‘কঙ্কাল চোর চক্রের সদস্যরা জেলা-উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে রয়েছে। তারা প্রথমে কবর থেকে লাশ তুলেই গভীর অরণ্য বা পাহাড়ি জনপদে নিয়ে যায়, পরে কেমিক্যালের মাধ্যমে লাশ পচিয়ে গরম পানি দিয়ে ধুয়ে মানবদেহের পূর্ণাঙ্গ কঙ্কাল করা হতো।’
রোববার দুপুরে আটক বাপ্পির কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার।
এর আগে শনিবার রাতে ময়মনসিংহে অভিযান চালিয়ে নগরীর আরকে মিশন রোডের একটি বাসা থেকে ১২টি মাথার খুলি ও দুই বস্তা কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়েছে। কোতোয়ালি পুলিশ এ সময় দুই কনটেইনার তরল ও তিন প্যাকেট গুঁড়া কেমিক্যালসহ বাপ্পি (২৫) নামে এক যুবককে আটক করেছে।
ওসি ফিরোজ তালুকদার বলেন, চক্রের সদস্যরা লাশ তুলে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কঙ্কাল সংগ্রহ করে চড়ামূল্যে নির্ধারিত ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে আসছিল।
এমন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার রাতে অভিযান চালিয়ে বাপ্পিকে আটক করি। এ সময় ১২টি মাথার খুলি ও দুই বস্তা হাড়গোড় জব্দ করি। বাসাটি ভাড়া নিয়ে কঙ্কাল সরবরাহ করা হচ্ছিল।
তিনি বলেন, কঙ্কাল চোর চক্রের সদস্যরা জেলা-উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে রয়েছে। কবর খোঁড়াখুঁড়ির সঙ্গে জড়িতদের মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির খবর চলে যায় চক্রের সদস্যদের কাছে।
তারা প্রথমে কবর থেকে মরদেহ তুলেই গভীর অরণ্য বা পাহাড়ি জনপদে নিয়ে যায়। পরে কেমিক্যালের মাধ্যমে লাশ পচিয়ে গরম পানি দিয়ে ধুয়ে মানবদেহের পূর্ণাঙ্গ কঙ্কাল সংগ্রহ করে।
পরে তুলে দেয়া হয় পাচারকারীদের হাতে। এসব কঙ্কাল চলে যায় পাশের দেশ নেপাল ও ভারতের মেডিকেল শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও চিকিৎসকদের কাছে।
প্রতিটি পূর্ণাঙ্গ কঙ্কাল ২০ থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। কঙ্কালগুলো পার্শ্ববর্তী হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচারের জন্য সংগ্রহ করা হয়েছিল। আটক বাপ্পী নগরীর কালীবাড়ি কবরস্থান এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে।
ময়মনসিংহ জেলার গহিন অরণ্য ও পাহাড়ি জনপদ মানবদেহের কঙ্কাল প্রক্রিয়াকরণের নিরাপদ স্থানে পরিণত হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। প্রায়ই জেলার বিভিন্ন স্থানে কবর থেকে লাশ চুরির খবর পাওয়া যায়।
দীর্ঘদিন ধরে এ অঞ্চলে কঙ্কাল পাচারকারী চক্রটি সক্রিয় বলে জানা গেছে। কঙ্কাল চোর চক্রের সঙ্গে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কতিপয় নেশাখোর ও মাদকাসক্তদের পাশাপাশি বিভিন্ন গোরস্তানের কবর খোঁড়াখুঁড়ির সঙ্গে জড়িত।
এ ছাড়া ময়মনসিংহে গহিন অরণ্য, পাহাড়ি জনপদ ও নির্জন স্থান বেশি থাকায় এসব স্থানকে কঙ্কাল প্রক্রিয়াকরণের নিরাপদ স্থান বলে মনে করে পাচারকারীরা।
ওসি জানান, কালীবাড়ি গোরস্তানের কবর খোঁড়াখুঁড়ির জড়িত এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে এ অভিযোগ রয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ ছাড়া এমন আরও সাতজনের নাম পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।
পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামান জানান, আটক ব্যক্তির জবানবন্দি অনুযায়ী কঙ্কাল চুরির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া চলছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত স্পষ্ট করে কিছু বলা যাবে না। তবে কবর থেকে লাশ তুলে কঙ্কাল চুরি বন্ধে পুলিশ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
জানা যায়, কবর থেকে লাশ তোলার বিনিময়ে একজন নেশাখোর বা মাদকাসক্ত ব্যক্তি পায় মাত্র দুই থেকে ৫ হাজার টাকা, যা পরে ২০-৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
এর আগে জেলার মুক্তাগাছা ও ভালুকা থেকে বিপুল পরিমাণ পূর্ণাঙ্গ কঙ্কাল ও তার অংশবিশেষ উদ্ধার করে পুলিশ।