চীনের উহান থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়ানো প্রাণঘাতী ভাইরাস করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতির গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রোগ পরীক্ষার মূল সমন্বয়ের দায়িত্ব থেকে সরে গেছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।
শুরু থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনা ভাইরাস শনাক্তের কাজ করে আসা প্রতিষ্ঠানটি এখন থেকে আর নমুনা সংগ্রহ করবে না। সমন্বয়ের কাজটি করবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণকক্ষ।
আইইডিসিআর প্রাথমিকভাবে যেভাবে নমুনা সংগ্রহ করছিল, তা এখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বয়ে অন্যান্য ল্যাবরেটরি এবং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করা হবে। শুধু মান নিয়ন্ত্রণের জন্য এসব প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পাঠানো একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ স্যাম্পল পরীক্ষা করে যাচাই করবে আইইডিসিআর।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত সচিব ও কোভিড-১৯ বিষয়ক মিডিয়া সেলের প্রধান হাবিবুর রহমান বলেন, ‘তাদের পক্ষে অসংখ্য টেস্ট করতে গিয়ে স্যাম্পল কালেকশন বোঝা হয়। যেটা তাদের জন্য ভালো হয়, সেটাই তারা করবে। তবে অনেকেই আছেন যারা কোথাও যেতে পারবেন না, গিয়ে তাদের নমুনা নিয়ে আসার সুযোগ রাখার জন্য আমি অনুরোধ করবো।’
গত বছরের শেষের দিকে চীনের উহানে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর এটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। সারা বিশ্বে তাণ্ডব চালানো এই ভাইরাসটি বাংলাদেশে প্রতিরোধের জন্য কেন্দ্রীয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান- আইইডিসিআর।
করোনা বৈশ্বিক মহামারীতে রূপ নেওয়ার আগেই বাংলাদেশে কারও এই ভাইরাস সংক্রমণ হয়েছে কি না, তা আইইডিসিআরের ল্যাবরেটরিতেই পরীক্ষা হয়। গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিশ্চিত করে তারা।
এরপর ধীরে ধীরে নতুন রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকার মধ্যেও আইইডিসিআরের বাইরে নমুনা পরীক্ষায় সায় দিচ্ছিল না সরকার।
সম্প্রতি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় করোনা ভাইরাস পরীক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ হয়। তবে আইইডিসিআরের তত্ত্বাবধানেই এই কার্যক্রম চলছিল বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন।
আইইডিসিআরসহ দেশের ৩১টি গবেষণাগারে কোভিড-১৯ শনাক্ত পরীক্ষা চলছিল। এখন আইইডিসিআর এই দায়িত্ব থেকে সরে গেল। প্রতিষ্ঠানটি করোনা নিয়ে রোগতাত্ত্বিক গবেষণা করবে।
গতকাল নাগাদ দেশে যে ৮১ হাজার নমুনা পরীক্ষা করা হয়, তার প্রায় ১৩ হাজারই পরীক্ষা করা হয় আইইডিসিআরের পরীক্ষাগারে।
আইইডিসিআর সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটি এখন থেকে আর বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করবে না। অন্য ল্যাবরেটরির মান তারা যাচাই করবে। তারা করোনা নিয়ে রোগতাত্ত্বিক গবেষণা করবে। চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নমুনা পাঠালে তবেই তা পরীক্ষা করবে।