গণস্বাস্থ্যের কিট : নিজেদের উদ্যোগেই ‘ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল’

বিশেষ প্রতিনিধি

ছবি : সংগৃহীত

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের গবেষকদের উদ্ভাবিত করোনাভাইরাস শনাক্তে ‘জিআর র‌্যাপিড ডট ব্লট’ কিটের কার্যকারিতা নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সিদ্ধান্ত জানানোর কথা আজ রবিবার (২৪ মে)। সিদ্ধান্তের কথা লিখিত প্রতিবেদন আকারে প্রতিষ্ঠানটির উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়ার কাছে জমা হবে। এরপর তিনি প্রতিবেদন পাঠাবেন ওষুধ অধিদফতরে। সেখান থেকে অনুমোদন মিললেই নিজেদের তৈরি কিটে করোনা পরীক্ষা শুরু করবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। তবে, এ দুটো ধাপের কাজ শেষ হতে অন্তত একমাস সময় লাগতে পারে বলে এমন আশঙ্কা থেকে আপাতত নিজেদের উদ্যোগেই কিটের ‘ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। মঙ্গলবার (২৬) নাগাদ সীমিত পরিসরে ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে এ প্রক্রিয়া শুরু হবে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত একাধিক দায়িত্বশীলের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানা গেছে। 

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অন্যতম ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী শনিবার (২৩ মে) মধ্যরাতে ‘জিআর র‌্যাপিড ডট ব্লট’ নিয়ে সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে কথা বলেন। তিনি জানান, ইতোমধ্যে এই প্রজেক্টে চার কোটি টাকার ওপর ব্যয় হয়েছে। যেহেতু সরকারের কোনও রকম আগ্রহ ছাড়া তিনি এই উদ্যোগ নিয়েছেন, সে কারণে আর্থিক বিষয়টি সামনে আনতে চান না। 
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, বেশ কয়েকটি কারণে এই প্রতিষ্ঠানের কিট পরীক্ষার বিষয়টিকে দীর্ঘায়িত করা হয়েছে। অন্তত ১৩ দিন আগে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে কিটের ‘ইফেক্টিভনেস’ দেখতে দেওয়া হয়েছে। তারা পিসিআর-এর সঙ্গে তুলনা করে দেখছেন কিটের কার্যকারিতা। তবে, পুরো প্রক্রিয়াটিকে কেন বারবার পেছানো হচ্ছে তা নিয়ে মন্তব্য করতে কেউ রাজি হননি। যদিও কর্মকর্তাদের কেউ কেউ দাবি করেছেন, গণস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েকবার নিজেদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়েছে। সর্বশেষ ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল রবিবার (২৫ মে) হওয়ার কথা থাকলেও বাতিল করা হয়েছে। সোমবার (২৫ মে) ঈদুল ফিতর হওয়ায় মঙ্গলবার সীমিত পরিসরে এটি শুরু করবে গণস্বাস্থ্যকেন্দ্র। 
পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে আইনি বাধা নেই বলে জানিয়ে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ (বিএমআরসি)। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন হাসপাতাল তৈরির সময় নেওয়া হয়। এটা তো লিখিতভাবে গণস্বাস্থ্যের আছেই।’

তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত ড্রাগ কন্ট্রোলার না দেয়, ততক্ষণ পর্যন্ত অননুমোদিত, কাজ করে কিন্তু সরকারের অনুমোদন পায়নি।’ 

১৭ মার্চ করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের পরীক্ষার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণায় কিট উৎপাদনের কথা জানায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। ১৯ মার্চ কিট উৎপাদনে যায় প্রতিষ্ঠানটি। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের গবেষক ড. বিজন কুমার শীলের নেতৃত্বে  ড. নিহাদ আদনান, ড. মোহাম্মদ রাঈদ জমিরউদ্দিন, ড. ফিরোজ আহমেদ এই কিট তৈরি করেন। ২৫ এপ্রিল গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের কাছে করোনা টেস্টের কিট হস্তান্তর করা হয়। বেশ কিছু দিন কিট পরীক্ষা নিয়ে বিতর্কের পর ৩০ এপ্রিল ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের থেকে বিএসএমএমইউ বা আইসিডিডিআর,বিতে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্ভাবিত কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য অনুমিত দেওয়া হয়। এরপর ২ মে কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য বিএসএমএমইউ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. শাহীনা তাবাসসুমকে প্রধান করে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। 
কিট নিয়ে এই জটিলতা কেন– এমন প্রশ্নে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘তা তো বলতে পারবো না। হাজার হাজার মানুষ ঝাড়ফুঁক দিয়ে বেড়ায় তাদের জটিলতা হয় না, আজকের দিনে বাজারের দোকানে যে প্রেগনেন্সি টেস্ট কিট পাওয়া যায় সেটা ইফেক্টিভ কিনা তা কি দেখেছে? এসব শুধু আমাদের বেলাতেই করতে হচ্ছে।’

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে