ডিএমপি কমিশনারকে ঘুষের প্রস্তাব, পুলিশের শীর্ষ মহলে তোলপাড়

ডেস্ক রিপোর্ট

ডিএমপি
ফাইল ছবি

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারকে ডিএমপিরই এক যুগ্ম কমিশনারের সরাসরি দেওয়া ঘুষের প্রস্তাবে তোলপাড় পুলিশের শীর্ষ মহলে। এমন অনৈতিক প্রস্তাবে কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম চরম ক্ষুব্ধ ও বিব্রত। যুগ্ম কমিশনার (লজিস্টিকস) মো. ইমাম হোসেনের ঘুষের প্রস্তাবের বিষয়টি তিনি গোপন রাখেননি।

আইজিপির কাছে অভিযোগ করেছেন ডিএমপি কমিশনার। নিয়মানুযায়ী যথাযথভাবে অভিযোগটি তদন্ত করা হবে জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।

universel cardiac hospital

পুলিশ সদর দপ্তরের জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক সোহেল রানা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই কিছু অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ বিষয় থাকে। এগুলো প্রপার অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ এবং প্রফেশানাল ওয়েতে অ্যাডভাইস করা হয়। ডিএমপির যে বিষয়টি আলোচনা হচ্ছে বা উঠে এসেছে, সে বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে এখনো কোনও কিছু পৌঁছায়নি। এমন করেসপনডেন্স এলে বা ইস্যূজ এলে পুলিশ সদর দপ্তর তা প্রপার ওয়েতে দেখবে।’

কেন এই অভিযোগ?

গত ৩০ মে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অতিরিক্ত ডিআইজি) ইমাম হোসেনকে অন্য জায়গায় বদলির বিষয় উল্লেখ করে কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম আইজিপি বেনজীর আহমেদকে দাপ্তরিক চিঠি দেন।

ওই চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘উপযুক্ত বিষয়ে জানানো যাচ্ছে যে, ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস) মো. ইমাম হোসেন একজন দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা। ডিএমপির বিভিন্ন কেনাকাটায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। তদুপরি তিনি ডিএমপির কেনাকাটায় স্বয়ং পুলিশ কমিশনারের কাছে পার্সেন্টেজ গ্রহণের প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন। ফলে ওই কর্মকর্তাকে ডিএমপিতে কর্মরত রাখা সমীচীন নয় মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে।

এমতাবস্থায় তাকে জরুরি ভিত্তিতে অন্যত্র বদলি করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হল।’গুরুতর এ বিষয়টি ডিআইজিকেও (অ্যাডমিন অ্যান্ড ডিসিপ্লিন) দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।

জানা যায়, সারা জীবন নীতির সঙ্গে আপসহীন থাকা ডিএমপি কমিশনার বিষয়টিকে সহজে মেনে নিতে পারেননি। তাই অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে দুর্নীতিপরায়ণ আখ্যায়িত করে তাকে জরুরি ভিত্তিতে বদলি করার প্রস্তাব দেন আইজিপির কাছে।

এদিকে এ ঘটনায় পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ে তোলপাড় চলছে। একজন উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাকে ঘুষ পার্সেন্টেজ দেওয়ার প্রস্তাব সংক্রান্ত খবর শুনে রীতিমতো স্তম্ভিত ডিএমপির সব পর্যায়ের কর্মকর্তা।

অভিযোগের বিষয়ে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার ইমাম হোসেনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন না তোলায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

প্রসঙ্গত, ডিএমপির সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া অবসরে গেলে এই পদে আসেন ক্লিন ইমেজের কর্মকর্তা হিসেবে সুপরিচিত মোহা. শফিকুল ইসলাম। কমিশনারের চেয়ারে বসেই ডিএমপি কার্যালয়সহ প্রতিটি থানাকে একটি শৃঙ্খলার মধ্যে নেওয়ার কাজে হাত দেন তিনি। দুর্নীতিবিরোধী জিরো টলারেন্সের শক্ত দেয়াল গড়ে তোলেন সর্বত্র।

ডিএমপির অভ্যন্তরীণ কেনাকাটায় দীর্ঘদিন ধরে জেঁকে বসা দুর্নীতির খবরও পেয়ে যান ডিএমপির এই শীর্ষ কর্মকর্তা। স্বয়ং কমিশনার কেনাকাটার সব বিষয়ে চুলচেরা হিসাব নিচ্ছেন- এমন সংবাদ পেয়ে কিছুটা ভেঙে পড়েন ইমাম হোসেন। কিন্তু নিজেকে স্বপদে বহাল রাখতে একপর্যায়ে কমিশনারকে ম্যানেজ করতে তিনি ঘুষ পার্সেন্টেজের বড় অফার করে বসেন।

অন্যদিকে ২০১২ সালে ডিএমপির তেজগাঁও জোনের ডিসি হিসেবে ইমাম হোসেন পোস্টিং নিয়ে আসেন। এরপর তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ডিএমপির ডিসি (অর্থ), ডিসি লজিস্টিকস এবং বর্তমানে পদোন্নতি পেয়ে একই দপ্তরে যুগ্ম কমিশনার হয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএমপির এক কর্মকর্তা জানান, এর আগে ইমাম হোসেনকে গুরুত্বপূর্ণ এই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করা হলেও তাকে সরানো হয়নি। বরং পদোন্নতি পেয়ে একই স্থানে গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল হয়েছেন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে