‘লকডাউনে ৯৬ শতাংশ পরিবারের আয় কমেছে’

ডেস্ক রিপোর্ট

লকডাউন
প্রতীকী ছবি

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর’বি) ও অস্ট্রেলিয়ার ওয়াল্টার এলিজা হল ইন্সটিটিউটের এক যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে দেওয়া লকডাউনের কারণে ৯৬ শতাংশ পরিবারের গড় মাসিক উপার্জন কমে গেছে। নিজেদের অর্থনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল মনে করছেন ৯১ শতাংশ মানুষ। ৪৭ শতাংশ পরিবারের আয় এসময় আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গিয়েছিল। ৭০ শতাংশ পরিবার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং ১৫ শতাংশ খাদ্য সংকট, অভুক্ত অবস্থায় অথবা কোনো এক বেলা আহার না করে ছিলেন।

আইসিডিডিআর’বি এবং অস্ট্রেলিয়ার ওয়াল্টার এলিজা হল ইন্সটিটিউট (WEHI) গবেষক দল যৌথভাবে বাংলাদেশের গ্রামীণ মহিলা ও তাদের পরিবারের ওপর কোভিড-১৯ বৈশ্বিক অতিমারী এবং এর কারণে আরোপিত ঘরে থাকার নির্দেশের প্রভাব পর্যবেক্ষণ করে এসব তথ্য পেয়েছেন। চলতি বছরের মার্চের শেষ দিক থেকে মে মাস পর্যন্ত লকডাউনে সময়কালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার রূপগঞ্জ, ভুলতা ও গোলাকান্দাইল ইউনিয়নে ২ হাজার ৪২৪ পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা, খাদ্য নিরাপত্তা, মানসিক স্বাস্থ্য এবং পারিবারিক নির্যাতনের ওপর এ গবেষণা করা হয়।

universel cardiac hospital

বুধবার আইসিডিডিআর’বি আনুষ্ঠানিকভাবে এ গবেষণার ফল প্রকাশ করে। গবেষণাটির অর্থায়ন করেছে ‘অস্ট্রেলিয়া ন্যাশনাল হেলথ অ্যান্ড মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল।’ অস্ট্রেলিয়ার দোহার্টি ইন্সটিটিউট ও মোনাস ইউনিভার্সিটির অংশীদারিত্বে এটি পরিচালিত হয়।

গবেষণায় বলা হয়, লকডাউনের কারণে দেশের নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো বিশেষত নারীর অর্থনৈতিক দুরাবস্থা, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা,পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাদের মানসিক স্বাস্থ্য হুমকির মুখোমুখি হয়েছে। ঘরে থাকার নির্দেশের কারণে বাংলাদেশের নিম্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থায় থাকা পরিবারগুলোতে অর্থনৈতিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ব্যাহত হয়েছে। নারীদের ওপর স্বামী ও ঘনিষ্ঠ সঙ্গীর নির্যাতনের মাত্রা বেড়েছে।

মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর লকডাউনের বিশেষ প্রভাবের তথ্য তুলে ধরে গবেষণায় বলা হয়, নারীদের মধ্যে হতাশা বেড়েছে এবং ৬৮ শতাংশ অংশগ্রহণকারী মনে করেন তাদের দুশ্চিন্তার প্রবণতা বেড়ে গিয়েছে। উদ্বেগের বিষয়, নারীদের মধ্যে যারা আগে থেকেই স্বামী ও ঘনিষ্ঠ সঙ্গীর নির্যাতনের শিকার হতেন, তাদের অর্ধেকের বেশি জানিয়েছেন, লকডাউনের সময় তা আরও বেড়েছে।

আইসিডিডিআর’বির মা ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের ইমিরেটাস বিজ্ঞানী ডা. জেনা দেরাকসানী হামাদানি এই গবেষণার প্রধান ছিলেন। তিনি বলেন, গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের গ্রামীণ নারীদের এবং তাদের পরিবারের ওপর কোভিড -১৯-এর প্রাথমিক পর্যায়ে ঘরে থাকার নির্দেশাবলীর প্রভাব জানা। এই গবেষণার ফলাফল বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের নীতিনির্ধারকদের জন্য গরিব ও নারীবান্ধব লকডাউন বা ঘরে থাকার নির্দেশ বাস্তবায়ন করার উপযোগী কার্যক্রম প্রণয়নে সহায়তা করবে। এ প্রতিবেদন অতিমারীর ফলে বৈশ্বিক খাদ্য ও পুষ্টির বিপর্যয় নির্ণয়ের মডেল তৈরিতে সহায়ক হবে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে