আলী যাকেরের মৃত্যুতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সমিতি, ঢাকা’র শোক

মোহাম্মদ সজিবুল হুদা

আলী যাকের-ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সমিতি, ঢাকা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কৃতিসন্তান, বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, অভিনেতা, ব্যবসায়ী ও কলামিস্ট আলী যাকেরের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে ঢাকায় বসবাসকারী ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীদের সংগঠন ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সমিতি, ঢাকা’।

সংগঠনটির পক্ষে এক শোকবার্তায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সমিতি, ঢাকা-এর সভাপতি, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি এবং সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও অতিরিক্ত সচিব (মহাপরিচালক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়) মোঃ খলিলুর রহমান প্রয়াতের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন ও শোকাহত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

এদিকে বরেণ্য এই সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, দেশের শিল্পকলা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আলী যাকেরের অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

উল্লেখ্য, আজ শুক্রবার ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আলী যাকের (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।

বার্ধক্য, হার্টের সমস্যাসহ কিছু শারীরিক জটিলতার কারণে গত ১৭ নভেম্বর আলী যাকেরকে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাকে সিসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। এছাড়া গত চার বছর ধরে তিনি ক্যানসারে ভুগছিলেন। সেই চিকিৎসার অংশ হিসেবে নিয়মিত তার থেরাপি চলছিল। তারই মধ্যে আবার তিনি করোনায়ও আক্রান্ত হন। এরপর তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল।

হাসপাতালে ভর্তির আগে বেশিরভাগ সময় বাসাতেই কাটাতেন আলী যাকের। সেখানে তাকে হুইল চেয়ারের মাধ্যমে চলাফেরা করতে হতো। চার বছর আগে শরীরে ক্যানসার ধরা পড়ার পর থেকেই তিনি অভিনয়ে অনিয়মিত হয়ে পড়েন। কাজ করেননি মঞ্চেও। বলতে গেলে, অভিনয় তিনি একেবারেই ছেড়ে দিয়েছিলেন। এবার ছাড়লেন পৃথিবীও।

তিনি ১৯৪৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলাধীন রতনপুর ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন । আলী যাকের ছিলেন চার ভাই-বোনের মধ্যে তৃতীয়। তার বাবা মোহাম্মদ তাহের ছিলেন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। বাবার চাকরির বদলি সূত্রে অল্পবয়সে কুষ্টিয়া ও মাদারিপুরে কাটান আলী যাকের। স্ত্রী স্বনামধন্য অভিনয়শিল্পী সারা যাকের, ছেলে অভিনেতা ইরেশ যাকের, ছেলের বউ মিম রশিদ, নাতনি নেহা ও মেয়ে শ্রিয়া সর্বজয়াকে নিয়ে ছিল তাঁর সংসার।

আলী যাকের ১৯৭২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন। ওই বছরেরই জুন মাসে তিনি নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে যোগ দেন। তখন থেকে নাগরিকই তাঁর ঠিকানা। ‘বাকি ইতিহাস’, ‘সৎ মানুষের খোঁজে’, ‘দেওয়ান গাজীর কিসসা’, ‘কোপেনিকের ক্যাপটেন’, ‘গ্যালিলিও’, ‘ম্যাকবেথ’সহ অনেক আলোচিত মঞ্চনাটকের অভিনেতা ও নির্দেশক তিনি। পাশাপাশি টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেও তিনি পেয়েছেন জনপ্রিয়তা। ‘আজ রবিবার’, ‘বহুব্রীহি’, ‘তথাপি’, ‘পাথর’, ‘দেয়াল’সহ বহু নাটকে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন আলী যাকের। বেতারে ৫০টির বেশি নাটক করেছেন তিনি। অভিনয় করেছেন বেশ কিছু চলচ্চিত্রে।

টেলিভিশনের জন্য মৌলিক নাটক লিখেছেন। নানা বিষয়ে দৈনিক পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখিও করেছেন দীর্ঘদিন। প্রকাশিত হয়েছে বই—‘সেই অরুণোদয় থেকে’, ‘নির্মল জ্যোতির জয়’। শখ করে ফটোগ্রাফিও করেন তিনি।

আলী যাকের নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সভাপতি। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি এবং বিজ্ঞাপনী সংস্থা এশিয়াটিক থ্রিসিক্সটি গ্রুপের চেয়ারম্যান তিনি।। যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির পূর্ণ সদস্য। শিল্পকলায় অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদকে ভূষিত করে। এছাড়াও তিনি পেয়েছেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী পদক, নরেন বিশ্বাস পদকসহ অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা। মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার ২০১৮-তে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন অভিনেতা আলী যাকের। তাঁকে ২০১৮ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সমিাত, ঢাকার পক্ষ থেকে গুণীজন সংবর্ধনা ও সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে