নিলামে লাখ টাকায় বিক্রি হলো নির্মলেন্দু গুণের কবিতা

ডেস্ক রিপোর্ট

নির্মলেন্দু গুণ

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে ভিন্নধর্মী এক নিলাম করা হয়েছে। নিলামের বিষয় ছিল কবিতা। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি নির্মলেন্দু গুণের হাতে লেখা ‘তোমার চোখ এতো লাল কেন’ কবিতাটি ৯৯ হাজার ৯৯৯ টাকায় নিলামে বিক্রি হয়েছে।

গত বুধবার (৬ মে) ‘অকশন ফর অ্যাকশন’ নামে একটি মানবিক সংগঠন এই নিলাম করে।

পোয়েম ভেইন বাংলা নামে কবিতার একটি ফেসবুক প্ল্যাটফর্ম থেকে শুক্রবার দেওয়া একটি পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, নিলামে কবির হাতে লেখা কবিতাটি কিনেছেন গুলশানের মিসেস সায়মা মাশরুর। কবিতাটি ৯৯ হাজার ৯৯৯ টাকায় নিলাম হলেও ক্রেতা দিয়েছেন এক লাখ টাকা।

পরে অকশান ফর অ্যাকশনের পক্ষ থেকে দুটি ফাউন্ডেশনের মাঝে এই টাকা বণ্টন করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করা বন্ধু ফাউন্ডেশন পেয়েছে ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া মালিকানাহীন কুকুর ও বিড়াল নিয়ে যারা কাজ করা সংগঠন লাইফ স্টক অ্যাডভান্সমেন্টকে বাকি ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। বাংলাদেশে এই প্রথম কোনো হাতে লেখা কবিতা নিলাম হলো।

এ ব্যাপারে অকশান ফর অ্যাকশনের পরিচালক আরিফ আর হোসাইন বলেন,‘আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে এই ধরনের উদ্যোগ খুবই নতুন। আমরা এখনো এ ব্যাপারে কোনো আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড ফলো করতে পারছি না। একেবারে ম্যানুয়ালি ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে অকশান করছি। তবে যতটুকু আশা করেছিলাম, তার চেয়েও বেশি সাড়া পাচ্ছি।’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জনপ্রিয় এই ব্যক্তিত্ব বলেন, ‘করোনাদুর্গতের সাহায্যের এজন্য আমাদের এই উদ্যোগের বিষয়ে কবি নির্মলেন্দু গুণের মেয়ে মৃত্তিকা গুণের সঙ্গে আমি কথা বলেছিলাম। তিনি সবশুনে কবির হাতে লেখা একটি কবিতার ব্যবস্থা করে দেন। পরে তাদের সম্মতি নিয়েই নিলামের অর্থ দুটো ফাউন্ডেশনকে হস্তান্তর করা হয়েছে।’

অকশান ফর অ্যাকশনের প্লাটফর্মে এর আগে ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসানের একটি ব্যাট, সৌম্য –তাসকিনের বল, প্রয়াত শক্তিমান অভিনেতা হুমায়ূন ফরীদির ব্যবহৃত চশমা নিলাম করা হয়। এছাড়া কণ্ঠশিল্পী তাহসানের সঙ্গে তার বাসায় বসে গান শোনার সুযোগও নিলাম করেছিলেন তারা। আরও বেশ কিছু চমকপ্রদ নিলাম অপেক্ষমান আছে বলেও সংগঠন সূত্রে জানা গেছে।

কবি নির্মলেন্দু গুণ ১৯৪৫ সালের ২১ জুন নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা থানার কাশবন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কবিতার পাশাপাশি তিনি লিখেছেন গল্প এবং ভ্রমণসাহিত্য। তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে অন্যতম হল ‘প্রেমাংশুর রক্ত চাই’, ‘কবিতা, অমীমাংসিত রমণী’, ‘দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী’, ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’, ‘তার আগে চাই সমাজতন্ত্র’, ‘দূর হ দুঃশাসন’, ‘চিরকালের বাঁশি’, ‘দুঃখ করো না, বাঁচো’, ‘আনন্দ উদ্যান’, ‘পঞ্চাশ সহস বর্ষ’, ‘প্রিয় নারী হারানো কবিতা’, ‘শিয়রে বাংলাদেশ’, ‘ইয়াহিয়াকাল’, ‘আমি সময়কে জন্মাতে দেখেছি’, ‘বাৎস্যায়ন’, ‘রক্ষা করো ভৈরব’ ইত্যাদি। ‘আপন দলের মানুষ’ শিরোনামে রয়েছে তার একটি গল্পগ্রন্থ। এ ছাড়া লিখেছেন ‘সোনার কুঠার’ নামের একটি ছড়াগ্রন্থ। ‘আমার ছেলেবেলা’, ‘আমার কণ্ঠস্বর’ ও ‘আত্মকথা ৭১’ শিরোনামে রয়েছে তিনটি আত্মজৈবনিক গ্রন্থ।

সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য নির্মলেন্দু গুণ পেয়েছেন বেশ কিছু পুরস্কার। এর মধ্যে অন্যতম ১৯৮২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ২০১১ সালে একুশে পদক, ২০১৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে