প্রাণঘাতী করোনার কারণে ধুকতে থাকা অর্থনীতির গতি ফেরাতে ২০ লাখ কোটি রুপির আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
মঙ্গলবার (১২ মে) জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বিশাল এই প্রণোদনা ছাড়াও চতুর্থ দফায় দেশজুড়ে লকডাউন বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন তিনি।
মহামারির প্রাদুর্ভাব শুরুর আগে থেকেই ভারতের অর্থনীতি ধুঁকছিল। করোনার কারণে তার অবস্থা আরও নাজুক হয়ে পড়েছে। অর্থনীতি চাঙ্গা করতে মোদি যে ২০ লাখ কোটি রুপির বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করলেন তা দেশটির মোট জাতীয় উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ১০ শতাংশ।
প্রধানমন্ত্রী মোদি এই প্রকল্পের নাম দিয়েছেন ‘আত্মনির্ভর ভারত অভিযান’। কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষিত ২০ ট্রিলিয়ন রুপির এই আর্থিক প্যাকেজ দেশে বিরাট সংস্কার আনবে বলে আশ্বস্ত করার পাশাপাশি ভারতজুড়ে চতুর্থ দফার লকডাউন যে সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী হবে সে কথাও বলেছেন তিনি।
মঙ্গলবার মোদির প্রায় ৩৩ মিনিটের ভাষণের মূল বিষয় ছিল বিশাল এই আর্থিক প্যাকেজ। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০ লাখ কোটির এই আর্থিক প্রণোদনার মধ্যে কৃষক, শ্রমিক থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র শিল্পক্ষেত্র—যারা নিয়ম মেনে কর দেন, শিল্পক্ষেত্র সবার জন্য বন্দোবস্ত থাকবে।’
মোদির ঘোষণা অনুযায়ী, আগামীকাল বুধবার থেকে ধাপে ধাপে এই প্যাকেজের বিষয়ে বিস্তারিত জানাবেন কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। আর্থিক এই প্যাকেজ ভারতের অর্থনীতিতে এক বিরাট সংস্কার নিয়ে আনবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
মোদি বলেন, ‘কৃষিক্ষেত্রে যাতে সবচেয়ে কম ক্ষতি হয় এই প্যাকেজের মাধ্যমে সেই চেষ্টা করা হবে। আর্থিক ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে মানবসম্পদের উন্নয়ন করতে হবে। এ ছাড়া ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পে এই প্যাকেজ আরও উৎসাহ বাড়াবে বলে আমি মনে করি।’
শ্রমিক, দিনমজুর ও নিম্নবিত্ত মানুষ এই করোনা সংকটে অনেক কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করেছেন অভিহিত করে তিনি বলেন, ‘তাদের জন্য এবার আমাদের কিছু করার সময় এসেছে। তাই গরিব, শ্রমিক, মৎস্যজীবী—সংগঠিত হোক বা অসংগঠিত ক্ষেত্র, সবার কথা ভেবেই এই আর্থিক প্যাকেজ তৈরি হয়েছে।’
আগামী ১৭ মে শেষ হচ্ছে ভারতের তৃতীয় দফার লকডাউন। এরপর লকডাউন থাকবে কিনা বা থাকলেও কতটা নিয়ন্ত্রণ বা কোন কোন ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হবে, তা নিয়ে ভারতের কৌতূহল ছিল। মোদি তার ভাষণে চতুর্থ দফার লকডাউনের ঘোষণা না দিলেও লকডাউন যে বাড়ছে তা নিশ্চিত করেছেন।
মোদি বলেছেন, ‘চতুর্থ দফার লকডাউন সম্পূর্ণ ভিন্ন রকমের হবে।’ তার কথায় স্পষ্ট ভারতে দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা লকডাউন চতুর্থ দফায় বাড়ছে। নিয়ন্ত্রণ বা শিথিলতার বিষয়টি স্পষ্ট না করলেন, ১৮ তারিখের আগেই তা জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সূত্র: এনডিটিভি ও আনন্দবাজার পত্রিকা