মানবপাচার ও মুদ্রাপাচারের হোতা বাংলাদেশের সংসদ সদস্য—গত কয়েক দিন ধরে এমন আলোচনাই হচ্ছে কুয়েতের বিভিন্ন মহলে। সেখানে গ্রেপ্তারকৃত লক্ষ্মীপুর-২ আসনের আলোচিত-সমালোচিত সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল মুখ খুলছেন।
আরব টাইমস অনলাইন এক প্রতিবেদনে জানায়, ঘুষ নিয়ে কুয়েত সরকারের যেসব কর্মকর্তা আইন বহির্ভূত কাজে তাকে সহযোগিতা করেছেন, তাদের মধ্যে তিনজনের নাম প্রকাশ করেছেন পাপুল। বলা হয়, বাংলাদেশি এমপির মামলার তদন্তে আরো রহস্য এবং চমকপ্রদ তথ্য বেরিয়ে আসছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এই এমপি যে তিনজনের নাম প্রকাশ করেছেন তাদের মধ্যে একজন কুয়েতের একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের বেসামরিক কর্মকর্তা। অন্যজন সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জিজ্ঞাসাবাদে পাপুল জানিয়েছেন, কুয়েতি মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা যেদিন ক্লিনিং কম্পানিতে পাপুলের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন, সেদিন সেখানকার সব কুয়েতি কর্মীকে ছুটি দেওয়ার কথা বলেছিলেন, যাতে তাকে কেউ চিনতে পারে। ওই কর্মকর্তার কথামতো পাপুল স্থানীয় কর্মীদের ছুটিও দিয়েছিলেন। সেখানেই তাকে নগদ অর্থ প্রদান করা হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যে কর্মকর্তার কথা প্রকাশ করেছেন পাপুল, তিনি জানিয়েছেন, ওই কর্মকর্তাকে ১১ লাখ কুয়েতি দিনার প্রদান কর হয়। এর মধ্যে ১০ লাখ কুয়েতি দিনারের একটি চেক ছিল। বাকি এক লাখ দেওয়া হয় নগদ। বিনিময়ে তিনি তাকে অবৈধভাবে কর্মী নিতে সহায়তা করেছিলেন তিনি। জানা গেছে, কুয়েতি পাবলিক প্রসিকিউশনের কাছে সেই চেকের কপিও উপস্থাপন করেছেন এমপি পাপুল।
কুয়েতে পাপুলের পক্ষে আইনজীবী নাসের আল-হাসবান যেকোনো গ্যারান্টির বিনিময়ে তার জামিন আবেদন করেন। আদালতকে তিনি বলেন, তাকে জামিন দেওয়া হলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তিনি কুয়েত ত্যাগ করবেন না।
ইংরেজি দৈনিক আরব টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানবপাচার, ভিসা নবায়ন আর অবৈধ অর্থপাচারের মামলায় আটক বাংলাদেশের নাগরিকের নতুন নতুন রহস্য উন্মোচিত হচ্ছে। তদন্ত কর্মকর্তারা ওই মামলায় কুয়েতের অন্তত সাতজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার ব্যাপারে জানতে পেরেছেন। তাঁদের মধ্যে কুয়েত সরকারের তিনটি বিভাগের প্রধানও আছেন। তাঁদের কেউ কেউ অবসরে গেছেন। ঘুষ ও উপহার দিয়ে এমপি পাপুল কুয়েতে তাঁর অপকর্মের নেটওয়ার্ক চালাতেন।
আরব টাইমসের প্রতিবেদনে একটি সূত্রের বরাত দিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে এমপি পাপুলের কয়েক লাখ দিনার পাঠানোর তথ্য দেওয়া হয়েছে। কুয়েতের ব্যাংকের ওই লেনদেন সন্দেহজনক বলেই চিহ্নিত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ধরা পড়ার আশঙ্কায় এমপি পাপুল কুয়েত থেকে অপকর্মের নেটওয়ার্ক গুটিয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
জানা গেছে, এমপি পাপুল আটক হওয়ার পর তাঁর ঘনিষ্ঠ এক কুয়েতি সহযোগী বিশেষ ফ্লাইটে ফ্রান্সে পাড়ি জমিয়েছেন।