আগামী অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়নে করোনাসহ ১৬ চ্যালেঞ্জ

মত ও পথ প্রতিবেদক

এডিপি
ফাইল ছবি

আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে ২০২০-২১ অর্থবছর। অন্যান্য অর্থবছর যেভাবে যাত্রা শুরু করে এবার সেরকম হচ্ছে না। কোভিড-১৯ এর কারণে পাল্টে গেছে উন্নয়নের চিত্র। জীবন-জীবিকা এবং উন্নয়ন সব ক্ষেত্রেই বিরাজ করছে শঙ্কা।

এ পরিপ্রেক্ষিতে করোনার প্রভাবসহ ১৬ চ্যালেঞ্জ নিয়ে বাস্তবায়নে যাচ্ছে আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কমসূচি (এডিপি)। গত মার্চ মাসে এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধাপে ১৫টি প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)।

পরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ায় সেটি উন্নয়নে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় নতুন অর্থবছরে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি স্বাভাবিক হবে কি-না তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, করোনার ধাক্কা সামলাতে হলে অর্থনৈতিক কার্যক্রম ক্রমান্বয়ে জোরদার করতে হবে। কেননা বাজেটের প্রধান অংশই হচ্ছে এডিপি। প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে প্রকল্প বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে মান এবং সময়ের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। প্রয়োজনে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে মনিটরিং বৈঠক করতে হবে। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে প্রকল্পের মানসম্মত বাস্তবায়ন জরুরি।

সূত্র জানায়, গত মে মাসে দুই লাখ পাঁচ হাজার ১৪৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকার এডিপি অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে এক লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৭০ হাজার ৫০১ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য রয়েছে।

চলতি অর্থবছরে সংশোধিত এডিপির আকার এক লাখ ৯২ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। সেই তুলনায় নতুন এডিপির আকার বাড়ছে ১২ হাজার ২২৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা বা ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এর বাইরে নয় হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিল থেকে।

ইতোমধ্যেই ফাস্টট্র্যাকভুক্ত মেগা প্রকল্পগুলো বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। গত ২৫ জুন অনুষ্ঠিত ফাস্টট্র্যাক প্রজেক্ট মনিটরিং টাস্ক ফোর্সের সভায় স্বাস্থ্যবিধি মেনেই মেগা প্রকল্পের কাজ চালু রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এ ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, ১ জুলাই থেকে পুরোদমে কাজ চালিয়ে যেতে হবে। জীবন ও জীবিকার মধ্যে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ থেমে থাকলে চলবে না। বৈঠকে প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে প্রতিবন্ধকতাগুলো চিহ্নিত করে তা থেকে উত্তরণে পরিকল্পনা তৈরি করতে বলা হয়েছে। বাস্তবায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত কসনালট্যান্ট, টেকনিশয়ান ও শ্রমিকসহ অন্যান্য সবাই যাতে করোনা সংক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকে সেজন্য সতর্ক থাকতেও নির্দেশ দেয়া হয়।

আইএমইডি সূত্র জানায়, এডিপি বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জগুলো তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রকল্প তৈরি ও অনুমোদন পর্যায়, বাস্তবায়ন পর্যায় এবং বাস্তবায়ন পরবর্তী পর্যায়ের চ্যালেঞ্জ। এগুলো হলো- প্রকল্প গ্রহণে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা না করা, যথার্থতা সমীক্ষা ছাড়া প্রকল্প গ্রহণ ও ব্যয় প্রাক্কলন, বেইজলাইন ডাটা সংরক্ষিত না থাকা, প্রকল্প হাতে নেয়ার আগেই ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য ভূমি চিহ্নিতকরণ এবং ওই জেলা প্রশাসকের প্রাথমিক সম্মতি গ্রহণ করা, মধ্য মেয়াদি বাজেট কাঠামোর (এমটিবিএফ) সিলিং অনুসরণ না করা এবং বৈদেশিক ঋণপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলোতে উন্নয়নসহযোগী সংস্থার নানা শর্ত পালন।

এছাড়া উন্নয়ন প্রস্তাবে উল্লেখিত কর্মপরিকল্পনা এবং ক্রয় পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন না করা। পূর্ণকালীন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ না দেয়া, মাঠ পর্যায়ে প্রণয়ন ও বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা, ফার্ম নিয়োগে বিভিন্ন আইনগত জটিলতা, আউট সোর্সিংয়ে ফার্ম, জনবল ও প্রকল্প ব্যবস্থাপনার মধ্যে সমন্বয়ে সমস্যা, ক্রয়সংক্রান্ত কাজে সমন্বয়হীনতা।

আরও চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, প্র্রকল্প সমাপ্তির তিন মাসের মধ্যে সমাপ্তি প্রতিবেদন (পিসিআর) আইএমইডিতে না পাঠানো, প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়িত কার্যক্রম শেষে পরিচালনার জন্য রাজস্ব বাজেটের অপ্রতুলতা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সমাপ্ত প্রকল্পের আওতায় সৃষ্ট অবকাঠামো এবং সংগৃহীত যন্ত্রপাতি যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ না করা।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে