২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার খলনায়করা এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেই আছেন বলে দাবি করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
রিজভী বলেন, কোন অজানা রহস্যজনক কারণে প্রধানমন্ত্রী তাদের কথা বলেন না। ১৫ আগস্টের রক্তাক্ত ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই যারা কেবিনেট এবং সংসদ সদস্য থাকলেন তারা মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের কেবিনেট ও পার্লামেন্টে ছিলেন। এটি নতুন করে বলার আর প্রয়োজন নেই যে, আওয়ামী লীগের নেতারাই রক্তাক্ত লাশ ডিঙ্গিয়ে নতুন করে শপথের মাধ্যমে মন্ত্রিসভা গঠন করে খন্দকার মুশতাকের নেতৃত্বে।
সোমবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রিজভী।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, খন্দকার মুশতাক ১৫ আগস্ট পর্যন্ত বাকশালের মন্ত্রী ছিলেন এবং বাকশালের পার্লামেন্টেই খন্দকার মুশতাক আহমেদ রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর তার অধীনে কার্যক্রম চালাতে থাকে। খন্দকার মুশতাকের মন্ত্রিসভার শপথ পরিচালনা করেছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। ১৫ আগস্টের পর খন্দকার মুশতাকের সময়ে জাতীয় সংসদের স্পিকার এবং মন্ত্রিপরিষদের অনেক সদস্যই শেখ হাসিনার অধীনে রাজনীতি করেছেন। কিন্তু তাদেরকে কখনো খলনায়ক তিনি বলেননি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, জিয়াউর রহমান সরকারি চাকরি করতেন এইচটি ইমামের মতই। সেনাবাহিনী সরকারের একটি বিভাগ। তিনি ছিলেন সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় ব্যক্তি, প্রথম ব্যক্তি নন। যিনি সেনাবাহিনীর প্রধান তার কোনো দায় নেই, দায় নাকি জিয়াউর রহমানের! তৎকালীন সেনাপ্রধান শফিউল্লাহর হাতেই ছিল সমগ্র সেনাবাহিনীর কমান্ড। অথচ আওয়ামী লীগের এমপি হওয়ার কারণে তিনি অভিযুক্ত নন। কারণ যে যত অপরাধই করুক শেখ হাসিনার আনুগত্য করলে তার সাত খুন মাফ। ১৫ আগস্টের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নিজেরাই জড়িত তা দিবালোকের মতো যেমন সত্য ঠিক তেমনিই সুপরিকল্পিতভাবে ২১ আগস্টের সঙ্গেও আওয়ামী লীগের আপনজনরা জড়িত। ২১ আগস্টে বোমা হামলার পূর্বাপর ঘটনা পরম্পরাতে তা সুস্পষ্ট। অসংখ্য উদাহরণের মধ্যে একটি উদাহরণ হচ্ছে- মুক্তাঙ্গন থেকে আওয়ামী কার্যালয়ে কেন তারা সভা স্থানান্তর করেছিলেন সেই রহস্য সম্পর্কে তারা নির্বিকার থাকেন।
রিজভী বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই আওয়ামী বিরোধীদের নিশ্চিহ্ন করার রক্তাক্ত কর্মসূচি গ্রহণের উদাহরণ একমাত্র আওয়ামী সরকারের। বাম নেতা ও প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ সিকদারসহ সেই সরকারের আমলেই জাসদ ও বাম সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যার মধ্য দিয়ে খুনের রাজনীতির ঐতিহ্য তৈরি করে আওয়ামী লীগ। এরপরে যতবারই তারা ক্ষমতায় আসছেন ততবারই পুলিশের কাস্টডিতে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের খুনসহ মিছিলে-জনসভায় আক্রমণ করে খুন করার নজির একমাত্র আওয়ামী লীগের। আর এবারের ১২ বছরের দুশাসনের সীমাহীন লুটপাট-টাকা পাচার-ব্যাংক লোপাটের পাশাপাশি বিচার-বহির্ভূত হত্যা ও গুমের সমর্থক শব্দ হয়েছে আওয়ামী লীগ। বেপরোয়া দুর্নীতি আওয়ামী লীগের অলিখিত দলীয় ইশতেহার। গণতন্ত্রকে কবরের মধ্যে ঢুকিয়ে জনগণকে বশ মানাতে রক্তাক্ত বল প্রয়োগের জন্য হুকুম প্রতিনিয়ত উচ্চারিত হয় আওয়ামী মন্ত্রীদের মুখ থেকে।
রিজভী আরও বলেন, সরকারের আত্মম্ভরি ও বাধ্যকরণের নীতির কারণ হচ্ছে সব সেক্টরে তারা ব্যর্থ হয়েছে নিদারুণভাবে। অর্থনীতি অধোগতি, করোনা মোকাবেলায় ব্যর্থতা, হাসপাতালে করোনা রোগীর চিকিৎসা না থাকা, আইসিইউ এর অভাব, নমুনা পরীক্ষার দীর্ঘসূত্রতা, ফল পাওয়ার আগেই রোগীর মৃত্যুসহ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বিপর্যয়, মৃত্যু ও রোগাক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি, ধ্বংশপ্রাপ্ত শিক্ষা, মানুষের জীবনের নিরাপত্তাহীনতা, কর্মসংস্থানের অভাব, লক্ষ লক্ষ বেকার, দুর্নীতি, টাকা পাচার, ভৌতিক বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস, সুপেয় বিশুদ্ধ পানির অভাব ও মূল্যবৃদ্ধি, আইন ও বিচার বিভাগকে হস্তগত করা, ক্যাসিনো, ভয়ঙ্কর সামাজিক অবক্ষয়, নারী-শিশু নির্যাতন ও ক্রসফায়ারের জন্য এক মনুষত্ব্যহীন বর্বর চেহারা ফুটে উঠেছে বাংলাদেশের।
সরকার ‘কোড অব সাইলেন্স’ নীতি অবলম্বন করে বিরোধী মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সম্পূর্ণরূপে হরণ করে গণমাধ্যকে কব্জায় নিয়ে ক্রমাণয়ে ফ্যাসিবাদের অবয়ব চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানসহ বিএনপির বিরুদ্ধে অকপট বানোয়াট মিথ্যা কথা প্রচার করে যাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন রিজভী।