বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের মৃত্যুতে মোকতাদির চৌধুরীর শোক

মোহাম্মদ সজিবুল হুদা

বদর উদ্দিন আহমদ কামরান- মোকতাদির চৌধুরী এমপি।
বদর উদ্দিন আহমদ কামরান- মোকতাদির চৌধুরী এমপি। ফাইল ছবি

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। আজ সোমবার রাত পৌনে ৩টার দিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি….. রাজিউন)।

বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি।

universel cardiac hospital

সোমবার সকালে এক শোকবার্তায় মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেন, বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে একজন প্রতিশ্রুতিশীল সৈনিক। তাঁর সঙ্গে আমার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। তিনি আমৃত্যু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আর্দশকে ধারণ করে দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। তাঁর মৃত্যুতে সিলেটবাসীর পাশাপাশি আমিও শোকাহত। আমি তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।

এক নজরে কামরানের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন

সদ্য প্রয়াত সিলেট সিটির সাবেক এই মেয়রের রাজনৈতিক জীবন ছিল বর্ণাঢ্য। ১৯৫১ সালের ১ জানুয়ারি সিলেটে জন্মগ্রহণ করা কামরান ষাটের দশকে ছাত্রলীগে যোগ দেন। উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার সময় ১৯৭৩ সালে তিনি প্রথমবার সিলেট পৌরসভার ওয়ার্ড কমিশনার নির্বাচিত হন। এর মাধ্যমেই শুরু হয় তার রাজনৈতিক জীবন। তিনি সিলেট পৌরসভায় ৬৪৪টি ভোট পেয়ে তোপখানা ওয়ার্ডের কমিশনার নির্বাচিত হন। সে সময় সিলেট শহরে মাত্র ৫টি ওয়ার্ড ছিল। তোপখানা ছিল ৩নং ওয়ার্ডের অধীন।

১৯৭৭ সালে আবার নির্বাচন হলে কমিশনার নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৭৩ সালে সিলেট পৌরসভার সর্বকনিষ্ঠ কমিশনার নির্বাচিত হয়েছিলেন কামরান।

এরপর কিছু দিনের জন্য দেশের বাইরে চলে যান। দেশে এসে ১৯৮৯ সালে আবারও নির্বাচনে অংশ নেন। তখনও তিনি একই ওয়ার্ড থেকে কমিশনার নির্বাচিত হন। তখন তার প্রতীক ছিল আনারস।

সে সাফল্যের পথ ধরে ১৯৯৫ সালে তিনি পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। নিজ দল ক্ষমতার বাইরে থাকা অবস্থাতেও অনেকটা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনি দুইবার মেয়র পদে নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়েন।

বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ নেতা কামরানকে লক্ষ্য করে দুই দফা গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটেছিল। দুই বারই প্রাণে বেঁচে যান তিনি।

২০০২ সালের ২৮ জুলাই সিলেট পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে রূপ দেয়া হয়। সেসময় বিলুপ্ত পৌরসভার চেয়ারম্যান বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে নবগঠিত সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র করা হয়।

সিলেট সিটি করপোরেশন উন্নীত হওয়ার পর ২০০২ সালের ২৮ জুলাই তিনি ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০০৩ সালের ২০ মার্চ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন।

২০০৭-০৮ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আরও অনেক রাজনীতিবিদের মত কামরানকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সে সময় জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা কামরান কারাগারে থেকে নির্বাচন করেও বিপুল ভোটে জয়ী হন।

তখন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে ৮৩ হাজার ৩৩৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন কামরান। সে সময় সবমিলিয়ে ১ লাখ ১৫ হাজার ৪৩৬ ভোট পান তিনি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আ ফ ম কামাল ৩২ হাজার ৯৭ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হন।

২০১৩ সালের নির্বাচনে আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে হেরে গিয়ে মেয়র পদ হারান কামরান। এরপর ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি লড়েছিলেন, কিন্তু জয়ী হতে পারেননি।

নির্বাচনে পরাজিত হলেও সবসময় জনসম্পৃক্ত ছিলেন এই আওয়ামী লীগ নেতা। স্থানীয়দের মতে, মেয়র না হয়েও কামরান সিলেট সিটি এলাকার বাসিন্দাদে সুখে-দুঃখে পাশে ছিলেন।

বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ১৯৬৮ সালে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ১৯৮৯ সাল থেকে সিলেট শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ২০০২ সালে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হন কামরান। সেই দায়িত্ব তিনি সামলেছেন প্রায় দেড় যুগ।

সর্বশেষ ২০১৯ সালের ত্রিবার্ষিক কাউন্সিলে কামরানকে বাদ দিয়ে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হয় মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদকে। আর কামরানকে করা হয় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। কামরান বর্তমান কমিটিতেও একই পদে ছিলেন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে