‘আদালত না চাইলে তদন্ত প্রতিবেদন জমা নয়’

নিজস্ব প্রতিবেদক

আসাদুজ্জামান খান কামাল
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ফাইল ছবি

পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ হত্যার ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আদালত না চাইলে জমা দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তবে কমিটির দেয়া বিভিন্ন সুপারিশ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিচার-বিশ্লেষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী।

বুধবার বিকালে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন মন্ত্রী।

universel cardiac hospital

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বন্ধ প্যাকেট নিয়ে আমাদের অতিরিক্ত (রাজনৈতিক) সচিব বসে আছেন। তার কাছে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তিনি একটি কমিটি তৈরি করে এই তদন্ত প্রতিবেদনটা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পড়বেন, দেখবেন, বিশ্লেষণ করবেন। তারপর আমাদের সচিবের সামনে তুলে ধরবেন। আমরা পরবর্তী সময়ে কী করণীয় সেটা সিদ্ধান্ত নেব। এটা কিন্তু একেবারে পরিষ্কার। আমি আবারও বলছি, যেহেতু তদন্তাধীন এবং বিচারাধীন মামলা রয়েছে সেই জন্য বিচারক যদি মনে করেন, তারা যদি চান তাহলেই আমরা এটা (তদন্ত রিপোর্ট) দেব, না হলে আমরা দিচ্ছি না। তারা যখনই চাবেন, কিংবা তারা যদি প্রয়োজন মনে করেন তাহলে দেব।

সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এই প্রতিবেদনটি একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন কীভাবে প্রকাশিত হলো-এই বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন কীভাবে প্রকাশিত হয়েছে আমার জানা নেই। এটা কতখানি সত্য, কতখানি সত্য নয় এটা আমরা এখন বলতে পারবো না। আমরা যেহেতু পড়িনি বলতে পারবো না।

তিনি আরও বলেন, যে তথ্য দিয়েছেন, যারা প্রকাশ করেছেন, আমি মনে করি কাজটা ঠিক করেননি।

তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমরা এখনো চিন্তা করছি। এটা কোর্টেও সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আমরা এখনো চিন্তা করিনি। যেহেতু প্রসঙ্গটা আসছে। আমরা অবশ্যই দেখবো এর সত্যতা কতখানি এবং কার মাধ্যমে তিনি পেয়েছেন। বিচারের আগেই তিনি কেন প্রকাশ করলেন। এটা তো আমাদের জানার বিষয় থাকবে। বিচারের আগে এটা প্রকাশ করাটা ঠিক হয়নি। আর বিচারের আগে তাদের কাছে তো চাওয়া হয়নি। কোর্ট তো আমাদের কাছে চাইবে। কোনো পত্রিকার কাছে চাইবে না। কোর্ট আমাদের কাছে চাইলে আমরা পাঠিয়ে দেব। কোর্ট চাওয়ার আগে আমি দিচ্ছি না। ভবিষ্যতে আমাদের কর্মপন্থা নির্ধারণ এবং ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে সেজন্য এই তদন্ত প্রতিবেদনটা আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখবো এবং আমাদের যে করণীয়, তারা (তদন্ত কমিটি) যে সুপারিশ করেছে সেগুলো আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তারপরে ব্যবস্থা নেব।

এর আগে সিনহা হত্যার তদন্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১ আগস্ট চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি ৬৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এর মধ্যে প্রদীপ কুমার দাশ ও পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে দীর্ঘ জেরা করে। কমিটির সদস্যরা দুই দফা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। গত সোমবার কমিটি ৮০ পৃষ্ঠার মূল প্রতিবেদনসহ ৫৮৬ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে দাখিল করে।

গত ৩১ জুলাই রাত সাড়ে নয়টায় কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের তৎকালীন কর্মকর্তা পরিদর্শক লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান। তার সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলামকে (সিফাত) পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এরপর সিনহা যেখানে ছিলেন, সেই নীলিমা রিসোর্টে ঢুকে তার ভিডিও দলের দুই সদস্য শিপ্রা দেবনাথ ও তাহসিন রিফাত নুরকে পুলিশ আটক করে। পরে নূরকে ছেড়ে দিলেও শিপ্রা ও সিফাতকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। পরে তারা জামিনে মুক্তি পান।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে