কোনো জনপ্রতিনিধির উপস্থিতি ছাড়াই বেগম রোকেয়ার ভাস্কর্য উন্মুক্ত

রংপুর প্রতিনিধি

রংপুরে বেগম রোকেয়ার ভাস্কর্য উন্মুক্ত

রংপুর মহানগরের শালবন ইন্দিরা মোড়ে বেগম রোকেয়ার ভাস্কর্য ‘আলোকবর্তিকা’র উন্মোচন করা হয়েছে। তবে কোনো জমকালো আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে ভাস্কর্যটি উন্মুক্ত করা হয়নি এবং উপস্থিত ছিলেন না কোনো জনপ্রতিনিধি।

এই ভাস্কর্য উন্মোচন হওয়াতে দীর্ঘদিনের দাবি পূরণের সঙ্গে সমৃদ্ধ হল ভাস্কর্য ম্যুরালের নগরখ্যাত রংপুর। বুধবার সকাল ১১টায় বেগম রোকেয়ার জন্ম ও প্রয়াণ দিবসে ভাস্কর অনীক রেজার হাতেই লাল কাপড়ে মোড়ানো রোকেয়ার ভাস্করটি উন্মুক্ত করা হয়।

universel cardiac hospital

একটি সূত্র জানায়, স্থানীয় একটি মাদ্রাসার পক্ষ থেকে ওই ভাস্কর্যটি সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষকে উদ্বোধনের জন্য নিষেধ করা হয়। সে কারণে সিটি কর্পোরেশনের কোনো প্রতিনিধি সেখানে উপস্থিত হননি। অবশেষে ভাস্কর অনীক রেজা নিজেই এর উদ্বোধন করেন। তবে এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

কিছুটা দায়সারাভাবে ছোট পরিসরে ভাস্কর্য উন্মোচনের আয়োজনে উল্লেখযোগ্য বিশিষ্ট ব্যক্তির দেখা না মিললেও ছিলেন সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মী এবং কবি-সাহিত্যিকরা।

উন্মোচনপূর্ব আলোচনায় বক্তব্য রাখেন লেখক রেজাউল করিম মুকুল, সিনিয়র সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদল, কবি ও অধ্যাপক শাহ্ সুলতান তালুকদার, সহকারী অধ্যাপক আজাহার আলী দুলাল, সহকারী অধ্যাপক এআইএম মুসা, সহকারী অধ্যাপক অনিমা বর্মণ, সহযোগী অধ্যাপক মাহফিজুল আলম সুজন, কবি ও প্রকাশক মাসুদ রানা শাকিল প্রমুখ।

রংপুর সিটি কর্পোরেশনের অর্থায়নে রোকেয়ার ভাস্কর্য নির্মিত হলেও ভাস্কর্য উন্মোচন অনুষ্ঠানে তাদের কোনো কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিকে দেখা যায়নি। এ নিয়ে অনুষ্ঠানে ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেন অতিথিরা।

এ ব্যাপারে ভাস্কর অনীক রেজা বলেন, ভাস্কর্য নির্মাণ কাজ শেষে এটি উদ্বোধনের জন্য সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান, প্যানেল মেয়র মাহমুদুর রহমান টিটুসহ সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছি। কিন্তু তারা আমাকে এটি উন্মোচন করতে অনুমতি দিয়েছেন। অনুষ্ঠানে তাদের কারো না আসার ব্যাপারে আমি ব্যাখ্যা দিতে পারব না।

উন্মোচিত পাথর-কংক্রিটের ভেতর থেকে বের হয়ে আসা আলোকিত রোকেয়ার এই ভাস্কর্যের নামকরণ আলোকবর্তিকা। রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ১৫ লাখ টাকা অর্থায়নে ভাস্কর্যটি নির্মাণ হয়েছে। এর উচ্চতা মাটি থেকে ২০ ফিট।

এরমধ্যে শুধু পাথর-কংক্রিট থেকে বেরিয়ে আসা রোকেয়ার অবয়ব লম্বায় প্রায় ১২ ফিট। সমাজ পরিবর্তনে শিক্ষার শক্তি নিয়ে বেরিয়ে আসা রোকেয়ার এই ভাস্কর্যটিতে জন্ম-মৃত্যু সন উল্লেখসহ তার লেখা কিছু বই ও বাণী রয়েছে।

রসিক সূত্রে জানা গেছে, বিগত সিটি মেয়র প্রয়াত সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুর আমলে বেগম রোকেয়ার ভাস্কর্য নির্মাণ কাজের উদ্বোধন হয়েছিল। এরপর ধীরগতিতে চলা নির্মাণ কাজ হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। মাটি থেকে শুধু উঁচু বেদি তৈরির পরে কয়েকটি ইটের পিলার ছাড়া তখন আর কিছুই ছিল না। অযত্ন অবহেলায় পড়ে থাকা বেদিটি ভরে ছিল ধুলোবালি আর বিভিন্ন ফেস্টুন পোস্টারে।

মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা সেই বেদিটি দেখে হতাশ হয়েছিল স্থানীয় এলাকাবাসীসহ শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন মহল থেকে তখন ওই ভাস্কর্য নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করার দাবি জোরালো হয়ে ওঠে। অবশেষে বছর তিনেক বন্ধ থাকার পর আবারও শুরু হয় নির্মাণ কাজ। সেই নির্মাণ কাজের সমাপ্তি শেষে বুধবার সকাল ১১টায় বেগম রোকেয়া দিবসেই উন্মুক্ত করা হয় ভাস্কর্য ‘আলোকবর্তিকা

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে