দক্ষিণ আফ্রিকায় অপহরণ আতঙ্কে প্রবাসী বাংলাদেশিরা

ডেস্ক রিপোর্ট

দক্ষিণ আফ্রিকা

দক্ষিণ আফ্রিকায় অপহরণের ঘটনা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। ক’দিন আগেই কেপটাউন থেকে আবদুল করিম নামে এক বাংলাদেশিকে নিজ দোকান থেকে অপহরণ করে সন্ত্রাসীরা। ২৬ আগস্ট উইনবার্গ থেকে নিখোঁজ চার বাংলাদেশির আজও সন্ধান মেলেনি। এমন পরিস্থিতিতে চরম আতঙ্কে দিন পার করছে প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

৯ অক্টোবর (শুক্রবার) সকাল দশটার দিকে কেপটাউন শহরের সাইমন্স টাউনে নিজ দোকানে কর্মরত অবস্থায় অস্ত্র ঠেকিয়ে একটি গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। কে বা কারা কী কারণে আবদুল করিমকে তুলে নিয়ে গেছে সে বিষয়ে কিছুই জানা যায়নি। অপহৃত আবদুল করিম শরীয়তপুর জেলার ভেদেরগঞ্জ থানার বাসিন্দা বলে জানা গেছে।

universel cardiac hospital

এর আগে, দক্ষিণ আফ্রিকায় পাকিস্তানি অপহরণকারী চক্রের হাত থেকে বেঁচে ফিরেছেন এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ী। চলতি মাসের (৬ অক্টোবর) দেশটির কেপটাউনের ক্লেমন্ট এলাকা থেকে শাহাদাত হোসেনকে অপহরণ করা হয়। তার দেশের বাড়ি নোয়াখালী জেলায়।

স্থানীয় বাংলাদেশিরা জানান, ব্যক্তিগত কাজে গিয়ে গাড়ি পার্ক করার সময় ওঁৎপেতে থাকা পাকিস্তানি নাগরিকের নেতৃত্বে কয়েকজন সশস্ত্র কৃষাঙ্গ ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করে শাহাদাতকে গাড়ি থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।

এ সময় শাহাদাত মারাত্মকভাবে আঘাত হলেও নিজেকে ছাড়িয়ে গাড়ি নিয়ে নিরাপদ দূরত্বে সরে যেতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে শাহাদাতের পিছু নিয়ে কিছু দূর যাওয়ার পর শেষ পর্যন্ত অপহরণকারীরা পালিয়ে যায়।

পরে ভুক্তভোগী শাহাদাত হোসেন স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে এই ব্যাপরে অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে অভিযোগ দায়ের করেন।

সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে কেপটাউনে চারজন বাংলাদেশিকে অপহরণের চেষ্টা করা হলে বুঝতে পেরে দুইজন বাংলাদেশি পালিয়ে যেতে পারলেও বাকি দুইজকে অপহরণ করা হয়। পরবর্তীতে দক্ষিণ আফ্রিকা মুদ্রায় ৫০ হাজার রেন্ড মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পান তারা।

এছাড়াও দেশটিতে শিশু থেকে শুরু করে যুবক, বৃদ্ধ দেশি-বিদেশি নাগরিকরা কমবেশি সবাই হামলার শিকার হন। সুযোগ বুঝে টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তুলে অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। চাহিদামতো টাকা দিতে ব্যর্থ হলে গুম করে দেয়া হয়।

দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে বাংলাদেশি, পাকিস্তানি ও স্থানীয় অপরাধীদের সমন্বয়ে একটি বড় ‘অপহরণ’ চক্র গড়ে উঠেছে। তাদের প্রথম টার্গেট হলো বাংলাদেশি ব্যবসায়ী। গত ১৫ দিনে ১০ বাংলাদেশিকে অপহরণের চেষ্টা করা হয়েছিল।

এর মধ্যে তিনজন পালিয়ে বাঁচতে সক্ষম হয়। একজন গুরুতর আহত হয়েছে ফিরেছেন, পরবর্তীতে ভুক্তভোগী পুলিশ স্টেশনে অভিযোগ দায়ের করেন। দুইজন মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন। এর বাইরে জোহান্সেনবাগের ফোর্সবাগ থেকে এক পাকিস্তানিকে অপহরণ করা হলে পুলিশ তিনদিনের মাথায় উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

দক্ষিণ আফ্রিকায় চলমান অপহরণ নিয়ে প্রবাসীদের সংগঠন বাংলাদেশ পরিষদের সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জোহান্সেনবাগ, ডারবানসহ দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশিদের অপহরণে ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ’।

তিনি বলেন, ‘এসব ঘটনায় বাংলাদেশি, পাকিস্তানিসহ স্থানীয় লোকজনও জড়িত তাদের অনেককেই আটক হয়েছে। আইনের আওতায় আনতে কাজ চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। অনেকাংশে অপহরণকারীরা পালিয়ে যাচ্ছেন’।

তিনি আরও বলেন, ‘কেপটাউনে অপহরণের ঘটনা বাড়ছে কারণ, বাংলাদেশিরা তথ্য গোপন করে অপরাধীদের সঙ্গে সমঝোতা করে। পুলিশকে সঠিক তথ্য না দেওয়ার ফলে সেখানে অপহরণকারীদের চিহ্নিত করা যাচ্ছে না।

যার ফলে তাদের আটক করে আইনের মুখোমুখি করা যায় না। এ কারণেই তারা একের পর এক বাংলাদেশিকে অপহরণের টার্গেট বানিয়ে আক্রমণ করছে। তুলে নেয়ার চেষ্টা করছে’।

শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কেপটাউনে বাংলাদেশিরা এখন আতঙ্কে দিন পার করছে। অপহরণ বন্ধ করার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশ পরিষদ সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে’।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে