মুক্তিযুদ্ধ ও ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

সম্পাদকীয়

মোকতাদির চৌধুরী এমপি
র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি। ফাইল ছবি

১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে যা অতি গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতা ঘোষিত হলে দেশব্যাপী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের সূচনা ঘটে।নিরস্ত্র বাঙালি জাতি যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে বিক্ষিপ্তভাবে হানাদার বাহিনীকে রুখে দাঁড়ায়। কিন্তু তখনো তা পরিকল্পিত ও সাংগঠনিক কোন রূপ লাভ করেনি। সেই প্রেক্ষাপটে ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠন ছিল ইতিহাসের অমোঘ এক বাস্তবতা। যার মাধ্যমে মুজিবনগর সরকারের যাত্রা শুরু হয় এবং বাঙালির সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ সংঘবদ্ধ নিয়মতান্ত্রিক নেতৃত্ব লাভ করে। এভাবেই সেদিন ইতিহাসের মোড় ঘুরে যায়। মাত্র নয় মাসের যুদ্ধে পাকিস্তানের নিয়মতান্ত্রিক বাহিনীকে পরাজিত করে স্বাধীনতা অর্জন করা সম্ভব হয়। সে ক্ষেত্রে ছিল মুজিবনগর সরকারের অপরিসীম ভূমিকা।

২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় ঘাতক টিক্কা খানের নেতৃত্বে গণহত্যাযজ্ঞ শুরু করে পাকহানাদার বাহিনী। সেইদিনই ‘বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার মৃত্যুঞ্জয়ী আদেশ ও আহ্বান’ জানান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার রাতেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী জাতির পিতাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা ও রাষ্ট্র বিচ্ছিন্নকরণের অপরাধে (!) বন্দি করে। কিন্তু তাতে বাঙালি জাতির মনোবল ও ঐক্যে বিন্দুমাত্র চিড় ধরাতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে মুক্তিযুদ্ধকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে এবং বৈশ্বিক সমর্থন অর্জনের লক্ষ্যে তাঁর আদর্শের যোগ্য উত্তরসূরি জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, এ. এইচ. এম. কামরুজ্জামানপ্রমুখ সেই সন্ধিক্ষণে জাতির হাল ধরেন। ১০ এপ্রিল সারা বিশ্বকে তারা জানিয়ে দেন- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার করা হয়েছে।

universel cardiac hospital

১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ন’টায় ‘আকাশবাণী’ রেডিওতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের ভাষণ প্রচারিত হয়। সেই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলায় ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ ঐতিহাসিক মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। যার মধ্যদিয়ে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ এক গুরুত্ববহ অধ্যায়ে প্রবেশ করে। দেশে যেমন মুক্তিযোদ্ধারা নতুন করে দিশা লাভ করে তেমনি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ব্যাপক সমর্থন বৃদ্ধি পায়। ফলে ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যার্জনে এক গভীর ব্যঞ্জনাময় দিন।

২৫ মার্চের নারকীয় ঘটনার পর বিশেষ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের ন্যায়সঙ্গত দাবি পূরণের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ঢাকায় স্বাধীনাতার ঘোষণা প্রদান করেন। পাকিস্তানি বর্বর সশস্ত্রবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালি জাতির ওপর গণহত্যা শুরু করার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের পার্লামেন্টের মেজরিটি দলের নেতা হিসেবে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং জনগণকে শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। সেই মোতাবেক দেশে সর্বাত্বক প্রতিরোধ যুদ্ধ চলতে থাকে।

১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠন ছিল মুক্তিযুদ্ধের এক অবিস্মরণীয় টার্নিংপয়েন্ট। যার ফলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এক সর্বাত্মক ও সংগঠিত জনযুদ্ধে রূপ নিতে পেরেছিল। মুজিবনগর সরকার গঠনের মাধ্যমে সশস্ত্র যুদ্ধের পাশাপাশি শুরু হয় অস্থায়ী সরকারের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক তৎপরতা। মুজিবনগর সরকার না হলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ আদৌ সফলতার মুখ দেখতো কি-না, তা বিবেচনার দাবি রাখে। এই দিবসকে খাটো করে দেখার প্রয়াস থেকে বেড়িয়ে আসতে না পারলে অপূর্ণ থেকে যাবে আমাদের ইতিহাসের সঠিক পাঠ। একই সঙ্গে খণ্ডিত হবে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস।

আরও পড়ুন >> করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলুন

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে