নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় একটি মসজিদে এশার নামাজ পড়ার সময় এসি বিস্ফোরণে ইমাম মোয়াজ্জেমসহ প্রায় ৪০ জন দগ্ধ হয়েছে। তাদের দ্রুত শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে পাঠানো হয়েছে। তবে মসজিদে এসি বিস্ফোরণের ঘটনায় যাদের ভর্তি করা হয়েছে তাদের কেউ শঙ্কামুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন ইনস্টিটিউটের প্রধান সন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন।
তিনি জানান, এ পর্যন্ত ৩৮ মুসল্লিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের সবারই ডিপ বার্ন রয়েছে। তবে শতাংশের হিসেবে কোন রোগীর কতটুকু বার্ন হয়েছে তা তাৎক্ষণিক বলা যাচ্ছে না। তবে প্রাথমিকভাবে বলা যায়, কেউ শঙ্কামুক্ত নয়।
এর আগে শুক্রবার রাতে এশার নামাজ চলাকালে শহরের তল্লা বাইতুস সালাম মসজিদে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আহতদের শহরের ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল ও ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।
মসজিদ কমিটির সভাপতি গফুর মিয়া জানান, রাত ৯টায় এশার নামাজ পড়ার সময় মসজিদে থাকা ৬টি এসি বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এ সময় মসজিদের ভিতরের জানালা গুলো ভেঙ্গে চুরমার হয়ে ভিতরে বাহিরে ধোয়ায় ডেকে যায়। তখন আমি বাহিরে ছিলাম আর আমাদের মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি হান্নান মিয়া মসজিদের ভিতর নামাজে ছিল। তখন দ্রুত আমিসহ এলাকাবাসী এগিয়ে এসে মসজিদের ইমাম মাওলানা মালেক নেসারী, মোয়াজ্জেম দেলোয়ার হোসেন, হান্নান মিয়াসহ প্রায় ৪০ জনকে দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে শহরের ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করি। সেখান থেকে অনেককেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে প্রেরণ করেছে জরুরী বিভাগের চিকিৎসক।
তিনি আরও বলেন, দগ্ধদের মধ্যে অনেকেরই মুখ মণ্ডল ও শরীর ঝলসে গিয়ে চামড়া উঠে গেছে। আহতদের মধ্যে অনেকেই হাত পা কেটে প্রচুর রক্তাক্ত হয়েছে। মসজিদের ফ্লোর রক্তে ভেসে গেছে।
নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ডাক্তার নাজমুল হোসেন জানান, রাত ৯টা হতে একের পর এক রোগী আসছিল। তাদের সবার নাম লিপিবদ্ধ করা হয়নি। যেসব রোগী এসেছে তাদের ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ দগ্ধ হয়েছে। তাদের দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও জানান, হাসপাতালে ২০ থেকে ২৫ জন এসেছিল। তাদের কয়েকজনের শরীরে ৯৯ ভাগ দগ্ধ হয়েছে।
সিটি কর্পোরেশনের ১১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জমশের আলী ঝন্টু জানান, ঘটনার পর দগ্ধ রোগীরা ১০০ শয্যা হাসপাতালে আনা হলেও একজন রোগীকেও ধরে দেখা হয়নি। তারা হাসপাতালের ফ্লোরে বসিয়ে রাখা হয়। পাঠানো হয় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে।
তিনি আরও জানান, হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণের পরেই আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি ভেতরে একের পর এক লোকজন পড়ে আছে। ট্রান্সফরমারের ভেতরে থাকা গরম তেল ভেতরে পড়ে। সেখানে লোকজনের উপরে পরে। তাদের সবাই দগ্ধ হয়।
ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আসলাম হোসেন বলেন, খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারাসহ পুলিশ গিয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে বিস্তারিত বলতে পারবো।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন জানান, এশার নামাজের শেষ সময় এয়ারকন্ডিশনের গ্যাসের লিকেজ হয়ে এ বিস্ফোরণ ঘটে। মসজিদের ফ্লোরের নিচ দিয়ে এয়ারকন্ডিশনের পাইপের সংযোগ ছিল। পাইপ লিক করে বুদবুদ আকারে গ্যাস বের হচ্ছিল। দরজা জানালা বন্ধ থাকায় কেউ হয়তো ইলেকট্রিক লাইনের কোনো সুইচ চালু করতে গিয়ে বিদ্যুৎ স্পার্ক হয়ে বিস্ফোরণটি ঘটে। এ ঘটনায় অর্ধশতাধিক আহত হয় বলে জানান তিনি।
মহানগর