসুর ডাল ১০৫ টাকা এবং মোটাটা ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সাধারণ বাজারের পাশাপাশি একই চিত্র দেখা গেছে সুপার শপে। মঙ্গলবার রাতে স্বপ্নের শেওড়াপাড়া ( শামীম স্মরণী) শাখায় ক্রেতাদের আনাগোনা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি।

একই চিত্র দেখা গেছে বুধবার সকালব্যাপী। পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বপ্নের একজন বিক্রয় প্রতিনিধি মত ও পথকে বলেন, ‘নরমালি প্রতিদিন সকালে একবার করে চাল আনা হয়। গতকাল (মঙ্গলবার) তিন বার চাল আনতে হয়েছে। আরও চাল থাকলে আরও বিক্রি করা যেত। চাহিদা বাড়লেও আমাদের এখানে জিনিসপত্রের কোনো দাম বাড়ে নাই। তবে ক্রেতাদের চাহিদা হয়তো পূরণ করতে পারছি না।’

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে