চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) স্থগিত নির্বাচন ঘিরে ভোটের লড়াইয়ে আবারও সরব হয়ে উঠেছেন দুই মেয়র প্রার্থী আওয়ামী লীগের এম রেজাউল করিম চৌধুরী ও বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেন। দু’জনই নানা কর্মসূচির মাধ্যমে ওয়ার্ড পর্যায়ের কর্মী বাহিনীকে চাঙ্গা করে তুলতে মাঠে সক্রিয়। তাদের তৎপরতায় নগরীতে আবারও ফিরেছে নির্বাচনী আমেজ।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেজাউল প্রতিদিনই কোনো না কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার ডাক দিচ্ছেন। পাশাপাশি আহ্বান জানাচ্ছেন আসন্ন চসিক নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করার। তার পক্ষে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে কথা বলছেন নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন।
এদিকে রেজাউলের চেয়ে প্রস্তুতিতে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও বিএনপি প্রার্থী ডা. শাহাদাতও ভোটের লড়াইয়ে ফিরে এসেছেন। তিনিও ইউনিট পর্যায়ে ছোট ছোট সভা-সমাবেশের মাধ্যমে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড শুরু করতে যাচ্ছেন। তবে তার নির্বাচনী প্রস্তুতিতে বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে মামলা। নগর বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূলের কর্মীদের বিরুদ্ধে নাশকতাসহ বিভিন্ন অভিযোগে রয়েছে কয়েকশ’ মামলা। কেবল মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাতের বিরুদ্ধেই মামলা আছে ৫১টি। এসব মামলায় হাজিরা দিতে দিতেই দিন কাটে নেতাকর্মীদের। পাশাপাশি সরকারি দলের প্রার্থী সভা-সমাবেশ করতে যে সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন, বিএনপি প্রার্থী হিসেবে তা পাচ্ছেন না বলে মনে করছেন ডা. শাহাদাত। এ কারণে বিএনপি পুরোদমে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে পারছে না বলে জানান তিনি।
গত ২৯ মার্চ চসিক নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে ভোটের সপ্তাহখানেক আগে ২১ মার্চ তা স্থগিত করা হয়। পরে ৪ আগস্ট চসিকের প্রশাসক পদে নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজনকে নিয়োগ দেয় সরকার। ৬ মাসের জন্য তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে চলে গেছে প্রায় ২ মাস। বর্তমান প্রশাসকের মেয়াদ শেষে ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করতে পারে নির্বাচন কমিশন। সেক্ষেত্রে বর্তমান প্রার্থীরাই বহাল থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্থগিত হওয়া চসিক নির্বাচনে মেয়র পদে ৭ জন প্রার্থী ছিলেন। এছাড়া সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ছিলেন ২৬৯ প্রার্থী।
দলীয় সূত্র জানায়, ১ অক্টোবর থেকে নগর আওয়ামী লীগ ওয়ার্ড পর্যায়ে সভার মাধ্যমে তৃণমূল গোছানোর কাজ শুরু করেছে। এদিন ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের তিনটি ইউনিটের কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন ও যুগ্ম সম্পাদক এবং মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী।
এতে মেয়র প্রার্থী রেজাউল বলেন, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ। তবে উপরিস্তরে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা আছে। কিন্তু তৃণমূল স্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো বিভেদ ও বিরোধ নেই। তারা চান মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ভিত্তি সুদৃঢ় হোক। তাই আমি আশা করি, এই তৃণমূল স্তরের নেতাকর্মীরাই চসিক নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের বিজয় সুনিশ্চিত করবে।
সভায় মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দীন আসন্ন চসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে জেতাতে নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
এর আগে রেজাউল করিম চৌধুরী ওয়ার্ড পর্যায়ে কেন্দ্রভিত্তিক দলীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সঙ্গে মতবিনিময় শুরু করেন। তিনি এরইমধ্যে ৫ নম্বর মোহরা ওয়ার্ডসহ কয়েকটি ওয়ার্ডে কেন্দ্র কমিটির সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন।
চসিক নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপিও প্রতিটি ওয়ার্ডে শিগগরিই ইউনিট পর্যায়ে সভা-সমাবেশ শুরু করতে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী এবং ওষুধ বিতরণ কার্যক্রমের সঙ্গে ছোট ছোট সভার মাধ্যমে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে নগর বিএনপি সভাপতি ও মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, আমরা মতবিনিময় সভার জন্য পুলিশের কাছে অনুমতি চেয়েছি। এ বিষয়ে মৌখিক সম্মতি পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, সমস্যা হচ্ছে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মতবিনিময় করতে চাইলে অনুমতি লাগে না। আমাদের তা নিতে হয়। এজন্য আমরা সমান সুযোগ পাচ্ছি না। এছাড়া শত শত ‘গায়েবি’ মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। এসব প্রতিবন্ধকতার মধ্যেই আমাকে নিতে হচ্ছে ভোটের প্রস্তুতি।
শাহাদাত জানান, তার বিরুদ্ধে মামলা আছে ৫১টি। এর মধ্যে নতুন ধারা যুক্ত হওয়ায় আরও ১৬টি মামলা যোগ হতে পারে। শুধু চলতি মাসেই তাকে ৩০টি মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে হবে।