জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদের (বরখাস্ত) ফাঁসির রায় আজ রাতেই কার্যকর হতে যাচ্ছে। কারা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
শনিবার সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘ফাঁসি আজ হতে পারে।’ নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আজ হতে পারে। এর বেশি বলতে পারছি না।’
এদিকে দ্বিতীয় দিনের মতো আজ মাজেদের পরিবারের সাক্ষাতের কথা থাকলেও তারা জেলগেটে আসেনি। তাছাড়া শনিবার সন্ধ্যায় কেরাণীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুত এবং মঞ্চের লাইট জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাইরেও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
কারা সূত্র জানায়, দিনের বেলায় ফাঁসির ট্রায়ালও করেছেন তারা। ডেপুটি জেলারা মঞ্চের পাশেই ডিউটি করছেন। রাতে দশটার পরেই ফাঁসি কার্যকর হতে পারে।
গতকালই মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করতে শাহজাহানের নেতৃত্বে জল্লাদের একটি দল প্রস্তুত রেখেছে ঢাকা জেল কতৃপক্ষ। সেই তালিকায় জল্লাদ মোহাম্মদ আবুল, তরিকুল ও সোহেলসহ ১০ জনের নাম রয়েছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধুর খুনি আব্দুল মাজেদের সঙ্গে পরিবারের পাঁচ সদস্য কারাগারে দেখা করেন। তাদের মধ্যে ছিলেন- স্ত্রী সালেহা বেগম, স্ত্রীর বোন ও বোন জামাই, ভাতিজা ও একজন চাচাশশুর।
দীর্ঘ দেড় যুগের বেশি সময় ভারতে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর এই আত্মস্বীকৃত খুনি মঙ্গলবার মিরপুর সাড়ে ১১ থেকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) একটি দল। গত মাসে দেশে ফিরে মাজেদ স্ত্রীর ক্যান্টনমেন্ট আবাসিক এলাকার এক নম্বর রোডের ১০/এ বাড়িতে বসবাস করছিলেন। পরদিন বুধবার দুপুরে আদালতের নির্দেশে কারা কর্তৃপক্ষ আসামিকে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ হেলাল চৌধুরীর আদালতে হাজির করেন। এরপর রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটররা আসামি গ্রেপ্তার দেখানোসহ আসামির বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করার আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত আসামি আব্দুল মাজেদকে গ্রেপ্তারসহ মৃত্যু পরোয়ানার আবেদন মঞ্জুর করেন। একই দিন সন্ধ্যায় কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করেন আব্দুল মাজেদ। আবেদন খারিজের পর নিয়ম অনুযায়ী তার ফাঁসির কার্যকরে আর কোনো বাধা নেই।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। ৩৪ বছর পর ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর বর্বরোচিত এই হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হয়। খুব ধীরে দীর্ঘ বারো বছরে নিম্ন আদালত থেকে শুরু করে আইনের প্রতিটি ধাপ স্বচ্ছতার সঙ্গে অতিক্রম করে সর্বোচ্চ আদালতের মাধ্যমে স্বঘোষিত খুনিদের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১২ আসামির মধ্যে কারাবন্দি পাঁচ আসামির ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি দিবাগত রাতে ফাঁসি কার্যকর হয়। তারা হলেন- সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মুহিউদ্দিন আহমেদ, বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য ছয় আসামি পলাতক ছিলেন। তাদের মধ্যে আবদুল মাজেদকে সম্প্রতি গ্রেপ্তার করা হয়।
পলাতক বাকি পাঁচজনের মধ্যে লে. কর্নেল (অব.) খন্দকার আব্দুর রশিদ (বরখাস্ত) লিবিয়া ও বেলজিয়ামে অবস্থান করছেন। বেশিরভাগ সময় লিবিয়াতে থেকেই ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। লে. কর্নেল (অব.) শরীফুল হক ডালিম (বরখাস্ত) পাকিস্তানে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। লে. কর্নেল (অব.) এ এম রাশেদ চৌধুরী (বরখাস্ত) যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে, লে. কর্নেল (অব.) এন এইচ এমবি নূর চৌধুরী (বরখাস্ত) কানাডায় রয়েছেন। আর রিসালদার মোসলেম উদ্দিন ভারতের কারাগারে আটক বলে অনেকে ধারণা করছেন।