তারকাদের স্মৃতিতে কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র

বিনোদন ডেস্ক

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়

এক মাসেরও বেশি সময় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর রবিবার মারা গেছেন ওপার বাংলার কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। যিনি একাধারে লেখক, কবি, রেডিও ঘোষক এবং অনুবাদকও ছিলেন। বহু প্রতিভাধর এই প্রবীণ তারকাকে হারিয়ে শোকে বিহ্বল গোটা টলিউড। শোক জানিয়েছেন অনেক বলিউড তারকাও। এছাড়া সৌমিত্রকে নিয়ে নানা মন্তব্য ও স্মৃতিচারণ করেছেন দুই ইন্ডাস্ট্রির বহু তারকা।

বলিউডের বিখ্যাত পরিচালক শ্যাম বেনেগাল আফসোস করে বলেন, তিনি প্রয়াত সৌমিত্রকে কাজে লাগাতে পারেননি। ১৯৮০ সালে ‘কলযুগ’ নামের একটি হিন্দি ছবিতে এই নির্মাতা বাঙালি অভিনেতা সৌমিত্রকে দিয়ে কাজ করাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সৌমিত্রের হিন্দি উচ্চারণের জন্য শেষ পর্যন্ত ওই চরিত্রটা চলে যায় রাজ বব্বরের কাছে। সৌমিত্রের মৃত্যুর পর সেই ঘটনা নিয়েই আফসোস করলেন শ্যাম বেনেগাল।

এদিকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে বাঙালিদের জন্য ঈশ্বরের অমর উপহার হিসেবে উল্লেখ করেছেন জনপ্রিয় গায়ক এবং বিজেপি সরকারের বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী বাবুল সুপ্রীয়। প্রয়াত অভিনেতাকে উদ্দেশ্য করে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি চিঠিও লিখেছেন। সেখানে জানিয়েছেন, সৌমিত্রকে তিনি ‘দাদা’ বলে ডাকতেন। আরও লিখেছেন, সৌমিত্রদা, ‘আপনি আমাদের জীবনে তারার মতো উজ্জ্বল হয়ে থাকবেন। চিরদিন আমাদের দিকনির্দেশনা দেবেন। আপনার চিরশান্তি কামনা করি।’

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণে অন্য সবার মতো স্মৃতি ভারাক্রান্ত বলিউড মেগাস্টার অমিতাভ বচ্চনও। ২০১৮ সালে কলকাতার ফিল্ম উৎসবে সৌমিত্রের সঙ্গে শেষবার দেখা হওয়ার কথা মনে পড়ছে তার। বাঙালি অভিনেতাকে ‘মূর্ত কিংবদন্তি’ আখ্যা দিয়ে অমিতাভ বচ্চন লিখেছেন, ‘ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম স্তম্ভের পতন হয়েছে। অভিনয় জগতে আপনার কৃতিত্বের কথা ভারতবাসী কখনোই ভুলবে না। ওপারে আপনার শান্তি কামনা করছি।

মায়ের প্রথম নায়ক ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তাই স্বাভাবিক ভাবেই মন ভারী নবাব-পত্নী শর্মিলা ঠাকুরের মেয়ে সোহা আলি খানেরও। ইনস্টাগ্রাম পেজে মায়ের সঙ্গে কিংবদন্তি অভিনেতার ছবি শেয়ার করে শ্রদ্ধা জানিয়েছে তাকে। ‘অপুর সংসার’, ‘দেবী’র মতো ছবিতে শর্মিলা ঠাকুরের সঙ্গে কাজ করেছেন সৌমিত্র। মায়ের কাছ থেকে শোনা সেই গল্পগুলোই বোধহয় আজ খুব করে মনে পড়ছে সোহার। সৌমিত্রকে প্রথম নায়ক হিসেবে উল্লেখ করে টুইট করেছেন শর্মিলাও।

কলকাতার চলচ্চিত্র নির্মাতা শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, সৌমিত্র কাকুর জন্য আমার লাল ডায়রিতে এখনো ফাঁকা আছে ডিসেম্বরের ডেট। আমার বড় একটি প্রজেক্টে কাজ করার কথা ছিল উনার। তার আগেই চলে গেলেন। তবে উনার কখনো বেলাশেষ হবে না, বেলাশুরু, বাঁচা শুরু। এখন থেকে উনি আমার মধ্যে, আমাদের মধ্যে বেশি করে বাঁচতে শুরু করবেন। আরও অভাববোধ তৈরি হতে শুরু করবে।

বর্ষীয়ান অভিনেতার মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পরেই স্মৃতিতে ডুব দেন সাংসদ-অভিনেতা দেব। ‘সাঁঝবাতি’ ছবিতে কিংবদন্তির সঙ্গে কাজ করেছিলেন বর্তমান প্রজন্মের অন্যতম এই বিখ্যাত অভিনেতা। সেই স্মৃতি যেন আঁকড়ে ধরে রাখতে চাইছেন দেব। টুইটারে দুজনের একসঙ্গে ছবি পোস্ট করে তার ‘ছানাদাদু’কে ভালো থাকার বার্তা দিয়েছেন তিনি।

দেবের মতোই শোকে মুহ্যমান আরেক সুপারস্টার অভিনেতা জিৎ। ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’ ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেছিলেন তারা। ইনস্টাগ্রামে জিৎ লিখেছেন, ‘চলে গেলেন বাংলা ছবির কিংবদন্তি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। একটি যুগের অবসান হল। তার কাজের মাধ্যমে তিনি আমাদের মনে থেকে যাবেন। তার সঙ্গে আমার খুবই সুন্দর বন্ডিং ছিল। আপনাকে খুবই মিস করব।

একাধিক ছবিতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিনয় করেছেন আবির চট্টোপাধ্যায়। কিংবদন্তির চলে যাওয়াটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে তার। অন্যদিকে, এই কালো বছরকে আর সহ্য করতে পারছেন না স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। টুইট করে তিনি লিখেছেন, ‘এই বছর সব কিছু কেড়ে নেবে। অভিভাবক, কিংবদন্তি, ছেলেবেলা, নস্টালজিয়া সবকিছু। নির্দয় বছর।’

অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত লিখেছেন, যখন খুব কাছের মানুষ চলে যান, মানুষ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। ঠিক জানে না, কী বলবে, কী করবে? আমার অবস্থা ঠিক সেই রকম। বুঝতে পারছি না, কী বলব! কী ভাবেই বা এই শোক সামলাব? এর আগে যতবার অসুস্থ হয়েছেন, এক মনে ঈশ্বরকে ডেকেছি। উনি যেন সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন। ভগবান সেই প্রার্থনা শুনেছেন। এবার আর ফিরলেন না।

এছাড়া সৌমিত্রের প্রয়াণে শোক জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ থেকে শুরু করে অনেকেই। অভিনেতার মৃত্যুর খবর পেয়ে প্রথমেই হাসপাতালে পৌঁছে যান মমতা। তিনি টুইটারে লিখেছেন, ‘ফেলুদা আর নেই। অপু বিদায় জানাল। বিদায় সৌমিত্রদা। তিনি একজন ‘লেজেন্ড’ ছিলেন। ভারতীয় ও জাতীয় সিনেমা আলাদা করে এক অতিকায় প্রতিভাকে হারাল। আমরা ওনাকে মিস করব। বিশ্ব ও বাংলা সিনেমা আজ অনাথ হয়ে পড়ল।’

বাংলা ভাষায় টুইট করে মোদি লিখেছেন, ‘শ্রী সৌমিত্র চট্টোপাধায়ের প্রয়াণ চলচ্চিত্র জগত, পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে এক অপূরণীয় ক্ষতি। তার কাজের মধ্যে বাঙালির চেতনা, ভাবাবেগ ও নৈতিকতার প্রতিফলন পাওয়া যায়। তার প্রয়াণে আমি শোকাহত। শ্রী চট্টোপাধ্যায়ের পরিবার ও অনুরাগীদের সমবেদনা জনাই। ওঁ শান্তি।’

রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ লেখেন, ‘সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর ফলে ভারতীয় সিনেমা এক মহীরুহকে হারাল। ‘অপু ট্রিলজি’ ও সত্যজিৎ রায়ের একাধিক ছবিতে অভিনয়ের জন্য তাকে বিশেষ ভাবে মনে রাখবে মানুষ। অভিনয়ের জগতে তার অবদান চিরস্মরনীয় হয়ে থাকবে’। রাষ্ট্রপতি এদিন মনে করিয়ে দেন জাতীয় পুরস্কারসহ বহু সম্মান পেয়েছেন সৌমিত্র।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে