বাংলাদেশ সরকার মানসম্মত চলচ্চিত্র নির্মাণের লক্ষ্যে ১৯৭৬-৭৭ সাল থেকে চলচ্চিত্রে অনুদানের প্রথা চালু করে। মাঝখানে বন্ধ থাকলেও ২০০৭-০৮ অর্থবছর থেকে নিয়মিতভাবেই অনুদান প্রদান করা হচ্ছে। চলচ্চিত্র অনুদান নীতিমালায় বলা আছে, অনুদানের প্রথম চেক প্রাপ্তির ৯ মাসের মধ্যে ছবির কাজ শেষ করতে হবে। তবে বিশেষ অবস্থায় অনুরোধ সাপেক্ষে পরিচালক ওই সময় বৃদ্ধি করতে পারেন।
আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অনেক নির্মাতা ছবি নির্মাণে বছরের পর বছর পার করছেন। মন্ত্রণালয়ের একশ্রেণির কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশের কারণে তারা এ ধরনের কাজ করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যার কারণে নির্মাতাদের কোনো ধরনের জবাবদিহি করতে হয় না।
তবে টোকন ঠাকুরসহ বেশ ক’জন নির্মাতার নামে মামলাও হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল গ্রেফতার হয়েছেন টোকন ঠাকুর। তাকে ২০১২-২০১৩ অর্থ বছরে ‘কাঁটা’ ছবির জন্য অনুদান দেয়া হয়। কিন্তু আজ অবধি তিনি তার সিনেমা শেষ করতে পারেননি।
এমন আরও অনেক নির্মাতাই রয়েছেন যারা বছরের পর বছর পার করে দিচ্ছেন সরকারি অনুদান নিয়ে।
কেউ সিনেমা শেষই করতে পারছেন না, কেউ আবার সিনেমা শেষ করলেও সেটির মুক্তি আটকে আছে নানা কারণে।
ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণে উৎসাহ দিতে ১৯৭৬ সালে চালু হয় সরকারি অনুদান প্রথা। ৪৪ বছরে এ পর্যন্ত ১৪১টি ছবিকে অনুদান দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে অর্ধ শতাধিক ছবি এখনো আলোর মুখ দেখেনি। কিছু ছবি আদৌ মুক্তি পাবে কি না রয়ে গেছে সন্দেহ।
১৯৭৬ সালে আড়াই লাখ টাকা করে অনুদান পায় চারটি ছবি। মজার ব্যাপার হলো অনুদান নিয়ে ছবি জমা না দেওয়ার রেওয়াজটা শুরু হয় প্রথম বছর থেকেই। চারটি ছবির একটিও সময়মতো মুক্তি দিতে পারেননি নির্মাতা। মসিহ্উদ্দিন শাকের-শেখ নিয়ামত আলীর ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’ মুক্তি পায় ১৯৭৯ সালে, বাদল রহমানের শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’ মুক্তি পায় ১৯৮০ সালে। কবির আনোয়ারের ‘তোলপাড়’ মুক্তি পায় অনুদান পাওয়ার এক দশক পর, ১৯৮৮ সালে। বেবী ইসলামের ‘মেহেরজান’ আজ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি।
এরপর একই ধারাবাহিকতা বজায় থেকেছে। তবে ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছর কোনো অনুদান দেওয়া হয়নি সিনেমার জন্য। ১৯৮৪-৮৫ অর্থবছরে শমশের আহমেদ ‘অচেনা বন্দর’-এর জন্য এক লাখ টাকা অনুদান পান। এই টাকায় ছবি নির্মাণ সম্ভব নয়, তাই নির্মাণ না করে অনুদান ফেরত দেন তিনি।
এরপর টানা সাত বছর অনুদান প্রদান বন্ধ ছিল ১৯৮৫-৮৬ থেকে ৯২-৯৩ অর্থবছর পর্যন্ত। সেই বিরতি কাটিয়ে ১৯৯৩-৯৪ অর্থবছরে আবার অনুদান দেয়া শুরু হয়। সেবছর দেড় লাখ টাকা করে অনুদান পায় হুমায়ূন আহমেদের ‘আগুনের পরশমনি’, শেখ নিয়ামত আলীর ‘অন্য জীবন’ ও ববিতার ‘পোকামাকড়ের ঘরবসতি’ ছবিগুলো। এই ছবিগুলোর মধ্যে একমাত্র হুমায়ূন আহমেদই সঠিক সময়ের মধ্যে সিমো মুক্তি দিতে পেরেছিলেন। ’৯৩ সালে অনুদান পেয়ে তিনি ‘আগুনের পরশমনি’ মুক্তি দেন ১৯৯৪ সালে।
তবে তথ্য মন্ত্রণালয় তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতেই পারে এই বছরের অনুদানের সিনেমা নিয়ে। কারণ টানা দুই বছরে বাকি দুটি ছবিও মুক্তি পেয়েছিলো। ১৯৯৫ সালে মুক্তি পায় ‘অন্য জীবন’ এবং ও ১৯৯৬ সালে ‘পোকামাকড়ের ঘরবসতি’ মুক্তি দিয়ে প্রশংসিত হন ববিতা।
এরপর প্রায় বছর বছর বেড়েছে অনুদানে টাকার পরিমাণ। এসেছে নিয়ম নীতিতেও অনেক পরিবর্তন। সেইসঙ্গে বেড়েছে সিনেমা নির্মাণ নিয়ে অনিয়ম। ২০১০ সাল থেকে অনুদানের অর্থের পরিমাণ ৩৫ লাখ টাকা। সঙ্গে ১০ লাখ টাকার কারিগরি সুবিধা। প্রথম চেক প্রাপ্তির ৯ মাসের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করতে হবে। কিন্তু কিছু নির্মাতা এই অর্থ নিয়ে নয়ছয় করছেন। অনেক নির্মাতার বিরুদ্ধে সময়মতো ছবির কাজ শুরু না করার অভিযোগও রয়েছে।
২০১০-১১ অর্থবছর: অনুদান পাওয়া ছবির মধ্যে মুক্তি পেয়েছে চারটি। সেগুলো হলো মুরাদ পারভেজের ‘বৃহন্নলা’, মাসুদ পথিকের ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’, মিঠুন চক্রবর্তীর ‘মুক্তি’ ও মানিক মানবিকের ‘শোভনের স্বাধীনতা’ (শিশুতোষ)। মির্জা সাখাওয়াৎ হোসেনের ‘ধোকা’, ফারুক হোসেনের ‘কাকতাড়ুয়া’ মুক্তি পায়নি।
২০১১-১২ অর্থবছর: ৬টি ছবিকে ৩৫ লাখ টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়। তারমধ্যে তানভীর মোকাম্মেলের ‘জীবন ঢুলী’, গাজী রাকায়েতের ‘মৃত্তিকা মায়া’ ও দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর ‘হেড মাস্টার’ মুক্তি পেয়েছে।
‘নেকড়ে অরণ্য’র জন্য প্রথম কিস্তির টাকা গ্রহণ করার পরও ছবির কাজ শুরু করতে না পারায় মারুফ হাসান আরমানের বিরুদ্ধে মামলা করে তথ্য মন্ত্রণালয়। অভিযোগ রয়েছে, অনুদানের টাকা দিয়ে তিনি জমি কিনেছেন।
শিশুতোষ ছবি ‘একা একা’র জন্য অর্থ বরাদ্দ পেয়েছিলেন সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী। ছবি নির্মাণ না করায় গুণী এই নির্মাতার বিরুদ্ধেও অর্থ আদায়ের জন্য মামলা করেছে তথ্য মন্ত্রণালয়। পাঁচ বছর পর সবে শুটিং শেষ করেছেন ‘হাডসনের বন্ধুক’-এর পরিচালক প্রশান্ত অধিকারী।
২০১২-১৩ অর্থবছর: ৭টি পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবিকে ৩৫ লাখ টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়। নির্মাতা তারেক মাসুদ ‘কাগজের ফুল’-এর জন্য অনুদান পান। প্রথম কিস্তির অর্থ পাওয়ার পরপরই সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়। পরে প্রযোজক ক্যাথরিন মাসুদ অর্থ ফেরত দেওয়ার আবেদন করেছিলেন। কিন্তু মন্ত্রণালয় ছবিটি নির্মাণের অনুরোধ করে ক্যাথরিনকে। সেই ছবি আজও মুক্তি পায়নি।
ওই বছরে অনুদান পাওয়া নারগিস আক্তারের ‘যৈবতী কন্যার মন’, টোকন ঠাকুরের ‘কাঁটা’ মুক্তির মুখ দেখেনি এখনো। ‘কাঁটা’ নির্মাণ না করায় টোকন ঠাকুরের বিরুদ্ধে ও ‘যৈবতী কন্যার মন’-এর জন্য নারগিস আক্তারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে তথ্য মন্ত্রণালয়।
জাহিদুর রহিম অঞ্জনের ‘রেইনকোট’ (নাম বদলে ‘মেঘমল্লার’), শাহ আলম কিরণের ‘একাত্তরের মা জননী’ ও মান্নান হীরার ‘একাত্তরের ক্ষুদিরাম’, আকরাম খানের ‘খাঁচা’ মুক্তি পেয়েছে।
২০১৩-১৪ অর্থবছর: ৭টি পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি অনুদান পায়। নাদের চৌধুরীর ‘নদী উপাখ্যান’ (নাম বদলে ‘লালচর’), প্রসূন রহমানের ‘সুতপার ঠিকানা’, সাজেদুল আউয়ালের ‘ছিটকিনি’, রওশন আরা নীপার ‘মহুয়া মঙ্গল’ (নাম বদলে ‘মহুয়া সুন্দরী’) ও মুশফিকুর রহমান গুলজারের ‘লাল সবুজের সুর (শিশুতোষ)’ ছবিগুলো যথাসময়ে মুক্তি পেয়েছে।
মুক্তি পায়নি ড্যানি সিডাকের ‘কাসার থালায় রূপালি চাঁদ’ ও জাঁ নেসার ওসমানের শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘পঞ্চসঙ্গী’।
২০১৪-১৫ অর্থবছর: ৬টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র অনুদান পায়। তারমধ্যে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র শাখা থেকে শামীম আখতারের ‘রীনা ব্রাউন’ জানুয়ারিতে মুক্তি পেয়েছে। ফাখরুল আরেফীনের ‘ভুবন মাঝি’ ও মাসুদ পথিকের ‘মায়া’ও মুক্তি পেয়েছে। পরিচালক এন রাশেদ চৌধুরীর ‘চন্দ্রাবতীর কথা’ ২০১৯ সালের কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়েছে।
তবে এখনো নির্মাণাধীন রয়েছে ‘বিউটি সার্কাস’ ছবিটির। এর পরিচালক মাহমুদ দিদার। নুরুল আলম আতিকের ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ সিনেমাগুলো।
২০১৫-১৬ অর্থবছর: ৭টি পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবিকে অনুদান দেওয়া হয়। অর্থের পরিমাণ বাড়ানো হয় এ বছরও। তিনটি পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবিকে দেওয়া হয়েছে ৫০ লাখ টাকা করে মোরশেদুল ইসলামের ‘আঁখি ও তাঁর বন্ধুরা’, সারা আফরীনের ‘শঙ্খধ্বনি’ ও জয়া আহসানের ‘দেবী’-কে দেয়া হয়। বদরুল আনাম সৌদের ‘গহীন বালুচর’, লোরা তালুকদারের ‘বৃদ্ধাশ্রম’ ও পান্থ প্রসাদের ‘সাবিত্রী’ পেয়েছে ৪০ লাখ টাকা করে।
এসব ছবির মধ্যে মুক্তি পেয়েছে মোরশেদুল ইসলামের ‘আঁখি ও তাঁর বন্ধুরা’, জয়া আহসানের ‘দেবী’ ও বদরুল আনাম সৌদের ‘গহীন বালুচর’।
এখনো মুক্তি পায়নি সারা আফরীনের ‘শঙ্খধ্বনি’। এটি বর্তমানে ‘শিকলবাহা’ নামে নির্মিত হচ্ছে। এর পরিচালনা করছেন কামার আহমাদ সাইমন। সারা আফরীন ছবিটির প্রযোজক। অন্যদিকে লোরা তালুকদার প্রযোজিত ‘বৃদ্ধাশ্রম’ সেন্সরে বিনা কর্তনে ছাড়পত্র পেলেও এখনো মুক্তি পায়নি। স্বপন চৌধুরীর পরিচালনায় এই ছবিতে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন এসডি রুবেল ও ববি।
এদিকে নির্মাতা পান্থ প্রসাদ বীরাঙ্গনার দ্বান্ধিকতার প্রেক্ষাপটে পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা ‘সাবিত্রী’র শুটিংই শেষ করেননি এখনো।
২০১৬-২০১৭ অর্থবছর: হ-য-ব-র-ল অবস্থা দেখা যাচ্ছে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে অনুদান পাওয়া ছবির বেলায়। এ বছরে ৬টি চলচ্চিত্রের নাম ঘোষণা করা হয়েছে অনুদানের ছবি হিসেবে। তারমধ্যে ১টি শিশুতোষ, ১টি প্রামাণ্যচিত্র ও ৪টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র রয়েছে। শিশুতোষ চলচ্চিত্রের জন্য অনুদান পেয়েছেন সোহানুর রহমান সোহান। ছবির নাম ‘প্রিয় জন্মভূমি’। চারটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হলো- রূপসা নদীর বাঁকে (তানভীর মোকাম্মেল), আজব সুন্দর (শবনম ফেরদৌসী), দায়মুক্তি (কমল সরকার) ও নোনা জলের কাব্য (রেজয়ান শাহরিয়ার সুমিত)। এছাড়া প্রামাণ্যচিত্র ‘একজন মরিয়ম’ নির্মাণ করবেন ফেরদৌস আলম সিদ্দিকী।
অনুদানের তিন বছর পেরিয়ে কেবলমাত্র রেজয়ান শাহরিয়ার সুমিত তার ‘নোনা জলের কাব্য’ ছবিটি নির্মাণ শেষ করতে পেরেছেন। তিনি তার ছবিটি দেশ-বিদেশে প্রিমিয়ার করছেন।
এর বাইরে অন্য ছবিগুলোর কোনোটাই এখনো মুক্তি পায়নি। তবে তানভীর মোকাম্মেল তার ‘রূপসা নদীর বাঁকে’ ছবির কাজ শেষ করে এনেছেন। আর অন্য সিনেমাগুলোর মধ্যে কিছু শুটিং হয়েছে শবনম ফেরদৌসীর ‘আজব সুন্দর’ ছবিটির। কলকাতার পরমব্রতকে নিয়ে নির্মিত হতে যাওয়া এ ছবির নাম বদলে রাখা হয়েছে ‘আজব কারখানা’। শুটিং শুরুর অপেক্ষায় আছে কমল সরকারের ‘দায়মুক্তি’ ছবিটিও।
সোহানুর রহমান সোহানের ‘প্রিয় জন্মভূমি’ ও ফেরদৌস আলম সিদ্দিকীর প্রামাণ্যচিত্র ‘একজন মরিয়ম’ আটকে আছে খোঁজ খবরের আড়ালে।
২০১৭-২০১৮ অর্থবছর: ৫টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের অনুকূলে ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং ৬টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের অনুকূলে ৬০ লাখ টাকাসহ সর্বমোট ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা সরকারি অনুদান দেয়া হয়। অনুদানপ্রাপ্তদের তালিকায় রয়েছে ২০১৩ সালের ১৭টি শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া ‘মৃত্তিকা মায়া’র পরিচালক গাজী রাকায়েতের নাম। তিনি ‘গোর’ নামের চলচ্চিত্রের জন্য অনুদান পান।
আরও অনুদান পান মানিক মানবিক (আজব ছেলে), আবিদ হোসেন খান (অবলম্বন), সাইদুল আনাম টুটুল (কালবেলা) ও হাবিবুর রহমানের (অলাতচক্র)। ‘অবলম্বন’ শিরোনামের প্রামাণ্যচিত্রের জন্য অনুদান পান রুবাইয়াত হোসেন। ‘অলাতচক্র’ ছবিটির প্রযোজক রহিমা বেগম। বাকি চলচ্চিত্রগুলোর প্রযোজনা করবেন পরিচালকগণ নিজেরাই।
এই বছরেও ছবি নির্মাণে বিশৃঙ্খলা দেখা যাচ্ছে। কালবেলা ছবির পরিচালক ও প্রযোজক সাইদুল আনাম টুটুল মারা যান ২০১৮ সালে। এরপর ছবিটি তার স্ত্রী মোবাশ্বেরা খানম নির্মাণ করবেন বলে ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর গণমাধ্যমকে তথ্য দিয়েছিলেন ছবিটির অভিনেতা শিশির আহমেদ। তারপর আর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি এ ছবির।
নানা জটিলতায় আটকে আছে ওই বছরে অনুদান পাওয়া অন্য সিনেমাগুলোও। তার মধ্যে কোনোটির শুটিং শুরু হয়েছে, কোনোটি নেই কোনো খবরে।
২০১৮-২০১৯ অর্থবছর: এ বছরে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভাগে সরকারি অনুদান পেয়েছেন বেশ কয়েকজন নির্মাতা। এদের মধ্যে রয়েছেন চলচ্চিত্রাভিনেত্রী ও পরিচালক কবরী, অভিনেতা মীর সাব্বির ও হৃদি হক। এছাড়া অনুদান পেয়েছেন আকরাম খান, হোসনে মোবারক রুমি। মীর সাব্বির নির্মাণ করবেন পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘রাত জাগা ফুল’। হৃদি হক নির্মাণ করবেন ‘১৯৭১ সেইসব দিন’। কবরী নির্মাণ করবেন ‘এই তুমি সেই তুমি’ নামে একটি সিনেমা। ‘বিধবাদের কথা’ নামে সিনেমা নির্মাণ করবেন আকরাম খান। হোসনে মোবারক রুমি নির্মাণ করবেন ‘অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া’।
পূর্ণদৈর্ঘ্য পাঁচটি চলচ্চিত্রের মধ্যে মীর সাব্বির ও আকরাম খানের সিনেমা দুটি পাবে ৬০ লাখ টাকা করে। আর বাকি তিন জন পাবেন ৫০ লাখ টাকা করে। প্রামাণ্যচিত্র শাখায় হুমায়রা বিলকিস নির্মাণ করবেন ‘বিলকিস এবং বিলকিস’ ও পূরবী মতিন ‘মেলাঘর’। এ দুই পরিচালক তাদের প্রামাণ্যচিত্রের জন্য পাবেন ৩০ লাখ টাকা করে। শিশুতোষ শাখায় আবু রায়হান মোহাম্মদ জুয়েল নির্মাণ করবেন ‘নসু ডাকাত কুপোকাত’। তিনি পাবেন ৬০ লাখ টাকা।
এখান থেকে একটি সিনেমাও মুক্তি পায়নি। তবে মোহাম্মদ জুয়েল ‘নসু ডাকাত কুপোকাত’ নাম পরিবর্তন করে ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’ হিসেবে ছবিটির শুটিং প্রায় শেষ করে এনেছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। অন্যদিকে কবরী তার ছবির শুটিং শুরু করেছেন চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে।
২০১৯-২০২০ অর্থবছর: চলচ্চিত্র শিল্পের কল্যাণের জন্য বড় উদ্যোগের অংশ হিসেবে তথ্য মন্ত্রণালয় মোট ১৬টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও ৯টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের জন্য অনুদান দিয়েছে। এর মধ্যে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য ৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের জন্য ১ কোটি ৫২ লাখ ৫০ হাজার টাকা অনুদান বরাদ্দ হয়েছে। বাজেটের আকার কিংবা চলচ্চিত্রের সংখ্যা উভয়ের দিক থেকেই এটি সর্বোচ্চ পরিমাণের রেকর্ড।
‘টুঙ্গিপাড়ার দুঃসাহসী খোকা’ শিরোনামে চলচ্চিত্রের জন্য সর্বোচ্চ ৭০ লাখ টাকা অনুদান পাচ্ছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা মুশফিকুর রহমান গুলজার। নির্মাণের সঙ্গে চলচ্চিত্রটি প্রযোজনাও করবেন তিনি।
‘কাজলরেখা’ শিরোনামে চলচ্চিত্রের জন্য অনুদান পাচ্ছেন গিয়াস উদ্দিন সেলিম; এটি প্রযোজনাও করবেন তিনি। নির্মাতা বদরুল আনাম সৌদ ‘শ্যামা কাব্য’ চলচ্চিত্রের জন্য অনুদান হিসেবে পাচ্ছেন; তিনিও ছবিটি নির্মাণের সঙ্গে প্রযোজনাও করবেন।
তালিকায় আরও আছে প্রদীপ ঘোষের প্রযোজনা ও পরিচালনায় ‘ভালোবাসা প্রীতিলতা’, এম এন ইস্পাহানীর প্রযোজনা ও ইস্পাহানী আরিফ জাহানের পরিচালনায় ‘হৃদিতা’, ফজলুল কবীর তুহিনের প্রযোজনা ও পরিচালনায় ‘গাঙকুমারী’, অনুপম কুমার বড়ুয়ার প্রযোজনা ও সন্তোষ কুমার বিশ্বাসের পরিচালনায় ‘ছায়াবৃক্ষ’, রওশন আরা রোজিনার প্রযোজনা ও পরিচালনায় ‘ফিরে দেখা’, তাহেরা ফেরদৌস জেনিফারের প্রযোজনা ও মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের পরিচালনায় ‘আশির্বাদ’, ইফতেখার আলমের প্রযোজনা ও পরিচালনায় ‘লেখক’, আবদুল মমিন খানের প্রযোজনা ও মনজুরুল ইসলামের ‘বিলডাকিনী’।
মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রে অনুদান পেয়েছে পংকজ পালিতের প্রযোজনা ও পরিচালনায় ‘একটি না বলা গল্প’, অনম বিশ্বাসের প্রযোজনা ও পরিচালনায় ‘ফুটবল ৭১’ ও এস এ হক অলিকের ‘যোদ্ধা’ ছবি তিনটি।
শিশুতোষ দুটি চলচ্চিত্রে আমিনুল হাসান লিটুর প্রযোজনা ও আউয়াল রেজার পরিচালনায় ‘মেঘ রোদ্দুর খেলা’ ও নুরে আলমের প্রযোজনা ও পরিচালনায় ‘রাসেলের জন্য অপেক্ষা’ ছবি দুটি অনুদান পেয়েছে।
কিছু ছবি শুটিংয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলেও বেশিরভাগ সিনেমারই কোনো খোঁজ নেই।
প্রসঙ্গত, সব মিলিয়ে ২০১০ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এই দশ বছরে অনুদান দেয়া হয়েছে ৭৪টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রকে। তার মধ্যে মুক্তি পেয়েছে মাত্র ২৫টি চলচ্চিত্র, মুক্তি পায়নি ৪৯টি।
চলতি বছরে করোনার কারণে সবকিছুই স্থবির হয়ে আছে। সে বিবেচনায় চলতি বছরে অনুদান পাওয়া সিনেমাগুলো হিসেবে না আনলে গেল ৯ বছরে অনুদান পাওয়া ৫৮টি সিনেমার মধ্যে মুক্তি পায়নি ৩৩টি সিনেমা। যা সরকারি অনুদান তো বটেই, দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য খুবই হতাশাজনক।