প্রাণঘাতী নভেল করোনা ভাইরাসকে (কোভিড-১৯) পুঁজি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম এক দিনেই কেজিতে বাড়িয়েছেন ১৫ টাকা। কেন বাড়ল তার কোনো প্রমাণ দেখাতে না পারায় বেশ কয়েকটি পাইকারি ব্যবসায়ীকে জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।
আজ শুক্রবার রাজধানীর কাওরানবাজারে অভিযান করে অধিদফতর। এ সময় ভোক্তা আইন লঙ্ঘনের দায়ে পেঁয়াজ বিক্রেতাসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়।
অভিযান সার্বিক তত্ত্বাবধান করছেন অধিদফতরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার। তিনি মত ও পথকে বলেন, করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে মানুষ বেশি কেনাকাটা করছে। এ সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বেশি মুনাফার লোভে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এসব কারসাজিকারিদের ধরতে অভিযান পরিচালনা করছি।
তিনি আরও বলেন, হজরত আলী নামে এক পাইকারি ব্যবসায়ী পেঁয়াজের দাম এক দিনেই কেজিতে ১৫ টাকা বাড়িয়েছে। গতকালও তিনি ৪৪ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন। আজ বিক্রি করছিলেন ৫৯ টাকায়। তার কাছে বাড়তি দামের কেনার রশিদ দেখতে চাইলে উনি তা দেখাতে পারেননি। এ অপরাধে তার প্রতিষ্ঠানকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একই সঙ্গে সতর্ক করা হয়েছে। এরপর একই অপরাধ করলে প্রতিষ্ঠান সিলগালা করে দেয়া হবে। এছাড়া আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান করেছি। দাম বেশি নিচ্ছেন। আবার অনেক প্রতিষ্ঠানেই মূল্য তালিকা নেই- এসব অপরাধে একাধিক প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে।
তিনি জানান, বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারী নভেল করোনা ভাইরাস আতঙ্কে নিত্যপণ্যের বেচা-বিক্রি বেড়েছে। এ সুযোগে অনেকে অসাধু ব্যবসায়ী বাড়িয়ে দিচ্ছেন নিত্যপণ্যের দাম, করছেন মজুদ। তাই নিত্যপণ্যের কৃত্রিম সংকটকারীদের ধরতে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। আজকে পাঁচটি টিমে বিভক্ত হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজারে অভিযান করা হচ্ছে। অভিযানে ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের সতর্ক করা হচ্ছে। পাশাপাশি কিছু কিছু ব্যবসায়ী অনৈতিকভাবে তারা পণ্যের মূল্য বাড়াচ্ছে তাদের জরিমানার পাশাপাশি সতর্ক করছি। ভবিষ্যতে তারা এ ধরনের অপরাধ করলে আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি দেব।
শুক্রবার (২০ মার্চ) রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় অনেকে পেঁয়াজ, আলু ও রসুন কিনে মজুদ করছেন। ফলে এসব পণ্যের চাহিদা বেড়ে গেছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। দুই দিনের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। পেঁয়াজের পাশাপাশি দাম বেড়েছে আদা, রসুন ও আলুর।
- করোনা আতঙ্ক : লকডাউন হলেও স্বাভাবিক থাকবে নিত্যপণ্যের সরবরাহ
- গণস্বাস্থ্যের করোনা শনাক্তকরণ কিটের দাম ৩৫০ টাকা!
আজকের দর অনুযায়ী, দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৮০ টাকা কেজি দরে; যা গত বুধবারও ৪০-৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। দেশি রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকায়, যা দুইদিন আগে ছিল ৭০-৮০ টাকা। আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৮০-১৯০ টাকায়, যা বুধবার ছিল ১৪০-১৫০ টাকা। ১০০-১২০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া আদার দাম বেড়ে হয়েছে ১৭০-১৮০ টাকা। আর ১৮-২০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া গোল আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫-২৮ টাকায়।
ভৈরবে চাল ও পেঁয়াজ ব্যবসায়ীকে জরিমানা
কিশোরগঞ্জের ভৈরব বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির অভিযোগে তিন ব্যবসায়ীকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। বৃহস্পতিবার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিমাদ্রী খীসা এ অভিযান পরিচালনা করেন। যারা অযথা পণ্যের দাম বৃদ্ধি করবে তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
চাল আড়তের জরিমানা
৫৪ টাকার চাল ৫৯ টাকায় বিক্রি করায় দু’টি আড়তকে জরিমানা করেছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মোবাইল টিম। বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) রাজধানীর উত্তর যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে মা-মণি ও রাইস নামের দুটি চালের আড়তকে এ জরিমানা করা হয়। অভিযান পরিচালনা করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মণ্ডল।
তিনি জানান, চাল, ডাল, ভোজ্যতেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম তদারকি করতে উত্তর যাত্রাবাড়ী এলাকায় বাজারে অভিযান চালানো হয়। এ সময় চালের দাম নিয়ে কারসাজি করার অপরাধে মা-মণি রাইস ও আশা রাইস নামের দুটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়।