সরকারে পরিবারের শক্তি বাড়ালেন শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট

শ্রীলংকা প্রতিনিধি

সরকারে পরিবারের শক্তি বাড়ালেন শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট
ছবি : সংগৃহিত

শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার তিনদিনের মধ্যে পুরো মন্ত্রিসভা সাজিয়ে ফেলেছেন মাহিন্দা রাজাপাকসে। বুধবার মন্ত্রিসভার নামের তালিকা এক নজিরবিহীন গেজেটের মাধ্যমে ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে।

৫ আগস্ট নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা আরও পাকাপোক্ত করল রাজাপাকসে পরিবার। মন্ত্রিসভার তালিকা দেখে সেটি আরও স্পষ্ট হয়েছে। সরকারে রাজনৈতিক এ পরিবারের শক্তি বাড়ালেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া। তিন ভাই বড় বড় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন।

একেক ভাইয়ের হাতে তুলে দিয়েছেন দু-তিনটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। রাজনীতিতে নতুন পা রাখা ভাতিজারাও ঠাঁই পেয়েছেন মন্ত্রিসভায়।

বুধবার ক্যান্ডির শ্রী দালাদা মালিগাওয়া মন্দিরের ঐতিহাসিক মাগুল মাদুয়া কনভেনশন হলে শপথ নেন নতুন মন্ত্রীরা। খবর এএফপি ও ফরেন পলিসির।

এদিন ২৮টি মন্ত্রণালয়ের ২৬ জন মন্ত্রী ও ৪০ জন প্রতিমন্ত্রী শপথ নিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া নিজের কব্জায় রেখেছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে। ভাই মাহিন্দাকে প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি দিয়েছেন তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়। সেগুলো হল- অর্থ, নগর উন্নয়ন ও আবাসন এবং ধর্ম ও সাংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।

মাহিন্দার শাসনামলে বড় ভাই চমল রাজাপাকসে স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এবার তাকে দেয়া হয়েছে সেচ মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে তিনি ইন্টারনাল সিকিউরিটি, হোম অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ডিজেসটার ম্যানেজমেন্টের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন।

ভাতিজা অর্থাৎ মাহিন্দার বড় ছেলে নমল রাজাপাকসেকে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া। আরেক ভাতিজা অর্থাৎ চমল রাজাপাকসের ছেলে শশীন্দ্র রাজাপাকসেকে দেয়া হয়েছে ধান, শস্য ও শাকসবজি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব।

দুই দশক ধরে শ্রীলংকার শাসন ক্ষমতায় রয়েছে রাজাপাকসে পরিবার। এর আগে ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ছিলেন মাহিন্দা। ২০০২ থেকে ২০০৪ সাল এবং ২০১৮ থেকে ২০১৯ সাল মেয়াদে বিরোধী নেতা ছিলেন তিনি। এবার পুরো সরকারে জেঁকে বসেছে এ পরিবার।

৩৪ বছর বয়সী যুব রাজনীতিবিদ নমল রাজাপাকসে এ পরিবারের পরবর্তী উত্তরসূরি হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দার আরও দুই ছেলে থাকলেও তারা রাজনীতিতে সক্রিয় নন। তাদের একজন ইয়োশিতা রাজাপাকসে নৌবাহিনীর সদস্য ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব।

ছোট ছেলে রোহিতা রাজাপাকসে মহাকাশ ইঞ্জিনিয়ার। চমল রাজাপাকসের ছেলে শশীন্দ্র ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ইউভা প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। সেসময় ক্ষমতায় ছিলেন তার মেজো চাচা মাহিন্দা।

শ্রীলংকার পুরো ক্ষমতা এখন রাজাপাকসে পরিবারের হাতে। এ পরিবারটি দেশটির রাজনীতিতে অতি প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত।

মূলত সিংহলিজ বুদ্ধিস্ট ন্যাশনালিস্ট পার্টির হাত ধরে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু হয় তাদের। গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বড় জয় পান গোতাবায়া রাজাপাকসে।

এরপর গত ৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয় দেশটির পার্লামেন্ট নির্বাচন। এবারের নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ আসনে বড় ব্যবধানে জয়ী হয়েছে রাজাপাকসে পরিবার। দেশটির সাংবিধানিক পরিবর্তনের জন্য এই ‘নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা’ প্রয়োজন ছিল।

বিজয়ী দল শ্রীলংকা পিপল’স ফ্রন্টকে (এসএলপিপি) সরকার গঠনের জন্য আহ্বানও জানানোর পর আবারও প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হওয়ার সুযোগ পান মাহিন্দা।

এর মধ্য দিয়ে শ্রীলংকার মূল শাসন ক্ষমতা রাজাপাকসে পরিবারের হাতেই থেকে গেল। গত নভেম্বর মাসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন মাহিন্দা। তবে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা তার ছিল না। এজন্য এ নির্বাচনের দিকেই নজর ছিল তাদের।

রাজাপাকসে ভাইদের দল পার্লামেন্টের মোট ২২৫টি আসনের মধ্যে ১২৫টিতে জয় পেয়েছে। আরও পাঁচটিতে জয় পেয়েছে তাদের মিত্র দলগুলো। এবারের নির্বাচনে মাহিন্দার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী রানিল বিক্রমাসিংহে। তবে নির্বাচনে একেবারে ধরাশায়ী হয়েছেন তিনি।

মাত্র একটি আসনে জয় পেয়েছে বিক্রমাসিংহের দল। এর আগে তাদের দখলে ছিল ১০৬টি আসন। সাবেক প্রেসিডেন্ট রণসিংহে প্রেমদাসার ছেলে এবারই প্রথম নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তার দলই পার্লামেন্টে প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা পেতে যাচ্ছে।

তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো রাজাপাকসে ভাইদের ক্ষমতায় আসার বিষয়টি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছে। এর আগে শেষবার তারা যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন ব্যাপক আকারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে বলে তারা অভিযোগ করছেন।

২০০৯ সালে বিচ্ছিন্নতাবাদী তামিল টাইগারদের (এলটিটিই) পরাজয়ের পেছনে অন্যতম প্রধান ভূমিকা ছিল দুই রাজাপাকসে ভাইয়ের। বলা হয়, কয়েক দশক ধরে চলা শ্রীলংকার ওই গৃহযুদ্ধে অন্তত এক লাখ মানুষ মারা যায়। কিন্তু কোনো ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দু’জনই।

এবারের নির্বাচনের মধ্যদিয়ে তারা আবার প্রেসিডেন্সি পাওয়ারে ফিরে এসেছেন, ক্ষমতার অপব্যবহার রুখতে সংস্কারের অংশ হিসেবে যা বাতিল করেছিল আগের সরকারগুলো। এবার সংবিধানে কাঁটাছেঁড়া করবেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে