করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় আড়াই লাখ মা ও শিশু ১০ ধরনের টিকা নেয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এপ্রিল ও মে ২ মাসে তারা কোনো টিকা পাননি। এতে ১০টি রোগের প্রকোপ বাড়তে পারে।
এগুলো হচ্ছে- যক্ষ্মা, ডিফথেরিয়া, হুপিং কাশি, মা ও নবজাতকের ধনুষ্টংকার, হেপাটাইটিস-বি, হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি, নিউমোনিয়া, পোলিও মাইলাইটিস, হাম ও রুবেলা। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, ঝরে পড়া মা-শিশুর টিকা পর্যায়ক্রমে পরে দিলেও অসুবিধা হবে না। ইতোমধ্যে সে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
শিশু চিকিৎসকরা বলছেন, শূন্য থেকে ১৮ মাস বয়সী সব শিশু এবং ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী সন্তান ধারণক্ষম সব নারীকে প্রয়োজনীয় টিকা নিতে হয়। টিকার ডোজ পুরোটা দিলে মা-শিশু নিরাপদ থাকে। যদি তিনটি ডোজের দুটি সম্পন্ন হওয়ার পর একটা বাদ পড়ে খুব বড় সমস্যা হবে না। তবে দ্রুত সেই টিকা গ্রহণ করাটা ভালো।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, টিকা না দেয়ার সময়টা দীর্ঘ হলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ত। ইতোমধ্যে আমরা প্রত্যেকটা টিকাদান কেন্দ্র চালু করেছি। ভয় পাওয়ার কিছু নেই, যারা গত ২ মাসে শিশুদের টিকা দেননি তারা পরেও দিতে পারবেন। বাদ পড়াদের সংখ্যাটি মোট মা ও শিশুর ১৫-২০ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, এপ্রিল ও মে মাসে টিকাদান প্রক্রিয়া থেকে ঝরে পড়েছে প্রায় ২ থেকে আড়াই লাখ মা এবং শিশু। অর্থাৎ স্বাভাবিক সময় ৯৫ থেকে ৯৮ শতাংশ মা-শিশুকে টিকা দেয়া সম্ভব হতো। করোনার কারণে গত ২ মাসে তা ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মা, শিশু ও কৈশোর স্বাস্থ্য কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর মো. শামসুল হক মত ও পথকে বলেন, টিকাদান কর্মসূচির কিছুটা ছন্দপতন ঘটেছে। সেটার বাস্তব কারণও আছে। তা হলো করোনাভাইরাস। সে কারণে টিকাদান টার্গেটের ১০ শতাংশ কমেছে। যদি টিকা কর্মসূচি ভেঙে পড়ে তাহলে নিউমোনিয়া হামের মতো রোগগুলোর কারণে শিশুমৃত্যু বাড়বে। কিন্তু সেটা তখনই ভয়ের হতো যখন বছরের পর বছর টিকা দেয়া সম্ভব না হতো। আমাদের ক্ষেত্রে তা হয়নি। এপ্রিল-মে এ ২ মাসে প্রায় আড়াই লাখ শিশু নিয়মিত টিকা পায়নি কিন্তু চলতি মাসে তা আবারও চালু করা গেছে।
তিনি আরও বলেন, দুই মাসে যেসব শিশু বাদ পড়েছে তাদের তালিকা আছে।
মাকে সচেতন হতে হবে উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এ পরিচালক বলেন, অনেকে ঢাকা শহর ছেড়ে চলে গেছেন। তারা চলে যাওয়ার সময় টিকার কাগজটিও হয়তো নিয়ে যাননি। ফলে তারা ফিরে এলেই আবারও তাদের নিয়মিত করে নেয়া যাবে। কেন্দ্রের পরামর্শকদের কাছে গেলেই সেটি সম্ভব হবে। তিনি বলেন, আমাদের ভ্যাকসিনের কমতি নেই। আগামী ৩ মাসের স্টক আছে।
জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) বলছে, শুধু এপ্রিলে নিয়মিত টিকাদান থেকে প্রায় অর্ধেক শিশু বাদ পড়ে। করোনা প্রতিরোধে দেয়া সাধারণ ছুটির সময় বাসায় অবরুদ্ধ থাকার কারণে শিশুরা টিকা পায়নি। ইউনিসেফের হিসেবে এপ্রিলে প্রায় ১ লাখ ৪১ হাজার মা-শিশু টিকা পায়নি। মে মাসেও টিকা বঞ্চিতের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে। সরকারি হিসাবের চেয়ে ইউনিসেফের হিসাবের পার্থক্য আছে।
আতিকুল তালেব নামের একজন অভিভাবক মত ও পথকে বলেন, বাচ্চাকে আগে নিয়মিত টিকা দিয়েছি। করোনা আসার পর আপাতত বন্ধ। ঝুঁকি নিতে চাই না।
টিকা কেন্দ্রগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২ মাসে অনেক মা-শিশু টিকা নেয়ার ধারাবাহিকতা থেকে ঝরে গেছে। আবার অনেক শিশুর পরিবার এলাকা ত্যাগ করায় তাদের কেন্দ্র পরিবর্তন হয়েছে। এ সময় নিয়মিত টিকা নেয়া মা-শিশু যেমন কমেছে তেমনই নতুন শিশু যুক্ত হয়েছে। স্থান পরিবর্তনসহ বেশকিছু কারণে শিশুরা নিয়মিত যে কেন্দ্রে টিকা নিত সেখানে যেতে পারেনি।
রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের মেরী স্টপসের জীবন কুমার সাহা বলেন, করোনার শুরুর দিকে টিকা দেয়ার কাজ কিছুটা ব্যাহত হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে তা স্বাভাবিক হয়ে গেছে।
গ্রিনরোডের সূর্যের হাসি ক্লিনিকের ব্যবস্থাপক মাহবুবা শারমীন বলেন, আমরা নিয়মিত খোলা রাখলেও টিকা নিতে আসেননি অনেকে। এ পিছিয়ে পড়াদের তালিকা আছে। এখন তারা চাইলেই কেন্দ্রে এসে টিকাটা নিয়ে নিতে পারবেন।
শিশু চিকিৎসক রকিবুল ইসলাম বলেন, নির্ধারিত তারিখের আগে শিশুর টিকা নেয়া যায় না। কেউ বাদ পড়লে পরবর্তী মাসে যে কোনো সময় তাকে টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
সূত্রমতে, শিশুর জন্মের ১৫ মাসের মধ্যে প্রয়োজনীয় টিকাগুলোর পুরো কোর্স শেষ করতে হয়। টিকার একটি কার্ড থাকে, যাতে যে টিকা দেয়া হলো এবং ভবিষ্যতে দেয়া হবে, তার সম্ভাব্য তারিখ উল্লেখ করা থাকে।