রোহিঙ্গা নিয়ে ফখরুলের বক্তব্য দুরভিসন্ধিমূলক: ওবায়দুল কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

ওবায়দুল কাদের
ওবায়দুল কাদের। ফাইল ছবি

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সরকার কূটনৈতিকভাবে ব্যর্থতা বলে অভিযুক্ত করে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দেয়া বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

মির্জা ফখরুলের বক্তব্যকে রাজনৈতিক মিথ্যাচার হিসেবে অভিহিত করে কাদের বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম সত্যকে আড়াল করে মনগড়া বক্তব্য জাতির সামনে উপস্থাপন করেছেন। রোহিঙ্গা নিয়ে তার বক্তব্য দুরভিসন্ধিমূলক।

universel cardiac hospital

গতকাল রাতে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে দলের সাধারণ সম্পাদক এসব কথা বলেন। এর আগে দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল সরকারের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং বিভিন্ন সমালোচনা করেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সরকারের মানবিক উদ্যোগ এবং কূটনৈতিক তৎপরতা জাতিসংঘসহ বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। এই সমস্যার সমাধানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কূটনৈতিক দক্ষতা ও দূরদর্শী নেতৃত্বকে স্বাগত জানিয়ে বিশ্ব গণমাধ্যম জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ অভিধায় ভূষিত করেছে। একই সাথে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশ সফর করে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার পদক্ষেপের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সফলতা যখন দৃশ্যমান তখন বিএনপি মহাসচিবের এই ধরনের বক্তব্য দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রেরই ইঙ্গিত দেয়। রোহিঙ্গা ইস্যুর শুরু থেকেই বিএনপি মিথ্যা-বিভ্রান্তকর ও ষড়যন্ত্রমূলক বক্তব্য দিয়ে আসছে। জাতি জানে, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের অবৈধ ক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়ে বিএনপি যতবার ক্ষমতায় এসেছে তাদের সময় বাংলাদেশে ‘দুর্নীতি ও নতজানু পররাষ্ট্র নীতি’ ছাড়া স্বরাষ্ট্র বা পররাষ্ট্রনীতি বলতে আদৌ কিছু ছিল না। অবশ্য, যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে তাদের কাছে রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক শিষ্ঠাচার আশা করা যায় না।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা সফলতার সাথে সরকার পরিচালনার প্রতিটি ক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন এবং বিশ্বসভায় বাংলাদেশকে একটি আত্মমর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া পররাষ্ট্রনীতির আলোকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি পরিচালিত হচ্ছে। যার কারণে বাংলাদেশ আজ অপরাপর রাষ্ট্রের সাথে সুদৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের সকল প্রকার স্বার্থ অক্ষুণ্ন ও পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান খোঁজার জন্য দ্বিপাক্ষিক-ত্রিপাক্ষিকসহ বহুপাক্ষিক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধানের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জোর দাবি তোলা হয়েছে এবং তা কার্যকর রয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতার কারণেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক আদালতের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের ওপর ব্যাপক চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের কূটনৈতিক সফলতার কারণেই করোনা প্রাদুর্ভাবের আগে বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উস্কানিমূলক ও দুরভিসন্ধিমূলক, অসত্য বক্তব্য রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করবে এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে বিনষ্ট করবে।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আজ বিশ্বের নন্দিত নেত্রী। বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা ও বিশ্বখ্যাত সাময়িকী করোনাকালে জননেত্রী শেখ হাসিনার গৃহীত পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করেছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আজ বিশ্ব নেতাদের শ্রদ্ধার পাত্র। তাই তার ৭৪তম শুভ জন্মদিনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ও চীনা কমিউনিস্ট পার্টিসহ বিশ্বের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ উষ্ণ শুভেচ্ছা-অভিনন্দন পাঠান। অপরদিকে দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার ভুয়া জন্মদিনে চীনা দূতাবাসের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানিয়েও তা প্রত্যাখ্যান করা হয়। বিএনপির রাজনীতি খালেদা জিয়ার ভুয়া জন্মদিনের মতোই মিথ্যা, শঠতা আর ষড়যন্ত্রে ভরপুর।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিশ্ব পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মর্যাদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। সফল রাষ্ট্রনায়ক জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বন্ধু রাষ্ট্রসমূহের সাথে সুসম্পর্ক আরও শক্তিশালী হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের সাথে বাংলাদেশের বিদ্যমান সুসম্পর্কই বিএনপির গাত্রদাহের কারণ। কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত ও দূরভিসন্ধিমূলক বক্তব্যের মাধ্যমে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পুনরায় বিএনপির রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের প্রমাণ দিয়েছেন।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, বিএনপি মহাসচিবের মিথ্যাচারপূর্ণ বক্তব্যে জাতি হতাশ হয়েছে। তাদের কথা শুনে মনে হয়েছে বিএনপি রোহিঙ্গা সংকটের কোনো প্রকার সমাধান চায় না। জাতি জানতে চায়, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বিএনপি কী কী ভূমিকা রেখেছে? নিজেদের দুর্নীতিবাজ নেতাদের রক্ষার চেষ্টা ছাড়া আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের স্বার্থরক্ষা ও মর্যাদা বৃদ্ধিতে তাদের ভূমিকা কী?

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে