সরকারের ব্যর্থতায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত মানুষের সারি দীর্ঘ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেছেন, ‘যথাযথ পদক্ষেপ নিলে এত আক্রান্ত হতো না। ভিয়েতনাম ও ভুটান পদক্ষেপ নেয়ায় সে দেশে আক্রান্ত হয়নি। কিন্তু আমাদের দেশে সরকার পদক্ষেপ নেয়নি।’
রবিবার সকালে আড়াইহাজারে ত্রাণ বিতরণের সময় এসব কথা বলেন তিনি।
রিজভী বলেন, চীনে যখন করোনাভাইরাস শুরু হলো তখন বাংলাদেশ সরকার কোনো পদক্ষেপ নিলেন না। মার্চ মাসে করোনা শুরু হয়েছে সরকার তা জানায় নাই। অন্য কাজে ব্যস্ত ছিল। দেশের প্রতি জনগণের প্রতি কতটুকু দায়িত্ব আছে তা আপনারাই বুঝতে পারছেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আজকে চিকিৎসকেরা মারা যাচ্ছে। হাসপাতালে চিকিৎসা নেই। করোনার বিরুদ্ধে যে প্রস্তুতি নেওয়ার দরকার ছিল তা নেয়নি। গতকাল বলছে সিটিতে গার্মেন্টস খুলে দেবে। সকল শ্রমিক আসলে কি ভয়াবহ অবস্থা হবে তা অনুমান করা যায়। একজনের হলে সকলে আক্রান্ত হবে। ব্যাপক বিস্তার লাভ করতে পারে।
‘চীন-যুক্তরাষ্ট্র স্পেন ইতালিতে হাজার হাজার লোক মারা যাচ্ছে। আর আমাদের দেশে হাসপাতালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেই, প্রয়োজনীয় ওষুধ নেই। চিকিৎসক-নার্সরা ভয় পাচ্ছেন। যারা চিকিৎসা করবে তারা যদি ঝুঁকির মধ্যে থাকে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে তাদের জীবন চলে যায় তাহলে কে চিকিৎসা দেবে। বিশ্বে যে পরিস্থিতি দেখছি আল্লাহ না করুক ওইসব দেশের মত যেন না হয়।’
রিজভী বলেন, ‘উন্নত দেশগুলো লাশের সারি ঠেকাতে পারছে না সে তুলনায় আমাদের কিছুই নাই। সরকার কোনো দায়িত্ব পালন করতে চায় না। বুঝেও না। মন্ত্রীরা ঘরের মধ্য থেকে ভিডিও বার্তা দিচ্ছে আর বিএনপি নেতাকর্মীরা ঝুঁকির মধ্যেও অসহায় মানুষদের পাশে ছুটে যাচ্ছে সহযোগিতা করছে।’
সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির এই নেতা বলেন, প্রতিদিন আমরা ৪শ থেকে ৫শ লোকের আক্রান্ত খবর পাচ্ছি। মারা যাচ্ছে বহু লোক। যথাযথ পদক্ষেপ নিলে এত আক্রান্ত হতো না। ভিয়েতনাম ও ভুটান পদক্ষেপ নেয়ায় সে দেশে আক্রান্ত হয়নি। কিন্তু আমাদের দেশে সরকার পদক্ষেপ নেয়নি বরং সরকারি দলের লোকেরা আত্মসাৎ করছে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে আর তাতে সহযোগিতা করছে সরকার। আবার যারা চুরি করছে তাদেরকে দিয়ে ত্রাণ সহায়তার কথা বলছে। অর্থাৎ চোরকে দিয়ে ঘর পাহারা দেওয়ার কথা বলছে। তাহলে এই সরকার দিয়ে দেশের সংকট মোকাবেলা করা যাবে না। মহামারী মোকাবেলা করতে হলে সকলের ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ নিতে হবে।’
সরকার মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে জানিয়ে রিজভী বলেন, ‘মানুষের জীবন নিয়ে খেলতে গিয়ে ভয়ঙ্কর ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এদেশের মানুষের লাশের সারি বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
নিজেদের টাকায় ১২ লাখ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বিএনপি
নিজেদের টাকায় বিএনপির নেতাকর্মীরা এখন পর্যন্ত ১২লাখ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বলে জানান রিজভী। বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে দলের নেতা-কর্মীরা অসহায় দুঃস্থ ও কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। সরকারের অনেক নিপীড়ন নির্যাতনের পরও নিজেদের পকেট টাকায় সারাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। বিএনপির নেতাকর্মীরা ১২লাখ মানুষকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ দিতে পেরেছে। আজকে আড়াইহাজারে মাহমুদুর রহমান সুমন নগদ অর্থ ও খাদ্য দিচ্ছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আরও বলেন, জনগণের টাকায় কেনা ত্রাণ সরকারি দলের লোকেরা আওয়ামী লীগের লোক এমন চেয়ারম্যান-মেম্বারদের ঘর থেকে, খড়ের পালা থেকে, খাটের নিচ থেকে চাল ডাল তেল পাওয়া যাচ্ছে। এই ধরনের রাজনৈতিক দল দিয়ে প্রধানমন্ত্রী করোনা মহামারিতে দুর্ভিক্ষ মোকাবেলা করতে পারবেন না। হাজার হাজার বস্তা চাল ধরা পড়ছে চেয়ারম্যান-মেম্বার অথবা আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে। গোটা দেশকে দুর্ভিক্ষের মধ্যে ফেলে দিয়ে দেশ পরিচালনা করবেন মানুষ সেটা মেনে নেবে না।
রিজভী বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কয়েকদিন আগে মুক্তি পেয়েছেন। তাকে অন্যায়ভাবে কারাবন্দি করে রাখা হয়েছিল। তিনি জেল থেকে বেরিয়ে এসে বলছেন মানুষের পাশে দাঁড়াতে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে প্রতিনিয়ত খোঁজখবর নিচ্ছেন। বিএনপি নেতাকর্মীদের অসহায় গরিব দুঃস্থ ও কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মাহমুদুর রহমান সুমনের উদ্যোগে খাদ্য ও নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়।
এ সময় জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনিসহ বিএনপি ছাত্রদল যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।