মহামারি করোনা ভাইরাসে বিপর্যস্ত বিশ্ববাসী অপেক্ষায় ভ্যাকসিনের জন্য। প্রাপ্যতার নিশ্চয়তা, গুণগতমান, কার্যকারিতা ও সংরক্ষণের জন্য তাপমাত্রা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় রেখে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে তৈরি ভ্যাকসিনের প্যাটেন্ট নিয়ে কাজ করা ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া থেকে ভ্যাকসিন কেনার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
প্রথম ধাপে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে সিরাম। আর এতে সরকারের খরচ হবে ১ হাজার ৫৮৯ কোটি ৪৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। ফলে প্রতি ডোজ ভ্যাকসিনে খরচ হবে ৬ দশমিক ২৫ ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় খরচ হবে প্রায় ৫৬০ টাকা।
এর আগে গত ৫ নভেম্বর অক্সফোর্ডের তৈরি ভ্যাকসিনের জন্য ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে অক্সফোর্ডের তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে সিরাম ইনস্টিটিউট।
জানা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে বেক্সিমকো ও ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে বাংলাদেশে করোনার ভ্যাকসিন আনা হচ্ছে। আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে এ ভ্যাকসিন বাংলাদেশে আসা শুরু হতে পারে। ভ্যাকসিন রাখা হবে বেক্সিমকোর গুদামে।
জানা যায়, ভারত যে দামে ভ্যাকসিন পাবে, সিরাম ইনস্টিটিউট বাংলাদেশকেও একই দামে ভ্যাকসিন দেবে বলে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ভ্যাকসিন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করেছে। ইংল্যান্ডের বিভিন্ন স্থানে এটি পরীক্ষামূলক প্রয়োগে সফল হয়েছে। বর্তমানে এটি তৃতীয় ধাপে প্রয়োগ শুরু হয়েছে, যার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বলে প্রমাণিত হয়েছে গবেষণায়। প্রত্যেক মানুষের জন্য এর দুটি করে ডোজ দেয়া হবে। দেড় কোটি মানুষকে ২৮ দিন পর পর এ ডোজ দেয়া হবে।
এদিকে গত বুধবার (২ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অনুসরণ করে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদন দেয় অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার কমিটি। এই ক্রয় প্রস্তাবটি দেয় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। বৈঠকের আগে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান ভ্যাকসিন কেনার বিষয়ে অর্থনৈতিক বিষয়ক সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির জন্য এর সার-সংক্ষেপ পাঠান। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অনুমতি সাপেক্ষে পাঠানো এ সার-সংক্ষেপে ভ্যাকসিন ক্রয়ে সরকারের ব্যয় ও ডোজ প্রতি ভ্যাকসিনের ব্যয় উল্লেখ করা হয়।
ডোজ প্রতি খরচ ৬ দশমিক ২৫ ডলার
সিরামের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) আলোকে সিরাম ইন্সটিটিউট অব ইন্ডিয়া এর প্রস্তুতকৃত ভ্যাকসিনের পরিবহন ব্যয়সহ প্রতি ডোজের মূল্য ৫ ইউএস ডলার নির্ধারণ করা হয়। ভ্যাকসিনের অন্যান্য আনুষঙ্গিক উপকরণের জন্য ১ দশমিক ২৫ ইউএস ডলার ধার্য করা হয়। এতে প্রতি ডোজ ভ্যাকসিন বাবদ মোট খরচ দাঁড়ায় ৬ দশমিক ২৫ ডলার। প্রাথমিক পর্যায়ে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন ক্রয়ের নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেই প্রেক্ষিতে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের মোট মূল্য দাঁড়ায় ১ হাজার ৫৮৯ কোটি ৪৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
গত ১০ নভেম্বর অর্থ বিভাগে ভ্যাকসিন ক্রয় ও আনুষঙ্গিক ব্যয়সহ মোট ১ হাজার ৫৮৯ কোটি ৪৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ চাওয়া হলে অর্থ বিভাগ হতে ১৫ নভেম্বর প্রাথমিক বরাদ্দ হিসেবে ৭৩৫ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায় যা রাজস্ব বাজেটে অন্তর্ভুক্ত। অর্থের উৎস জিওবি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রধান মহাপরিচালক কর্তৃক ক্রয় পরিকল্পনা অনুমোদন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।