আরও তীব্র হয়েছে দুই কোরিয়ার মধ্যে চলমান সংকট। সীমান্তের ডিমিলিটারাইজড অঞ্চলে সেনা পাঠানোর হুমকি দেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দক্ষিণের সঙ্গে যৌথ লিয়াজোঁ অফিস উড়িয়ে দিয়েছে উ. কোরিয়া। স্থানীয় সময় আজ মঙ্গলবার বিকেল তিনটার কিছু আগে সেখানে একটি বিস্ফোরণের কথা নিশ্চিত করে দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার।
২০১৮ সালে দক্ষিণ ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি করার জন্য উত্তর কোরিয়ার সীমানায় একটি যৌথ লিয়াজোঁ অফিস স্থাপন করা হয়। করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে এই কার্যালয়টি খালি পড়েছিল।
এর আগে দুই কোরিয়ার সীমান্তে যে ডিমিলিটারাইজড জোন রয়েছে সেখানে সেনা পাঠানোর হুমকি দিয়েছিল উত্তর কোরিয়া। দক্ষিণ কোরিয়াতে বসবাসকারী উত্তর কোরিয়ার স্বদেশত্যাগী দলগুলো যেসব প্রচারণামূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে তার জবাবে এই হুমকি।
স্বদেশত্যাগী দলগুলো বেলুন ও ড্রোন ব্যবহার করে প্রায়শই উত্তর কোরিয়া বিরোধী লিফলেট পাঠায় দেশটিতে। সেটিকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চলছে।
শনিবার উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের বোন কিম ইয়ো জং বলেছেন তিনি ইতিমধ্যেই সেনাবাহিনীকে প্রস্তুতি নিতে বলেছেন।
হুমকির জবাবে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী আজই বলেছেন, তারা মার্কিন সেনাবাহিনীর সঙ্গে একত্রে উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনীর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে।
উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার সীমান্ত একটি ‘ডিলিমিলিটারাইজড জোন’ দ্বারা বিভক্ত। যেটাকে বলা হয় একটি অসামরিক নিরপেক্ষ অঞ্চল। ১৯৫০ সালে কোরিয়ান যুদ্ধের পর এই বিভক্তি হয়েছে। মঙ্গলবার উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনী বলেছে অসামরিক অঞ্চলে সেনা পাঠানোর ব্যাপার তারা একটি কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে।
দেশটির সেনাবাহিনীর দপ্তর জানিয়েছে তারা অতি সতর্ক আছেন এবং সরকারি সিদ্ধান্ত আসা মাত্রই তারা দ্রুততার সঙ্গে তা বাস্তবায়নে প্রস্তুত রয়েছেন।
শনিবার কিম ইয়ো জং দক্ষিণ কোরিয়ার উদ্দেশ্যে হুমকি দেয়ার পর উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনীর দপ্তর থেকে এই বিবৃতি এসেছে।
উত্তর কোরিয়ায় রাজনৈতিক পদমর্যাদার দিক দিয়ে খুব ক্ষমতাশালী কিম ইয়ো-জং বলেছেন, ‘আমার মনে হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার কর্তৃপক্ষের সাথে নিশ্চিতভাবেই বিচ্ছেদের একটা সময় হয়ে এসেছে। আবর্জনাকে অবশ্যই ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হয়।’
এই ঘটনার পর দক্ষিণ কোরিয়া ডিমিলিটারাইজড জোনে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট সবাইকে শান্ত হওয়ার আবেদন জানিয়ে উত্তর কোরিয়াকে সংঘাতময় পরিস্থিতি থেকে দুরে থাকার কথা বলেছেন।
ডিলিমিলিটারাইজড জোন কি?
কোরিয়ার যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ১৯৫৩ সালে দুই দেশের সীমান্তে একটি অসামরিক নিরপেক্ষ অঞ্চল তৈরি করা হয়। এর ঐতিহাসিক কারণে এই অঞ্চলে অবস্থান খুব গুরুত্বপূর্ণ।
এই অঞ্চল দিয়ে উত্তর কোরিয়ার সেনাসদস্যদের দেশত্যাগ করে দক্ষিণে পালানোর ঘটনা রয়েছে। এখানে শান্তি আলোচনা যেমন হয়েছে তেমনি দুপক্ষের গুলি বিনিময়ও হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার অনেকের জন্য এই অঞ্চলটি পর্যটন কেন্দ্র। এখানেই মিলিত হয়ে হাত মিলিয়েছিলেন দুই কোরিয়ার নেতা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এখানেই সাক্ষাৎ করেছেন কিম জং উন। তবে এর নাম যাই বলুক, এই ডিলিমিলিটারাইজড জোন বিশ্বের সবচেয়ে ভারি অস্ত্রশস্ত্র সজ্জিত এলাকার একটি। সূত্র: বিবিসি