মার্কিন নির্বাচন : ভাইস প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে কমলার কাছে মাইকের হার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

মার্কিন নির্বাচনে ভাইস প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্ক

মার্কিন নির্বাচনে ভাইস প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের কাছে রিপাবলিকান প্রার্থী মাইক পেন্স হেরে গেছেন। করোনা ভাইরাস মহামারী ইস্যুতে পেন্সকে ঘায়েল করেন কমলা হ্যারিস।

স্বাস্থ্যব্যবস্থা, জলবায়ু পরিবর্তন, বর্ণবাদ, বাণিজ্যযুদ্ধ, ডোনাল্ড ট্রাম্পের আয়কর, গর্ভপাত, বিচারপতি নিয়োগ ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে দু’জনের মধ্যে বিতর্ক হয়।

universel cardiac hospital

সিএনএনের জরিপে দেখা গেছে, বিতর্কে কমলা হ্যারিস জয়ী হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ৬৩ শতাংশ এবং মাইক পেন্স পেয়েছেন ৪১ শতাংশ ভোট। এবিসির জরিপেও কমলা জয়ী হয়েছেন। এই জরিপে কমলা হ্যারিস পেয়েছেন ৫১ শতাংশ ও মাইক পেন্স ৪১ শতাংশ।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর প্রথম প্রেসিডেন্ট বিতর্কের ঠিক উল্টোচিত্র ছিল ভাইস প্রেসিডেন্ট বিতর্কে। প্রেসিডেন্ট বিতর্ক যতটা বিশৃঙ্খল ছিল ততটাই শান্ত ও সুশৃঙ্খল ছিল ভাইস প্রেসিডেন্ট বিতর্ক। ট্রাম্প করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর বাড়তি সতর্কতার জন্য বুধবারের ভাইস প্রেসিডেন্ট পর্যায়ের বিতর্কে দুই প্রার্থীর মাঝে স্বচ্ছ প্লাস্টিকের দেয়াল তুলে দেয়া হয়।

নব্বই মিনিটের বিতর্কে রিপাবলিকান প্রার্থী মাইক পেন্সকে যেমন আত্মবিশ্বাসী দেখা গেছে, তেমনি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস ছিলেন সপ্রতিভ। তারা দু’জনই বিতর্কের বড় একটা অংশজুড়ে ট্রাম্প ও বাইডেনকে নিয়ে কথা বলেছেন।

কমলা অভিযোগ করেছেন বেশি আর রিপাবলিকান মাইক পেন্স ডেমোক্র্যাটদের নীতির সমালোচনার পাশাপাশি অভিযোগ খণ্ডনের প্রয়াস পেয়েছেন। বিতর্কের প্রথম বিষয় ছিল করোনাভাইরাস। মহামারী ঠেকাতে সরাসরি ট্রাম্প প্রশাসনের ব্যর্থতার অভিযোগ আনেন কমলা।

আর যুক্তরাষ্ট্রে করোনা টাস্কফোর্সের প্রধান ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেন, তারা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমদিন থেকেই জনগণের স্বাস্থ্যকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের কারণে বেশি মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। কোভিড মহামারী নিয়ে প্রেসিডেন্ট সব সময় সঠিক তথ্য দিয়ে এসেছেন।

তবে কমলা হ্যারিসের মতে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মার্কিন প্রশাসনের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস কতটা বিপজ্জনক, তা জেনেও ট্রাম্প প্রশাসন এটা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছে। মুখোমুখি বিতর্কে দুই প্রার্থীই তাদের পরিকল্পনা ও কর্মসূচি তুলে ধরেন। ট্রাম্পের রানিং মেট ও বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ট্রাম্প প্রশাসনের সাফল্যের বর্ণনা দেন। অন্যদিকে ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস সরকারের নানা ব্যর্থতার খতিয়ান তুলে ধরেন।

কমলা হ্যারিস বলেন, করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণ করতে না পারাই ট্রাম্প প্রশাসনের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। তবে মাইক পেন্সের দাবি, করোনা নিয়ন্ত্রণে ট্রাম্প প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে যুক্তরাষ্ট্রে এটি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করত। ২০২০ সাল শেষ হওয়ার আগেই জনগণের জন্য করোনার টিকার ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দেন মাইক পেন্স।

বিতর্ক অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ইউএসএ টুডে-র সাংবাদিক সুসান পেজ ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের কাছে জানতে চান, অন্যান্য দেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃত্যু সবচেয়ে বেশি কেন? এমনকি প্রতিবেশী কানাডার চেয়েও এ সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি হওয়ার কারণ কী?

উত্তরে ট্রাম্পের করোনা ভাইরাস টাস্কফোর্সের প্রধান মাইক পেন্স বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার প্রথমদিন থেকেই আমেরিকানদের স্বাস্থ্যসেবাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। তিনি দেশের জন্য যা করেছেন, অন্য কোনো প্রেসিডেন্ট তা করেননি। এমনকি তিনি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের সঙ্গে সব ধরনের ভ্রমণ বাতিল করেছেন।’

অন্যদিকে কমলা হ্যারিস বলেন, করোনার ভয়াবহতা সম্পর্কে ট্রাম্প প্রশাসন জানত। অথচ জেনেশুনেই তারা এটি ধামাচাপা দিয়েছে। তিনি দাবি করেন, দেশের এমন সংকটময় মুহূর্তে জো বাইডেন ক্ষমতায় থাকলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতো।

চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ প্রসঙ্গে কমলা হ্যারিস বলেন, ‘দেশটির সঙ্গে প্রেসিডেন্টের বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের সময় অনেক বেশি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। তরুণ মার্কিনিরা উদ্বিগ্ন। প্রশাসনের ব্যর্থতার কারণে অর্থনীতির আজ এই অবস্থা। আর পেন্স বলেন, ‘ট্রাম্প চীনের সঙ্গে যে লড়াই করছেন বাইডেন তা কখনোই করতে পারতেন না।’

পেন্স বলেন, বাইডেন নির্বাচিত হলে সাধারণ শ্রমিকদের ওপর করের বোঝা আরোপ করবে। তবে হ্যারিস তা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘বাইডেন সব সময়ই সত্যি বলেছেন। তিনি ট্রাম্পের মতো নন যিনি কি না, সততার মানেই বুঝতে পারেন না।’ সুপ্রিমকোর্টের বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে রক্ষণশীল অ্যামি কনলি বেরেটকে ট্রাম্পের মনোনয়ন প্রদান করা নিয়ে হ্যারিস বলেন, ‘মার্কিন জনগণ এখন ভোট দিচ্ছেন। তাই সুপ্রিমকোর্টে আজীবন কে বিচারক হিসেবে থাকবেন তা তারাই নির্ধারণ করবেন।’

সম্প্রতি কেনচুকিকে ব্রেওনা টেইলর ও মিনেসোটায় জর্জ ফ্লয়েডের হত্যার তীব্র নিন্দা জানান হ্যারিস।

ইরানের শীর্ষ জেনারেল কাসেম সোলাইমানি হত্যা অভিযানের সময় মার্কিন সৈন্যদের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলার জন্য ট্রাম্পের তীব্র সমালোচনা করেন হ্যারিস। ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির সমালোচনা করে হ্যারিস বলেন, ‘তিনি আফগানিস্তানে রাশিয়ার সৈন্যদের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করতেও ব্যর্থ হয়েছেন। উল্টো আমাদের সেনাবাহিনীকে পরাজিত ও অবোধ বলে অপমানজনক মন্তব্য করেছেন। তিনি বহির্বিশ্বে আমাদের বন্ধুদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন এবং একনায়কদের আলিঙ্গন করেছেন।’

বিতর্কের প্রথমদিকে দু’জনের মধ্যে কিছুটা উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হলেও সামগ্রিকভাবে ২৯ সেপ্টেম্বরের প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কের চেয়ে এটি অনেক বেশি শান্ত ছিল। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন ইউএসএ টুডে’র সাংবাদিক সুসান পেইজ।

ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বিতীয় বিতর্ক অনিশ্চিত

এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের মধ্যকার দ্বিতীয় দফা বিতর্ক অনিশ্চতার মধ্যে পড়েছে। ১৫ অক্টোবর মায়ামিতে তাদের মধ্যে সরাসরি বিতর্কের দিন নির্ধারিত আছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি থাকা অবস্থায় তার সঙ্গে দ্বিতীয় বিতর্কে অংশ নিতে বাইডেন অস্বীকৃতি জানানোয় আয়োজকরা বিতর্কটি ভার্চুয়ালি করার উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু এ ধরনের বিতর্কে অংশ নিতে ট্রাম্প রাজি হননি বলে জানিয়েছে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে প্রার্থীদের মধ্যে তিনটি বিতর্ক হয়। ২৯ সেপ্টেম্বর ট্রাম্প ও বাইডেনের মধ্যে প্রথম বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। সেই বিতর্কটিকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বিশৃঙ্খল ও নিকৃষ্টতম বিতর্ক হিসেবে বর্ণনা করছেন অনেকে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে