বিদায়ী ডিজির বিচার ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চান মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
ফাইল ছবি

নানা অভিযোগ ও সমালোচনার মুখে সদ্য পদত্যাগ করা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদের বিচার চাইলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একইসঙ্গে তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকেরও পদত্যাগ দাবি করেছেন।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই দাবি করেন।

universel cardiac hospital

গত মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদ থেকে সরে দাঁড়াতে জনপ্রশাসন সচিবের কাছে পদত্যাগপত্র দেন আবুল কালাম আজাদ। বৃহস্পতিবার তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এই খবর গণমাধ্যমে আসার আগে কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।

মির্জা ফখরুল বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রিজাইন করেছেন এবং শোনা যাচ্ছে যে, তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হবে। আসলে তাকে তো বরখাস্ত করা উচিত ছিল। শুধু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকই নন, এর সঙ্গে যারা যারা জড়িত আছেন, ভুল তথ্য দিয়েছেন জনগণকে, তার দায়-দায়িত্ব অবশ্যই সরকারের ওপরে বর্তায়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা মনে করি, এখানে শুধু মহাপরিচালকের রেজিগনেশন নয়, মহাপরিচালকের বিচার এবং একই সঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত দুর্নীতি-অব্যবস্থাপনার চিত্র তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা এত চরমে পৌঁছেছে যে, অধিকাংশ কোভিড হাসপাতালের লাইসেন্সের মেয়াদ নেই বলে জানা গেছে। করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই দুর্নীতি শুরু হয়েছে। সরকারের আর্শিবাদপুষ্টদের কাছে করোনা যেন আর্শিবাদরূপে আবির্ভাব হয়েছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী যেমন পিপিই, মাস্ক, ঔষধ সরবরাহ দিয়ে শুরু বলা যায়।

মির্জা ফখরুল বলেন, এসব অনিয়ম কর্তৃপক্ষের এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ কি আদৌ আছে? করোনাকালেও স্বাস্থ্যসুরক্ষার সামগ্রীর কেনাকাটায় দুর্নীতি চরমে। এর দায় সরকার এড়াতে পারে না। করোনা মহামারির এই সংকটকালে পুরো জাতি যখন ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন, যখন প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে, যখন সরকারি হিসাব মতেই দৈনিক প্রায় ৪০ জন করে করোনা রোগী মারা যাচ্ছেন, তখন স্বাস্থ্য খাতের অব্যবস্থাপনা ও দায়িত্বহীনতা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধের শামিল। স্বাস্থ্য খাতের জবাবদিহিতাহীন দুর্নীতির দায় সরকারেরই বহন করতে হবে।

রিজেন্ট হাসপাতালের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে ফখরুল বলেন, ২০১৪ সাল থেকেই রিজেন্ট হাসপাতালের লাইসেন্স অবৈধ জানা সত্ত্বেও হাসপাতালটিতে করোনা টেস্ট ও চিকিৎসার জন্য সরকার কীভাবে চুক্তি করল? ওই চুক্তি অনুষ্ঠানে খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য সচিবসহ কয়েকজন সচিব এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ আরও অনেকে উপস্থিতি ছিলেন বলে আমরা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে দেখতে পেরেছি। এই ধরনের চুক্তি সই অনুষ্ঠানে মন্ত্রীর উপস্থিত থাকার প্রটোকল নেই।

রিজেন্ট হাসপাতালের কর্ণধার মোহাম্মদ সাহেদের হাত অনেক লম্বা উল্লেখ করে তার গ্রেপ্তার নিয়ে নাটক করা হয়েছে মন্তব্য করেন ফখরুল।

করোনাকালে দলের কার্যকমের কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সীমিত সাধ্য ও ক্ষমতার মধ্য দিয়ে বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠন, সহযোগী সংগঠনগুলো করোনা মোকাবেলার জন্য মাঠে আছে এবং তারা যথেষ্ট কাজও করেছে। এখন পর্যন্ত বিএনপি ত্রাণ বিতরণ করেছে ৫৮ লাখ ৫৭ হাজার ২৮০ পরিবারের মাঝে। এর সঙ্গে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন, ড্যাব করোনার শুরু থেকে জনসচেতনতামূলকসহ চিকিৎসা সেবার কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলসহ অঙ্গ-সহযোগীগুলো ত্রাণের কাজ করে যাচ্ছে।

করোনাভাইরাস সম্পর্কিত জাতীয় পর্যবেক্ষণ কমিটির সমন্বয়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ফরহাদ হালিম ডোনার, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ড্যাবের হারুন আল রশিদ, আবদুস সালাম, সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, যুবদলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল ও ছাত্রদলের ইকবাল হোসেন শ্যামল ভার্চুয়াল এই সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত ছিলেন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে