সামাজিক প্রতিরোধ আন্দোলন হাইজ্যাকের চক্রান্ত ।। আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী

আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী
আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী। ফাইল ছবি

টেলিভিশনে ঢাকায় শিশু ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে উত্তাল শোভাযাত্রার ছবি দেখছিলাম আর ভাবছিলাম, এই প্রতিবাদ মিছিল হয়তো কিছুদিন চলবে। তারপর? মানুষের স্মৃতি থেকে সিলেট আর বেগমগঞ্জের দুঃস্বপ্ন মুছে গেলেই এই প্রতিবাদ থামবে। সরকার যতটা সচেতন ও সক্রিয় হয়েছে, অন্য একটি সমস্যা এলে আগের সমস্যাটি ভুলে যাবে। বামপন্থীরা ধর্ষণ ও নির্যাতন বন্ধ করার জন্য সরকারের কাছে ভালো ভালো দাবি তুলবেন, এবারও তুলেছেন। কিন্তু এই দাবি আদায়ের জন্য যে লাগাতার আন্দোলন দরকার, তা চালিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা তাদের নেই। সবচেয়ে লক্ষণীয়—বিএনপির রাজনৈতিক তীরটি এবারও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে। অর্থাৎ শিশু ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনকে সরকার উত্খাতের আন্দোলনে পরিণত করার জন্য তারা এবারও যে ষড়যন্ত্র করেছিল, তা ব্যর্থ হয়েছে। সরকার সাফ বলে দিয়েছে, নারী ধর্ষণের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে সরকার উত্খাতের আন্দোলনে পরিণত করতে চাইলে তারা কঠোর ব্যবস্থা নেবে।

বিএনপির নিজের ঘরেই এখন শান্তি নেই। ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনে এস এম জাহাঙ্গীর নামের এক প্রার্থীকে দলের মনোনয়ন দেওয়ার প্রতিবাদে বিএনপিরই একদল কর্মী (সম্ভবত জাহাঙ্গীরের প্রতিদ্বন্দ্বীর সমর্থক) উত্তরায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুলের বাসায় হামলা চালায়। ইটপাটকেল ও ডিম নিক্ষেপ করে তাঁর বাড়ির জানালা-দরজা ভেঙে ফেলে। মির্জা ফখরুল এ সময় বাড়িতেই ছিলেন। সৌভাগ্যক্রমে আহত হননি।

universel cardiac hospital

লন্ডনের বাজারে একটি বড় গুজব আছে। কতটা সঠিক তা জানি না। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তারেক রহমান লন্ডনে বসে আন্দোলন ও নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে হারানোর আশা ত্যাগ করে এখন অন্য পন্থা গ্রহণ করেছেন। পন্থাটি হলো, বিশাল অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে আওয়ামী লীগের কিছু নেতা ও কর্মীকে কিনে ফেলা। এই অর্থের বিনিময়ে রাজনৈতিক নেতাদের কেনাবেচা ভারতের রাজনীতিতে এখন একটি প্রচলিত ব্যাপার; কিন্তু শেখ হাসিনার সতর্ক দৃষ্টি আড়াল করে এই নেতা কেনাবেচার খেলায়ও বিএনপি সুবিধা করতে পারছে না বলেই গুজবে বলা হচ্ছে।

দেশে নারী ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের কথায় ফিরে যাই। এই আন্দোলনের সাফল্য আমি কামনা করি। কারণ নারী ধর্ষণ দেশে অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাবেই দেখা যায়, দেশে প্রতিদিন অন্তত সাতজন নারী ধর্ষণের শিকার হয়। শিশু নির্যাতনের হিসাবটি এর মধ্যে নেই। পুলিশি হিসাবেই দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ধর্ষণসংক্রান্ত মামলা হয়েছে এক হাজার ৮০টি। এই মামলার বেশির ভাগই আদালতে ঝুলে আছে। অনেক ক্ষেত্রে ধর্ষকরা আইনের ফাঁকফোকরে বেরিয়ে যায়। তারা শাস্তি পায় না। মানবাধিকারকর্মীরা অভিযোগ করেন, মামলায় প্রভাবশালীদের বাধা এবং পুলিশের দায়িত্বহীনতার ফলে ধর্ষকরা হয় ধরা পড়ে না, আর ধরা পড়লেও শাস্তি পায় না।

যা হোক, দেশব্যাপী গণজাগরণের ফলেই সরকার সচেতন ও সক্রিয় হয়েছে। ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড করার প্রস্তাবে সায় দিয়েছে মন্ত্রিসভা। ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন’ সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারির জন্য এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই মাসের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় বলা হয়, চলমান পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ ধর্ষণবিরোধী সচেতনতা তৈরির কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে। এই সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে মানববন্ধন ও মিছিল করা হবে।

আমার প্রশ্ন, সিলেট ও বেগমগঞ্জের ঘটনার পর মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ—এই বিশাল সংগঠনগুলো কেন ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে সবার আগে এগিয়ে এলো না। ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। সিলেটের এমসি কলেজে তাদের লোকরাই দুর্বৃত্ত হিসেবে গ্রেপ্তার হয়েছে। এই অবস্থায় ছাত্রলীগেরই তো উচিত ছিল তাদের বিরুদ্ধে জনমনের অভিযোগ খণ্ডন এবং নারী ও শিশু ধর্ষকদের মতো বর্বর পশুদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করা। তা সরকারবিরোধী আন্দোলন হতো না, হতো এই সামাজিক ব্যাধি উচ্ছেদের কাজে সরকারকে সচেতন করা এবং সরকারকে এই নরপশুদের দমনে শক্তি জোগানো। দেরিতে হলেও আওয়ামী লীগ যে এ ব্যাপারে সচেতন হয়েছে এটাই শুভ খবর।

সিলেট ও বেগমগঞ্জের ঘটনার পরই আমি একটি অনলাইন পোর্টালে লিখেছিলাম, এই আন্দোলনে নেতৃত্ব ছাত্রলীগের গ্রহণ করা উচিত। বর্তমান ছাত্রলীগ নেতৃত্ব অনেকটা শুদ্ধ-পরিশুদ্ধ মনে হয়; কিন্তু এই নেতৃত্ব ‘ইমাজেনেটিভ’ নয়। তারা সরকারের এতই মুখাপেক্ষী যে দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে যেতেও ভয় পায়। এবারের এই আন্দোলন স্বতঃস্ফূর্ত। ঢাকা ছাড়া বেশির ভাগ স্থানে এই আন্দোলনের পুরোভাগে এসে দাঁড়িয়েছে বামপন্থী ছাত্রসংগঠন। কোথাও কোথাও নারী সংগঠন ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে। দেশব্যাপী এই গণ-আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ম হতে ছাত্রলীগ নেতৃত্ব ইতস্তত করল কেন? বিলম্ব করল কেন?

কোথাও নারী ধর্ষণ ও নির্যাতন হলে ছাত্রলীগের ওপরই দোষ চাপানো হয়। এটা খণ্ডন করার এখন সময় এসেছে। ছাত্রলীগই কি এ ব্যাপারে একা দায়ী? না, এটা এখন বাম-ডান সব দলেই অনুপ্রবিষ্ট একটি সামাজিক ব্যাধি? যার তুলনা শুধু কভিড-১৯-এর সঙ্গে হতে পারে। সবাইকে, সব দল-মতের মানুষকে একাট্টা হয়ে এই ব্যাধি উচ্ছেদের কাজে নামতে হবে। এই সামাজিক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়নি এমন ধোয়া তুলসীপাতার মতো রাজনৈতিক দল একটিও নেই।

যে সিপিবি রাজনৈতিক সতীত্বের এত গর্ব করে, সেই দলের সার্বক্ষণিক নেত্রী জলি তালুকদার যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগে অনশন-ধর্মঘট করেছেন। ঢাকার কাগজেই খবরটা পড়লাম। খবরে বলা হয়েছে, জলি তাঁর দলের এক সহকর্মী তাঁকে ধর্ষণ করেছে এই অভিযোগ নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে এসেছিলেন। তাঁরা তাঁর অভিযোগকে তেমন পাত্তা না দেওয়ায় তিনি অনশনে বসেছিলেন। অনুরূপ ঘটনা ঘটেছে ছাত্র অধিকার পরিষদেও। সেখানেও দলের নেতার বন্ধুর দ্বারা ধর্ষিত হয়ে এক তরুণী অনশনে বসেন। তাঁর অভিযোগও দলের নেতারা পাত্তা দেননি; বরং তাঁর বিরুদ্ধে অপবাদ ছড়াচ্ছেন।

আমার কথা, নারী ধর্ষণের মতো ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধিটি সমাজের প্রতি স্তরে বিস্তার লাভ করেছে। এ জন্য একে অন্যকে দোষারোপ না করে এই সামাজিক ব্যাধি দূর করার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুদ্ধে নামতে হবে। সরকার একা কঠোর আইন করেও এই ব্যাধি দূর করতে পারবে না। এ জন্য প্রয়োজন হবে সমাজসংস্কারের লক্ষ্যে ও শিক্ষাসংস্কারের লক্ষ্যে ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন। সরকারকে এ আন্দোলন সাহায্য জোগাবে। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে অতীতের ভাষা আন্দোলন, শিক্ষাসংস্কারের আন্দোলনে নেতৃত্ব দানের মতো ছাত্রলীগকেই এগিয়ে আসতে হবে। তারা যদি তা না পারে, তাহলে বাংলাদেশের চলমান আন্দোলনে তারা অচ্ছুত হয়ে যাবে।

এই সামাজিক আন্দোলনের নেতৃত্বে যদি ছাত্রলীগ, যুবলীগ, মহিলা লীগ যথাসময়ে নেতৃত্ব গ্রহণে এগিয়ে আসতে না পারে, তাহলে আমার একটা বড় ভয়—এই নেতৃত্ব বামপন্থীরা বেশিদিন ধরে রাখতে পারবে না। চলে যাবে নৈরাজ্যবাদী অথবা বিএনপি-জামায়াতিদের হাতে, যারা এই আন্দোলনকে সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে চাইবে। এর প্রমাণ ঢাকার মিছিল-মিটিংয়ে দেখা গেছে। আন্দোলনের শুরুতে বড় বড় মিছিলের স্লোগান ছিল ধর্ষকদের কঠোর শাস্তি দানের এবং নারী-শিশুদের নিরাপত্তা বিধানের দাবি।

হঠাৎ এক দিন দেখি, একটি মিছিলের স্লোগান বদলে গেছে। কিছু লোককে দেখা গেল, উত্তেজিত অবস্থায় আগুনের মশাল হাতে স্লোগান দিতে। আর তা হলো অতীতের রাজনৈতিক আন্দোলন থেকে বিকৃতভাবে ধার করা। যেমন ‘জ্বালো জ্বালো আগুন জ্বালো/হাসিনার গদিতে আগুন জ্বালো’, ‘সকলের মুখে এক আওয়াজ/খতম করো আওয়ামী রাজ’—এ রকম আরো কিছু স্লোগান। তখনই আমার সন্দেহ হয়েছে দলের ভাঙনের মুখে বিএনপি ও জামায়াত বর্তমান গণ-আন্দোলনকে হাইজ্যাক করে তাদের অন্তিমকালের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। সরকারকে এই ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিতেই হবে।

বিশ্বের সব দেশের মতোই বাংলাদেশেও নারী ও শিশু নির্যাতন বেড়েছে। তবে বাংলাদেশে একটু বেশি বেড়েছে। দেশে নারীর এত ক্ষমতায়ন সত্ত্বেও এই অবস্থা কেন? নানাজন নানা কারণ দেখান। করোনার কারণে লকডাউনের ফলে সব দেশেই তরুণসমাজের একাংশের মধ্যে মানসিক বিকার দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশে তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশের মধ্যে মাদকাসক্তি প্রচণ্ডভাবে বেড়েছে। সরকার দেশের অনেক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে; কিন্তু মাদকাসক্তি এবং বিভিন্ন ধরনের নিষিদ্ধ মাদক ব্যবসা বন্ধ করতে পারেনি। এ ছাড়া আছে টেলিভিশনে, সিনেমায় যৌন উত্তেজক ছবির প্রভাব। স্কুলপর্যায় থেকেই নারীদের যে যৌনশিক্ষা ও শারীরিক শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন, তা ধর্মীয় কুসংস্কারের জন্য দেওয়া হয় না। তার ওপর রয়েছে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্স্টক্লাস পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ছাত্রীকে শিক্ষকের ধর্ষণ, অফিস-আদালতেও প্রমোশনের লোভ দেখিয়ে নারী কর্মচারীদের ওপর ওপরওয়ালার যৌন হয়রানি ইত্যাদি। বিবাহিত জীবনে স্ত্রীর অনিচ্ছা ও অসুস্থতা সত্ত্বেও স্বামীর জোর খাটিয়ে যৌনসঙ্গমও ধর্ষণের তালিকায় পড়ে।

বাংলাদেশে এই অপরাধগুলো সবই আছে, তার সত্যতা মেনে নিয়েও নারী নির্যাতন বাড়ার আশু কারণ সম্পর্কে পুলিশের এক সাবেক আইজি আব্দুল কাইয়ুম ও হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির উপদেষ্টা নূর খান লিটন কালের কণ্ঠ’র কাছে যে কথা বলেছেন, সেদিকে আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করি। আব্দুল কাইয়ুম বলেছেন, ‘এখন রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন সেক্টরে অপরাধী গড়ে উঠেছে। অনেক সময় ভয়ে বা ঝামেলা এড়াতে পুলিশ অপরাধীদের প্রতিরোধ করতে যাচ্ছে না। পুলিশকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। ধর্ষণ হওয়ার আগেই নিপীড়নের অভিযোগেও যেন দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এসংক্রান্ত আইনও আছে। আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমেই পুলিশ এসব অপরাধ প্রতিরোধ করতে পারে।’

হিউম্যান রাইটস সোসাইটির উপদেষ্টা নূর খান লিটনও বলেছেন প্রায় একই কথা। তিনি বলেছেন, ‘এখন ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এলাকাভিত্তিক দুর্বৃত্ত দল তৈরি হচ্ছে। এদের প্রতিরোধ করতে হবে সামাজিক শক্তির বিকাশ ঘটিয়ে। নজরদারি ও নিরাপত্তাব্যবস্থার উন্নতির মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের সুরক্ষা দিয়ে আস্থায় আনতে হবে রাষ্ট্রকে।’

আমি এই দুটি মন্তব্যের সঙ্গেই সহমত পোষণ করি। তবে এর সঙ্গে আমার একটি কথা যোগ করার আছে। ক্ষমতাসীন দলের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে যে এলাকাভিত্তিক দুর্বৃত্ত দল গড়ে ওঠার কালচার, তা আওয়ামী লীগের কালচার নয়। আমি আওয়ামী লীগের সমর্থক বলে এ কথা বলছি না। যেকোনো নিরপেক্ষ লোকই এ কথা বলবেন।

বিএনপির আমলেই তাদের এক শ্রেণির মন্ত্রী ও এমপি নিজেরা অপরাধী হওয়ায় নিজ নিজ এলাকায় তাঁদের আধিপত্য বজায় রাখার জন্য এই মাস্তান দল তৈরি করতেন এবং তাঁদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে সমাজের সর্বপ্রকার অপরাধী আইনকে তোয়াক্কা না করে চলত। পুলিশ তাদের কেশ স্পর্শ করার সাহস পেত না। দুর্বৃত্ত পোষণের এই কালচারটি এখন আওয়ামী লীগের এক শ্রেণির পুরনো ও নব্য এমপি ও মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে গজিয়ে উঠেছে। হাসিনা সরকারের সাম্প্রতিক শুদ্ধি অভিযানে অপরাধীচক্রের এই অভিভাবকদেরই ধরা শুরু হয়েছিল। এই অভিযানটি কেন শিথিল হয়ে গেল তা আমার জানা নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ত্বরিত দৃষ্টি এদিকেই আমি আকর্ষণ করছি।

আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা আমার অপরাধ নেবেন না। তাঁদের কাছে আমার একটি অনুরোধ আছে। তাঁরা কথায় কথায় যেন আর ‘কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না’ এবং ‘অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা হবে’—এসব কথা না বলেন। লোকে এসব কথা নিয়ে হাসাহাসি করে। বলে, আইনের আওতা নয়, আইনের ভাঁওতা কথাটি শোনা যায়। অনেক অপরাধী আইনের আওতায় যাওয়ার পরও রহস্যজনকভাবে ছাড়া পেয়ে যায়। এ জন্যই এই রসিকতা চালু হয়েছে। আইনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা তখনই আসবে, যখন আইন কাজির গরুর মতো কেতাবে থাকবে না, গোয়ালে থাকবে। অর্থাৎ যথাযথ প্রয়োগ হবে। এখন আইনের নামে যত ফাঁকিবাজি চলছে, সে জন্যই আইনের প্রতি মানুষ বিশ্বাস হারিয়েছে। কোনো ধর্ষক ধরা পড়ার পর বিচারে সোপর্দ হওয়ার পরও সে উপযুক্ত দণ্ড পাবে এই বিশ্বাস বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে নেই। এই বিশ্বাস হাসিনা সরকারকে ফিরিয়ে আনতে হবে। আইনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা ও আস্থা হাসিনা সরকারকে অবশ্যই ফিরিয়ে আনতে হবে।

নারী ও শিশু ধর্ষণের বিরুদ্ধে আইন আছে। এই আইনের কার্যকর প্রয়োগ দরকার। একমাত্র হাসিনা সরকারের পক্ষেই সম্ভব দেশ থেকে নারী নির্যাতন বন্ধ করে নারী ও শিশুকে সুরক্ষা দান। সরকার সেদিকে কঠোরভাবে দৃষ্টি দিক। দেশের সামাজিক অপরাধবিরোধী আন্দোলনগুলো যাতে বিএনপি ও জামায়াত বা তাদের মতো দুষ্টচক্র হাইজ্যাক করতে না পারে, সরকার সেদিকেও দৃষ্টি রাখবে বলে আশা রাখি।

লন্ডন, সোমবার, ১২ অক্টোবর ২০২০

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে