২০১৩ সালে নির্মাণকাজ শেষ হলেও ব্যবসায়ীদের বাধার মুখে চালু হয়নি রাজধানীর মহাখালীতে নির্মিত মহাখালী ডিএনসিসি মার্কেট। তাই এবার করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসায় এ মার্কেটটিকেই রূপান্তরিত করে তিন হাজার শয্যার হাসপাতাল করতে চায় সরকার।
সব ঠিক থাকলে শিগগিরই এই হাসপাতাল তৈরি হবে। বৈশ্বিক এই মহামারিকে বাংলাদেশে মোকাবিলায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বড় বড় হাসপাতালগুলোর সঙ্গেও আলোচনা চলছে বলে নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
২০১৩ সালে নির্মাণকাজ শেষ হলেও চালু হয়নি রাজধানীর মহাখালীতে নির্মিত মহাখালী ডিএনসিসি মার্কেট। কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছে স্থানান্তরের উদ্দেশ্যে এ মার্কেটটি করা হয়। তবে কয়েক দফা বিজ্ঞপ্তি দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না দোকান বরাদ্দের আবেদন। যে কয়েকটি পাওয়া গেছে, তা-ও মোট দোকানের তুলনায় অপ্রতুল।
ফলে ছয় বছর ধরে পড়ে আছে ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মার্কেটটি। দীর্ঘদিন এভাবে পড়ে থাকায় মার্কেটের বিভিন্ন জায়গায় পলেস্তারা ও টাইলস উঠে গেছে, কাচ ভেঙে গেছে। কবে নাগাদ মার্কেটটি চালু হবে, বলতে পারছেন না ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
২০১৭ সালে এই ডিএনসিসি মার্কেটে ৫০ জন নারী উদ্যোক্তা দিয়ে উইমেন হলিডে মার্কেট চালু করেন প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। তবে ক্রেতাশূন্য থাকায় বর্তমানে সেটিও নেই।
ডিএনসিসির মালিকানাধীন ২১ বিঘা ১১ কাঠা জমির ওপর মার্কেটটি নির্মাণ করা হয়। এতে রয়েছে গাড়ি পার্কিং ও ময়লার ডাম্পিংয়ের স্থান, কসাইখানা, লিফট ও জেনারেটর। দোকান রয়েছে ১ হাজার ১৬৩টি। এর মধ্যে ৩৬০টি কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীদের জন্য বরাদ্দ। বাকি ৮০৩টি দোকান লটারির মাধ্যমে বরাদ্দ দেয়ার কথা।
মার্কেটটির বেজমেন্টে পাইকারি কাঁচামালের বাজার। নিচতলায় মাছ-মাংস-মুরগিসহ কাঁচাবাজার। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় তৈরি পোশাক, চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় ইলেকট্রনিক সামগ্রী এবং ষষ্ঠ তলা ফুডকোর্টের জন্য নির্ধারিত।
বর্তমানে মার্কেটটি নিয়ে বিপাকে পড়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। বারবার পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে, রাস্তায় বিলবোর্ড টাঙিয়েও ব্যবসায়ীদের ওই মার্কেটের বিষয়ে আগ্রহী করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় মার্কেটটি নিয়ে কী করবেন, কিছুই বুঝতে পারছেন না ডিএনসিসির কর্মকর্তারা।
তাই আপাতত করোনা সংক্রমণের চিকিৎসা কেন্দ্র হতে যাচ্ছে এই স্থাপনা। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, আগামী চার সপ্তারের মধ্যে তিন হাজার শয্যার হাসপাতালে রূপান্তর করা হবে এই মার্কেট।
শুধু তাই নয়, রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা বাড়িয়ে ২০০ ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা যোগ করে করোনা রোগীদের চিকিৎসা কেন্দ্র করার পরিকল্পনার কথা জানানো হয়। একই সঙ্গে ঢাকার বাইরে বড় বড় চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোও পরিবর্তিত পরিস্থতিতে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা কেন্দ্র হিসেবে রূপান্তরের পরিকল্পনা কথা জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল) আমিনুল হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা কুর্মিটোলা হাসপাতালকে খুব দ্রুত কোভিড (করোনাভাইরাস) হাসপাতালে রূপান্তরিত করব। আমরা এটিকে এক হাজার বেড বানিয়ে ফেলব। এছাড়া দুইশ ভেন্টিলেটর বসানো হবে। মহাখালীতে ডিএনসিসির যে মার্কেট আছে, আমরা তা নিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করছি। সেখানে প্রায় তিন হাজার রোগী রাখা যাবে। এছাড়া বড় বড় জায়গাগুলোকে আমরা হাসপাতাল বানানোর পরিকল্পনা হিসেবে হাতে নিয়েছি।
বর্তমানে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা চলছে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে। নির্ধারণ করা হয়েছে আরও সাতটি হাসপাতাল, যেখানে শুধু করোনা রোগীদেরই চিকিৎসা দেয়া হবে। আর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল এবং সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে কিছু অংশ করোনা রোগীদের চিকিৎসায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে।