নভেল করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত ইতালিতে মৃতের সংখ্যা ছয় হাজার ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ইউরোপের দেশটিতে নতুন করে আরও ৬০২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই নিয়ে ইতালিতে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ছয় হাজার ৭৮ জনে। এখন পর্যন্ত যেকোনো দেশে করোনায় এটাই সর্বোচ্চ মৃত্যু।
এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ইতালিতে আক্রান্ত হয়েছেন চার হাজার ৭৯০ জন, যা আগের ২৪ ঘণ্টার চেয়ে কম। এ নিয়ে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে দেশটিতে মোট আক্রান্ত হলেন ৬৩ হাজার ৯২৮ জন।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের উৎস দেশে চীনে ক্রমান্বয়ে পরিস্থিতির উন্নতি হলেও ইতালি প্রথম মৃত্যুর পর এক মাস না গড়াতেই মৃতের সংখ্যায় চীনকে ছাড়িয়ে যায়। ইতোমধ্যে ইতালিতে মৃতের সংখ্যা চীনের প্রায় দ্বিগুণ।
জনগণকে সুরক্ষা দিতে ইতালির সরকার করোনা মোকাবিলায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৭হাজার ৪৩২ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন বলে জানিয়েছেন নাগরিক সুরক্ষা সংস্থার প্রধান অ্যাঞ্জেলো বোরেল্লি।
ইতালির ২০ অঞ্চলের মধ্যে লোম্বারদিয়ায় করোনার সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত (মিলান, বেরগামো, ব্রেসিয়া, ক্রেমনাসহ) ১১টি প্রদেশ। গত ২৪ ঘণ্টায় এই অঞ্চলে মারা গেছে ৩৬১ জন। মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ৩ হাজার ৪৫৬ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া এই অঞ্চলে মোট আক্রান্ত ২৭ হাজার ২০৬ জন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী জোসেপ্পে কন্তের আহবানে সাড়া দিয়ে দেশের এই দুর্দিনে ৭ হাজার ২২০ জন অবসরপ্রাপ্ত ডাক্তার, নার্স ও অ্যাম্বুলেন্স কর্মী স্বাস্থ্যসেবা দিতে করোনায় আক্রান্তদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।
লোম্বারদিয়ার প্রসিডেন্ট আত্তিলিয়ো ফোনতানা গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, পূর্বঘোষিত পদক্ষেপে ‘জরুরি’ সরবরাহ ব্যবস্থা ছাড়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল, সড়ক ও রেলপথ বাদে সব ধরনের নির্মাণ কাজও বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া বাড়ির বাইরে সব ধরনের খেলাধুলা ও ব্যায়াম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ আইন অমান্যকারিকে পাঁচ হাজার ইউরো জরিমানা করা হবে।
এদিকে সুপারমার্কেট, ফার্মেসি, পোস্ট অফিস ও ব্যাংক খোলা থাকবে এবং গণপরিবহনও সচল থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আত্তিলিয়ো ফোনতানা আরও বলেন, ফেয়ারা মিলানোতে অস্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে,বেরগামোতে নতুন একটা হাসপাতাল এ সপ্তাহের মধ্যেই চালু হবে। ক্রেমনাতে মাঠের মধ্যে তাঁবু টানিয়ে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হচ্ছে। চীন থেকে আগত মেডিকেল টিম বেরগামোতে কাজ করছে। কিউবা থেকে আগত ৫২ সদস্যের মেডিকেল টিম ক্রেমনাতে কাজ করছে। রাশিয়া থেকে আগত ১২০ সদস্যের মেডিকেল টিম লোম্বারদিয়া অঞ্চলে সন্ধ্যার ভেতরে করোনায় আক্রান্তদের সেবা দিতে কাজ শুরু করবে।
লোম্বারদিয়ার প্রসিডেন্ট বলেন, করোনাভাইরাসকে জয় করতে হলে আমাদের ঘরে থাকতে হবে। ঘরে থাকা ছাড়া দ্রুত করোনাকে জয় করা কোনভাবেই সম্ভব নয়।