এক বছরে বেড়েছে ১০৮ শতাংশ ই-কমার্স লেনদেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ই-কমার্স লেনদেন

করোনাকালে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিবেচনায় স্বশরীরে ব্যাংকে যাওয়া কমিয়েছেন সাধারণ গ্রাহকরা। সরাসরি ব্যাংক লেনদেনের পরিবর্তে ইন্টারনেট মাধ্যমই বেছে নিয়েছেন তারা। ঘরে বসে ক্যাশলেস বা নগদ মুদ্রাবিহীন এক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে অর্থ লেনদেনে আগ্রহ বেড়েছে তাদের। এর ফলে ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ে আর্থিক লেনদেন ও গ্রাহক সংখ্যা দুটোই বেড়েছে অনেক বেশি। করোনাকালে শুধু মোবাইল ব্যাংকিং বা এমএফএস নয়, অ্যাপসের মাধ্যমে লেনদেন করতেও বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছেন গ্রাহকরা। ঘরে বসে আর্থিক চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি তারা বিভিন্ন বিলও পরিশোধ করেছেন ইন্টারনেটের মাধ্যমে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর মাসে অটোম্যাটেড টেলার মেশিন (এটিএম), পয়েন্ট অব সেল (পিওএস), কাস্টমার রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট (সিআরএম) ও ই-কমার্স ট্রানজেকশন মিলিয়ে লেনদেন হয়েছে ১৬ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা। এক মাস আগেও অর্থাৎ আগস্টে এ লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১৪ হাজার কোটি টাকার ঘরে। সে হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এক মাসের ব্যবধানে ইন্টারনেটভিত্তিক লেনদেন বেড়েছে দুই হাজার ১৬০ কোটি ২০ লাখ টাকা।

universel cardiac hospital

ইন্টারনেটভিত্তিক লেনদেন বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি অবদান এটিএম খাতের। গত সেপ্টেম্বরে এটিএমের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ১৪ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এক হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা বেশি।

পয়েন্ট অব সেলের (পিওএস) মাধ্যমে গত সেপ্টেম্বরে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৩৫০ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল এক হাজার ২৮৯ কোটি টাকা।

আর কাস্টমার রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্টের (সিআরএম) মাধ্যমে সেপ্টেম্বরে লেনদেন হয়েছে ৭০১ কোটি টাকা। যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৭০ কোটি টাকা।

তবে সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে ই-কমার্সভিত্তিক লেনদেন। গত সেপ্টেম্বরে এ খাতে লেনদেন হয়েছে ৪০৬ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ১৯৫ কোটি ৩০ লাখ। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ই-কমার্স লেনদেন ২১০ কোটি ৭০ লাখ টাকা বেড়েছে, যার হার ১০৮ শতাংশ।

অন্যদিকে সেপ্টেম্বরে মোবাইলভিত্তিক লেনদেন হয়েছে ৪৯ হাজার ১২১ কোটি টাকা। যা আগের মাস অর্থাৎ আগস্টের তুলনায় ১৮ শতাংশ বেশি। আগস্ট মাসে এই লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৪১ হাজার ৪০৪ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ‘বিকাশ’র পাবলিক রিলেশন বিভাগের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, ঈদের পর আগস্টে ট্রানজেকশন কিছুটা কমেছে, এরপর এটি বাড়ছে। এখন সময় যতো যাবে এ সেবা ততই গ্রোথ করবে। তাছাড়া এখনো কোভিড-১৯ রোগী একেবারেই কমেনি, সামনের দিনগুলোতে আরও বাড়তে পারে। এতে স্বাভাবিকভাবেই মানুষ ব্যাংক ট্রানজেকশন থেকে সরে এসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ঝুঁকছেন। আবার দিন দিন মোবাইল সেবায় নতুন নতুন সেবা যুক্ত হওয়ায় গ্রাহক আরও আকর্ষিত হচ্ছেন।

দেশে ২০১৭ সালের ২ নভেম্বর থেকে ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা চালু হয়। এ সেবার মাধ্যমে গ্রাহক ঘরে বসে ক্যাশলেস বা মুদ্রাবিহীন লেনদেন করতে পারছেন এক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে। এতে সময়ক্ষেপণের বাড়তি ঝামেলা থেকেও মুক্ত হচ্ছেন গ্রাহক। এর মাধ্যমে গ্রাহকরা এক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য যে কোনো অ্যাকাউন্টে, অ্যাকাউন্ট থেকে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডে অথবা ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে অর্থ লেনদেন করতে পারছেন যে কোনো সময়ে। এছাড়া অল্প সময়ে ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ, ডিপিএস ও ঋণের কিস্তি জমা, বীমার প্রিমিয়াম দেয়াসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও পাচ্ছেন তারা।

অন্যদিকে নগদ টাকার লেনদেন কমাতে অনেক নীতি সহায়তা দিয়ে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেজন্য সম্প্রতি মোবাইলের মাধ্যমে টাকা জমা ও উত্তোলনের নির্ধারিত সীমাও বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে