কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের গুলিতে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহতের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রত্যাশা করেছেন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। তিনি বলেছেন, যারা ক্রিমিনাল তাদের উপযুক্ত এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা সেনাবাহিনীর সার্ভিং অথবা রিটায়ার্ড কারও সাথে না ঘটে। আমি সেটা প্রত্যাশা করি।
আজ বুধবার চট্টগ্রামের ভাটিয়ারিতে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান এসব কথা বলেন।
আলোচিত এই ঘটনার তদন্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে সেনাপ্রধান বলেন, যে ঘটনাটা ঘটেছে সেটা সবাই জানে। অত্যন্ত জঘন্যতম একটা ঘটনা ঘটেছে এবং সেটার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতে হবে। এটা তদন্তে বেরিয়ে আসবে এবং সাজাটা যখন হবে তাহলে সন্তুষ্টির প্রশ্ন আসবে। তার আগে সন্তুষ্টি কীভাবে বলব, বলার সুযোগ নেই।
এক প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান বলেন, আমরা যুগ যুগ ধরে দেখে আসছি কোনো ঘটনা ঘটলে কেউ না কেউ এটার আনডিউ প্রিভিলেজ নিতে চায়। এবারও অনেকে চেষ্টা করেছিল। হয়তো এখনো চেষ্টা করছে। এ ধরনের ঘটনা চলতেই থাকবে। তবে সচেতন মানুষ এগুলো বোঝে। যে একটা ঘটনা ঘটেছে…অবশ্যই অত্যন্ত নৃশংস ঘটনা, ন্যাক্কারজনক ঘটনা।
আজিজ আহমেদ বলেন, শুধু সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেই ঘৃণা জানানো হয়নি, পুলিশপ্রধানও সেদিন এসেছিলেন। তারাও সে ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে। সবাই এ ঘটনার জন্য মর্মাহত হয়েছে। এরকম একটা ঘটনাকে নিয়ে কেউ যদি অন্য কিছু করার চেষ্টা করে সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা, সেটা কাঙ্ক্ষিত নয়।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান বলেন, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সরকারের কাছে কোনো সুপারিশ দেয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। কারণ এ ঘটনার পরপরই সরকারের পক্ষ থেকে একটি যৌথ তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। এ তদন্ত টিমের প্রতি সেনাবাহিনী এবং আমি নিশ্চিত পুলিশ বাহিনীরও এ ব্যাপারে সমর্থন রয়েছে। এ তদন্ত দল যেটা উপযুক্ত মনে করবে, সেটা সুপারিশ করবে।
এর আগে সকালে চট্টগ্রামের ভাটিয়ারীতে ২৪ পদাতিক ডিভিশনের ছয়টি ইউনিটের রেজিমেন্টাল কালার প্রদান অনুষ্ঠানে যোগ দেন সেনাপ্রধান।
সেনাপ্রধান চট্টগ্রাম সেনানিবাসের ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট সেন্টার প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছলে জিওসি, আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড লে. জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ এবং ২৪ পদাতিক ডিভিশন ও চট্টগ্রামের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল এসএম মতিউর রহমান তাকে স্বাগত জানান। পরে প্যারেড কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি চৌকস দল কুচকাওয়াজ প্রদর্শনসহ সেনাপ্রধানকে সালাম প্রদান করেন।
গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক ইউনিটসমূহ কর্তৃক সেনাবাহিনী তথা দেশমাতৃকার সেবায় বিশেষ অবদানের জন্য রেজিমেন্টাল কালার প্রদান করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ সিগন্যাল ব্যাটালিয়ন, ১৮, ২০, ২১, ২২ এবং ২৩ বীর আজকের কালার প্যারেডে অংশগ্রহণ করে এবং প্রধান অতিথির কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে রেজিমেন্টাল পতাকা গ্রহণ করে।
এ সময় ভাষণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন সেনাবাহিনীর প্রধান। তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর সামরিক ঐতিহ্য অনুযায়ী যে কোনো ইউনিটের জন্য রেজিমেন্টাল কালার প্রাপ্তি অত্যন্ত গৌরবের বিষয়। সেনাপ্রধান ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের প্রতি আস্থা, পারস্পরিক বিশ্বাস, সহমর্মিতা এবং ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রেখে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সুশৃংখল, দক্ষ ও যোগ্য সেনাসদস্য হিসেবে গড়ে উঠার নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে তিনি সবাইকে পেশাদারিত্বের প্রত্যাশিত মান অর্জনের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক যেকোনো হুমকি মোকাবেলায় সদা প্রস্তুত থাকার নির্দেশ প্রদান করেন।
অনুষ্ঠানে ঊর্ধ্বতন সেনাকর্মকর্তা ও বিভিন্ন পদবির সেনাসদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।