প্রয়াত অভিনয়শিল্পীর সন্তানদের খোঁজখবর

বিনোদন প্রতিবেদক

অভিনয়শিল্পীদের সন্তানেরা
ছবি : সংগৃহিত

বাংলা চলচ্চিত্র জগতের কয়েকজন গুণী মানুষ চলে গেছেন না ফেরার দেশে। কেমন আছে তাঁদের পরিবার? সন্তানরা কি হাঁটছেন তাদের পথ ধরে? নাকি অন্য কোথাও নিজের ক্যারিয়ার গড়ছেন? জেনে নিন সেই খবর-

জসিমের সন্তান

ঢাকাই চলচ্চিত্রে পা রাখার কোনো ইচ্ছেই নেই অ্যাকশান হিরো জসিম পুত্রদের। মৃত্যুকালে তিন পুত্র রেখে গেছেন জসিম। সামী, রাতুল ও রাহুল। কথা হয় প্রয়াত অভিনেতা জসিমের বড় ছেলে সামীর সাথে।

তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন, চলচ্চিত্রে নয় বরং তারা গান নিয়ে মেতে আছেন। দুই ভাই ও আরো দুই বন্ধু মিলে গড়েছেন একটি আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ড দলও! তাদের রক মেটাল ব্যান্ডদলের নাম ‘ওন্ড’ (Owned)। জসিমের জৈষ্ঠপুত্র সামী (ড্রামার) ও মেঝছেলে রাতুল (ভোকালিস্ট, বেজ) এবং আরও দুজন গিটারিস্ট মিলে মোট ৪ জনে গড়েছেন এই দলটি। যার নেতৃত্বে আছেন সামী।

নায়কের ছেলের মিউজিশিয়ান হওয়ার গল্পও বললেন তিনি, নিজেদের বন্ধুবান্ধব মিলে একটি ব্যান্ড দল গড়ার চিন্তা মাথায় আসে। ৫ জন সদস্য নিয়ে ২০০৭ সালে ব্যান্ডদল ‘ওন্ড’ তৈরি হলেও ২০১১ সাল থেকে নতুনভাবে ৪ সদস্য নিয়ে যাত্রা শুরু করে দলটি। ‘ওন্ড’ ব্যান্ডের প্রথম অ্যালবাম ‘ওয়ান’ প্রকাশ হয়েছিল ২০১৪ সালে। দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘টু’ প্রকাশ হয়েছিল ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে। ২০২০ সালে আমাদের নতুন অ্যালবাম আনব।

হুমায়ূন ফরিদীর কন্যা

শারারাত ইসলাম হুমায়ুন ফরীদির একমাত্র মেয়ে। দেবযানী নামেই তাঁকে চেনে সবাই। বাবা সম্পর্কে কখনো তেমন কিছু বলেন না তিনি। তিনি একটি প্রাইভেট ব্যাংকে কর্মরত আছেন। তার স্বামী কাজী সাবির একজন সিনিয়র নিউজ প্রেজেন্টার। বর্তমানে বাংলা ভিশনে কর্মরত আছেন। এছাড়াও তিনি একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানেও কর্মরত আছেন।

দিতি-সোহেল চৌধুরির সন্তান

তাদের ঘরে ১৯৮৭ সালে জন্ম নেন মেয়ে লামিয়া চৌধুরী আর ১৯৮৯ সালে জন্ম নেয় ছেলে দীপ্ত। মেয়ে কানাডা থেকে ফিল্ম মেকিং নিয়ে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে ফিরেছেন দেশে। দীপ্ত নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত সন্তানদের নিয়ে গুলশানে বসবাস করছিলেন দিতি।

মান্নার ছেলে

মান্নার একমাত্র ছেলে সিয়াম ইলতিমাস। বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ফিল্ম প্রোডাকশন অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র তিনি। পড়াশোনার জন্য চার বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকছেন এই তরুণ। দেশে ‘এ’ লেভেল শেষ করে তিনি সেখানে পাড়ি জমান। তবে ছুটিতে মাঝে মধ্যে দেশে আসেন।

কিছুদিন আগে গুঞ্জন উঠেছিল সিনেমায় অভিনয় করতে যাচ্ছেন সিয়াম। তবে মান্নাপুত্র জানান, আপাতত অভিনয় নিয়ে তার কোনো পরিকল্পনা নেই।

তিনি বলেন, সিনেমায় কাজ করার পরিকল্পনা কখনই আমার ছিল না। মনে হয় আমাকে দিয়ে অভিনয় হবে না। কারণ আমি অভিনয় করতে পারি না। পড়াশোনা করছি সিনেমা নির্মাণ নিয়ে। তাই ভবিষ্যতে সিনেমা নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত হতে পারি।

অনেকেই বলছেন অভিনয় করলে আপনি হয়তো মান্নার জায়গাটা নিতে পারবেন। এ বিষয়টি কিভাবে দেখছেন? উত্তরে সিয়াম বলেন, আমার মনে হয় না আমি আমার বাবার জায়গাটি নিতে পারবো। তার মতো এতো ভালো অভিনয় আমাকে দিয়ে সম্ভব নয়।

একসময় টিভিতে শুধু বাবার সিনেমায় দেখতেন সিয়াম। অন্য বাংলা সিনেমা তার দেখা হতো না। সিয়ামের ভাষ্যে, আমি বাবাকে নিয়ে অনেক গর্ব করি। আমাদের পুরো পরিবার তিনি নিজেই চালাতেন। জীবিত অবস্থায় তিনি বাংলাদেশের এক নাম্বার নায়ক ছিলেন। বাবার সিনেমা ছাড়া আমার অন্য বাংলা সিনেমা কখনো দেখা হয়নি।

মান্নার মৃত্যুতে পারিবারকিভাবে অনেকটা পিছিয়ে যেতে হয়েছে বলে মনে করেন সিয়াম। বলেন, বাবা যখন মারা যান তখন আমার বয়স ছিল ১৩ বছর। আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল দেশের বাইরে পড়াশোনা করবো। কিন্তু তিনি মারা যাওয়ার পর অনেক কিছু থেকে পিছিয়ে যেতে হয়েছে। কারণ বাবা ছিলেন পরিবারের একমাত্র কর্তা। তাই তার মৃত্যুতে সবাই ভেঙে পড়েছিল।

দিলদারের দুই কন্যা

দিলদারের স্ত্রীর নাম রোকেয়া বেগম। এই দম্পতির দুই কন্যা সন্তান। বড় মেয়ের নাম মাসুমা আক্তার। পেশায় তিনি দাঁতের ডাক্তার। বিয়ে করেছেন অনেক আগেই। তার ছেলে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়য়ে পড়ছে আর মেয়ে পড়ছে ক্লাস সেভেনে। ছোট মেয়ে জিনিয়া আফরোজ।

দিলদার চলচ্চিত্রে কাজ করে টাকা জমিয়ে ডেমরার সারুলিয়ায় ১৯৯৪ সালে একটা পাঁচতলা বাড়ি করেছেন। এখন চারতলা পর্যন্ত ভাড়া দেয়া এবং পাঁচ তলায় দিলদারের স্ত্রী রোকেয়া বেগম থাকেন। এছাড়াও তিনি মাঝে মধ্যে বড় মেয়ের কাছে চাঁদপুরে ও ছোট মেয়ের কাছে ঢাকার নিকেতনে থাকেন। দিলদারের ছোট মেয়ে জিনিয়ার স্বামী মারা গেছেন। জিনিয়া আগে টেলিকমিনিকেশনে চাকরি করতেন। সেখানে থেকে চলে আসেন ব্রাক ব্যাংকে। পাঁচবছর চাকরির পর সেটিও ছেড়ে দেন। শারীরিক অসুস্থতা ও অতিরিক্ত কাজের প্রেসারে ওই চাকরিটি ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। বর্তমানে চাকরির চেষ্টা করছেন তিনি।

জিনি বলেন, পরিবারের সবকিছু আমার মা দেখাশোনা করেন। উনারও বয়স হয়েছে। আমাদের সংসার রয়েছে, তার ফাঁকেও দেখভাল করি যতটুকু পারি। আর আমার তো কোনো ভাই নেই তাই আম্মাকে আমাদের দুই বোনকেই দেখতে হয়।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে