ব্রিটেনে ‘সবুজ শিল্পবিপ্লব’ শুরুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ জন্য অনেকগুলো প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। সবুজ শিল্পবিপ্লব বাস্তবায়নের জন্য ১২শ’ কোটি পাউন্ডের বিশেষ তহবিল ঘোষণা করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।
এর উদ্দেশ্য হচ্ছে আরও সবুজ, আরও ভালো ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা। প্রকল্পগুলোর আওতায় আগামী ১০ বছরে তথা ২০৩০ সালের মধ্যে পেট্রল ও ডিজেলচালিত গাড়ি কেনাবেচা নিষিদ্ধ করা হবে। ব্রিটেনজুড়ে ২ লাখ ৫০ হাজার সবুজ কর্মসংস্থান তৈরি করা হবে। ডেইলি মেইল, বিবিসি।
আগামী বছর স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয় বসতে যাচ্ছে জলবায়ু সম্মেলন বা ক্লাইমেট সামিট কপ-২৬। এই সম্মেলনকে সামনে রেখে ব্রিটেন সবুজ শিল্পবিপ্লবের বৃহৎ প্রকল্পের ঘোষণাটি দিয়েছে।
সবুজ শিল্পবিপ্লব উদ্বোধন করতে গিয়ে করোনার কারণে সৃষ্ট সমস্যা ও ব্রেক্সিটের অচলাবস্থার দিকে ইঙ্গিত করে বরিস জনসন বলেন, যদিও এই বছর আমাদের পরিকল্পনামতো না হয়ে বাজেভাবে গেছে, তারপরও আমি আমাদের দেশকে সুষম স্তরে আনার পরিকল্পনা থেকে সরে যাইনি।
সবুজ শিল্পবিপ্লবের লক্ষ্যে ১০ দফা ঘোষণা দিয়েছেন বরিস। এ সময় তিনি বলেন, আমার ১০ দফা সবুজ বিপ্লবের লাখো সবুজ চাকরি তৈরি হবে। এর মধ্য দিয়ে ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার দিকে আমরা এগিয়ে যাব।
সবুজ শিল্পবিপ্লবের আওতায় আগামী ১০ বছরের মধ্যে পেট্রল-ডিজেলচালিত গাড়ির বেচাকেনা নিষিদ্ধের পাশাপাশি ডিজেলচালিত লরির যুগ থেকে বেরিয়ে আসবে ব্রিটেন।
উচ্চাকাক্সক্ষী এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আরও আছে-কার্বন নিঃসরণ একেবারে কম করে এমন গাড়ি উৎপাদনে মোটর গাড়ি উৎপাদক কোম্পানিগুলোকে উৎসাহিত করার জন্য ৫০ কোটি পাউন্ডের বেশি লোন মঞ্জুর করা হবে। এক দশকের মধ্যে বেসরকারি খাতে ৩ হাজার ৬০০ কোটি পাউন্ড বিনিয়োগের পথ উন্মোচন করা হবে।
সবুজ বিপ্লবের মহাপরিকল্পনা উদ্বোধন করতে গিয়ে বরিস বলেন, ‘আমাদের সবুজ শিল্পবিপ্লব স্কটল্যান্ড এবং দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে শক্তিশালী করবে, মধ্যাঞ্চলে বিদ্যুৎচালিত গাড়ির উৎপাদনকে উৎসাহিত করবে এবং ওয়েলসে উন্নত ও লেটেস্ট প্রযুক্তি ব্যবহারের দ্বার উন্মোচন করবে।
এর মধ্য দিয়ে আমরা আরও সমৃদ্ধ, আরও সবুজ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথে অগ্রসর হব।’ এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে বরিস জনসন তার ‘আরও ভালো বিনির্মাণের দিকে ফিরে আস’ এবং ‘আরও সবুজ বিনির্মাণের দিকে ফিরে আস’ শীর্ষক অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরতে চাইছেন।
করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট স্বাস্থ্য সংকট ও ব্রেক্সিট তথা ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে শর্তমুক্ত বিচ্ছেদ নিয়ে চাপের মধ্যে আছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। গত সপ্তাহে বরিসের শীর্ষ কৌশলগত উপদেষ্টা ডমিনিক কামিংসের পদত্যাগের পর সরকারকে নতুন করে উজ্জীবিত করার প্রচেষ্টা হিসেবে সবুজ শিল্পবিপ্লব পরিকল্পনা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবেন টোরি এমপিরা।
সবুজ শিল্পবিপ্লব পরিকল্পনায় আরও আছে-২০ কোটি পাউন্ড ব্যয়ে ২০২০ সালেই দুটি, ২০৩০ সালে আরও দুটি কার্বন ক্যাপচার ক্লাস্টার প্রতিষ্ঠা করা। হাইড্রোজেন হিটিং অ্যান্ড কুকিং প্রযুক্তির জন্য বাড়তি ৫০ কোটি পাউন্ড ব্যয়ের প্রতিশ্রুতি।
২০২৩ সালের মধ্যে দেশের প্রথম হাইড্রোজেন বিদ্যুৎ ব্যবহারের একটি এলাকা নিশ্চিত করা, ২০২৫ সালের মধ্যে একটি গ্রাম এবং ২০৩০ সালের মধ্যে পুরো একটি শহরের চাহিদা কেবল হাউড্রোজেন বিদ্যুৎ দিয়ে পূরণ করা।
বেক্সিটের পর নতুন প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে ব্রিটেনের অর্থনীতিতে আসা নতুন চাপ মোকাবেলা করাও বড় এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা করে পরমাণু জ্বালানি খাতে নতুন নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করাও এই উদ্যোগের অন্যতম লক্ষ্য।
তবে এত বড় উদ্যোগের পেছনে যে পরিমাণ বিনিয়োগ দরকার তার চেয়ে অনেক কম বিনিয়োগ ধরা হয়েছে বলে সমালোচনা করছেন সংশ্লিষ্টরা। অবশ্য সরকার বলছে, এটা প্রাথমিক পর্যায়। লাগলে বিনিয়োগ বাড়ানো হবে।