উপহার নিয়ে লন্ডন যাবে বিমান, ফিরবে আটকা পড়া বাংলাদেশিদের নিয়ে

বিশেষ প্রতিনিধি

বিমান
ফাইল ছবি

করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় যুক্তরাজ্যের সরকারকে বাংলাদেশ শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে করোনা সুরক্ষা সামগ্রী পাঠাচ্ছে। সঙ্গে খাদ্যসামগ্রী হিসেবে থাকছে টাটকা সবজি ও মৌসুমি ফল।

যুক্তরাজ্যে ভ্রমণ বা পড়ালেখার জন্য গিয়ে সেখানে লকডাউনে আটকা পড়া বাংলাদেশিদের দেশে ফেরাতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিশেষ চার্টার্ড ফ্লাইটে এসব উপহার সামগ্রী পাঠানো হচ্ছে। ওই বিমানেই দেশে ফিরিয়ে আনা হবে আটকা পড়া বাংলাদেশিদের।

universel cardiac hospital

ফ্লাইটটি আগামী রবিবার (১০ মে) লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যাবে। পরদিন ১১ মে বাংলাদেশি নাগরিকদের নিয়ে দেশে ফিরে আসবে বিমানটি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইস সূত্র মত ও পথকে এসব তথ্য জানান।

তারা বলছেন, সেই ফ্লাইটে কতজন বাংলাদেশি দেশে ফিরছেন, সেটা এখনো নিশ্চিত নয়। সংখ্যাটা শ খানেক বা তার কিছু বেশি হতে পারে।

আর উপহারের তালিকায় রয়েছে- করোনা সরঞ্জাম পারসোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই), হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হাতমোজা, হেড-কাভার, সু-কাভার ও বিভিন্ন ভিটামিন ট্যাবলেট। সঙ্গে খাদ্যসামগ্রী হিসেবে থাকছে টাটকা সবজি ও মৌসুমি ফল।

জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন মত ও পথকে বলেন, ‘লন্ডনে আমাদের কিছু মানুষ করোনার লকডাউনে আটকা পড়েছে। তাদের দেশে আনতে আমরা চার্টার্ড পাঠাচ্ছি। সেই ফ্লাইটে আমরা ব্রিটিশ সরকারের জন্য কিছু উপহার সামগ্রী পাঠাচ্ছি। আমরা কিছু মেডিকেল ইকুপমেন্ট (চিকিৎসা সরঞ্জাম) পাঠাচ্ছি, যেগুলো কিনা আমাদের দেশেই তৈরি। কিছু টাকটা সবজি-ফলও রয়েছে।’

করোনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আটকা পড়াদের দেশে ফেরার সুযোগ করে দিচ্ছে সরকার। ইতিমধ্যে ভারত, চীন, জাপান প্রভৃতি দেশে আটকা পড়া ২ হাজার ৮৫৩ জন দেশে ফিরেছেন। আরও ফেরার প্রক্রিয়ায় রয়েছে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় আটকা পড়া বাংলাদেশিরা।

এদিকে বাংলাদেশে আটকা পড়া নাগরিকদের বিশেষ চার্টার্ড ফ্লাইটে দেশে ফিরিয়ে নিয়েছে যুক্তরাজ্য। এ পর্যন্ত মোট নয়টি বিশেষ ফ্লাইটে দেশটির ১ হাজার ৮৮৭ জন নাগরিক দেশে ফিরেছেন। গতকাল নবম তথা শেষ ফ্লাইটটি ২৩৩ জন ব্রিটিশ নাগরিককে নিয়ে বেলা সাড়ে তিনটার পর ঢাকা বিমানবন্দর ছেড়ে যায়।

বিশেষ ওই ফ্লাইটগুলো লন্ডন থেকে খালি এসেছিল ঢাকায়। কূটনেতিক সূত্র বলছে, এসব বিমানে দেশটিতে আটকা বাংলাদেশিদের ঢাকা পাঠাতে বাংলাদেশ মিশন চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ব্রিটিশ ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিস তাতে রাজি হয়নি।

ভারত থেকে ইতিমধ্যে দুই দফায় বাংলাদেশি নাগরিকদের দেশে ফেরত আনা হয়েছে। এখনো আটকা থাকা বাংলাদেশিদের প্রত্যাবর্তনের তৃতীয় পর্যায়ের প্রস্তুতি চলছে।

আরও কিছু বাংলাদেশি নাগরিক ভারতসহ কয়েকটি দেশে আটকা রয়েছেন জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘করোনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আটকা পড়াদের আমরা নিয়ে আসছি। আরও কিছু রয়েছেন, ভারতে আছেন, তাদের বিশেষ ফ্লাইটে আনার চেষ্টা করছি। লন্ডন ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে কীভাবে আটকা পড়া বাংলাদেশিদের ফেরানো যায়, সেই পরিকল্পনাও করা হচ্ছে।’

ভারতে আটকা বাংলাদেশিদের আকাশপথে প্রত্যাবর্তনের তৃতীয় পর্যায়ের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। কলকাতা, মুম্বাই, দিল্লি ও চেন্নাই ছাড়াও বেঙ্গালুরু থেকে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার কাজ করছে দুই দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

পর্যাপ্ত যাত্রীসংখ্যা ও অনুমোদন পাওয়ার ভিত্তিতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ৪টি ফ্লাইট পরিচালনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কলকাতা থেকে ১০ মে বেলা আড়াইটায়, মুম্বাই থেকে ১২ মে বেলা আড়াইটায়, বেঙ্গালুরু থেকে ১৩ বা ১৫ মে বেলা আড়াইটায়, দিল্লি থেকে ১৪ মে বেলা আড়াইটায় ফ্লাইটগুলো বাংলাদেশের উদ্দেশে ছাড়ার সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ রয়েছে।

এ ছাড়া পর্যাপ্ত যাত্রীসংখ্যা ও অনুমোদন পাওয়ার ভিত্তিতে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস ৮, ৯, ১০ এবং ১৩ ও ১৪ মে চেন্নাই থেকে মোট পাঁচটি বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। আগ্রহী যাত্রীদের অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনসের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য হাইকমিশনের বার্তায় উল্লেখ করা হয়।

আগামী ১৩ মে মালয়েশিয়ায় আটকা পড়া বাংলাদেশি নাগরিকদের দেশে ফেরাতে মেলিন্ডো এয়ারের একটি বিশেষ চার্টার্ড ফ্লাইটের ব্যবস্থা করেছে ঢাকার মালয়েশিয়ান হাইকমিশন। ফ্লাইটটি আগামী ১৩ মে কুয়ালালামপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা করবে।

আর যুক্তরাষ্ট্রে আটকা পড়া বাংলাদেশি নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনতে আগামী ১৪ জিংবা ১৫ মে একটি বিশেষ চার্টার্ড ফ্লাইটের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

বিভিন্ন দেশকে বাংলাদেশের উপহার

করোনা পরিস্থিতিতে এর আগে আরও কয়েকটি দেশকে শুভেচ্ছা উপহার ও খাদ্যসামগ্রী পাঠিয়েছে ঢাকা। ঢাকার তরফ থেকে প্রথম শুভেচ্ছা উপহার পাঠানো হয় করোনা ভাইরাস শুরু হওয়া দেশ চীনে।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি করোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা স্মারক হিসেবে চীনকে ১০ লাখ হাতমোজা, পাঁচ লাখ মাস্ক, এক লাখ ৫০ হাজার ক্যাপ, এক লাখ হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ৫০ হাজার জুতার কাভার ও আট হাজার গাউন উপহার দেয় বাংলাদেশ।

এরপর গত ১৫ এপ্রিল মালদ্বীপে খাদ্য সহায়তা হিসেবে ১০০ টনের অধিক খাদ্য, ওষুধ এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠায় বাংলাদেশ।

এর এক দিন পর ১৬ এপ্রিল ভুটানে জন্য দুইটি চালানে জরুরি ওষুধ পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। ওষুধের মধ্যে বেক্সিমকো ফার্মা উৎপাদিত মাল্টি-ভিটামিন বেক্সট্রাম গোল্ডের ১০ লাখ ইউনিট এবং স্কয়ার ফার্মা দ্বারা উৎপাদিত ভিটামিন সি সিভিটের পাঁচ লাখ ইউনিট অন্তর্ভুক্ত ছিল।

সর্বশেষ গত ১ মে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে খাদ্য সামগ্রী পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। খাদ্য সামগ্রীর মধ্যে আকর্ষণ ছিল ‘বাংলামতি’ নামে বিশেষ সুগন্ধি চাল। সঙ্গে ছিল তরমুজ, আনারস, ঢেঁড়স, আলু, কুমড়া ও শসা।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে