নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন প্রধান আসামি বাদলসহ দুজন।
আজ রোববার বিকালে মামলার প্রধান আসামি বাদল, সাজু ও রহমতকে রিমান্ড শেষে আদালতে তোলা হলে দুজন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে তাদের সবাইকে কারাগারে পাঠানো হয়।
নোয়াখালী জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) গুলজার আহমেদ জুয়েল জানান, রোববার বিকালে তিন আসামির মধ্যে চার দিনের রিমান্ড শেষে রহমত উল্যাহকে (বাদলের বাবা) সরাসরি কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আসামি বাদল ও সাজুকে নির্যাতনের মামলায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ১নং আমলি আদালতে হাজির করা হলে আদালতের জ্যেষ্ঠ হাকিম মাসফিকুল হক ১৬৪ ধারায় তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে তাদের পর্নোগ্রাফি মামলায় ৫নং আমলি আদালতে হাজির করলে আদালতের জ্যেষ্ঠ হাকিম নবনীতা গুহু ১৬৪ ধারায় তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে তাদেরকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
দেশজুড়ে আলোচিত এই মামলায় এখন পর্যন্ত প্রধান আসামিসহ মোট সাত আসামি ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেন।
এদিকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্তদল ঘটনাস্থল থেকে কিছু আলামত সংগ্রহ করেছে।
নোয়াখালী পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন নোয়াখালী ইন্সপেক্টর মামুনুর রশিদ পাটোয়ারী জানান,রোববার সকালে তিনিসহ পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এসময় সেখান থেকে তিনটি বালিশ, বিছানার চাদর, বসার পাটি, পাশের একটি বাড়ি থেকে সন্দেহজনক ব্যক্তির নামের একাধিক জন্ম তারিখ দেয়া বেশ কয়েকটি জন্ম নিবন্ধন কার্ডসহ বেশ কিছু আলামত সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে ঘটনার দিন বাদলের পরনে থাকা প্যান্টও উদ্ধার করা হয়েছে।
গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে ওই নারীর আগের স্বামী দেখা করতে তার বাবার বাড়ি বেগমগঞ্জের একলাশপুর ইউনিয়নের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামে আসেন। বিষয়টি দেখেন স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী ও দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার। রাত ১০টার দিকে দেলোয়ার তার লোকজন নিয়ে ওই নারীর ঘরে ঢুকে পরপুরুষের সঙ্গে অনৈতিক কাজের অভিযোগ তুলে মারধর শুরু করেন। এক পর্যায়ে পিটিয়ে নারীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করেন। মূলত তাদের কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ওই নারীর ওপর ক্ষুব্ধ ছিল দেলোয়ার বাহিনী।
ঘটনার প্রায় এক মাস পর ৪ অক্টোবর দুপুরে ওই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে তোলাপাড় সৃষ্টি হয়। পরে গৃহবধূ নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফি আইনে দুটি মামলা করেন।
৮ অক্টোবর মামলা দুটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়। আলোচিত এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।