মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের চাইতে ভাসানচরে হাজার গুণ ভালো আছেন। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বিষয়টি বুঝতে পারলে তা অবশ্যই স্বীকার করবেন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান হাফিজ আহমেদ মজুমদার।
আজ বুধবার দুপুর ২টায় চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা বোট ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
হাফিজ আহমেদ মজুমদার বলেন, প্রায় ১৩টি আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা আমাদের সঙ্গে কাজ করছে। আমাদের ভূমিকা তাদের আশ্বস্ত করবে। ধীরে ধীরে তারা বিষয়টি বুঝতে পারবে। সময়ের সাথে সাথে তারা অবশ্যই স্বীকার করবে রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের চেয়ে ভাসানচরে আরো অনেক ভালো আছে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা ভাসানচরে কক্সবাজারের চেয়ে হাজার গুণ ভালো আছেন। ভাসানচর সম্পর্কে যে ধারণাটা প্রচার পেয়েছে, সেটার কারণ হলো অনেকে এখনো ভাসানচরে যায়নি। যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় আমাদের বিদেশি বন্ধুরা যারা আছেন তারা লাফ দিয়ে যেমন কক্সবাজারে যেতে পারছেন, ঠিক সে রকমভাবে ভাসানচরে যেতে পারছেন না। তাই এমনটা বলছেন। ধীরে ধীরে তারা যেতে পারবেন সে ব্যবস্থা হচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠিক হলে ভাসানচরে আর কোনো সমস্যা থাকবে না।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে আট সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল ভাসানচর সরেজমিনে পরিদর্শন করে। পরে তারা বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলে দুই দশক আগে জেগে ওঠা দ্বীপ ভাসানচরে ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গাকে গত ৪ ডিসেম্বর স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ অনেকগুলো আন্তর্জাতিক সংস্থা রোহিঙ্গাদের এভাবে স্থানান্তর করা উচিত হয়নি বলে মত দিয়েছে।
রেড ক্রিসেন্ট চেয়ারম্যান বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, তাড়াহুড়া করে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে’। আমরা বলছি তাড়াহুড়া করে কেন নিয়ে যাওয়া হবে? এটি তো বহুদিন আগ থেকে করা হচ্ছিল। মুশকিল হলো তারা যদি চট করে যাইতে পারতো-আসতে পারতো তাহলে আর কোনো সমস্যা হতো না। সরকারেরও ধারণা, ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বিষয়টি বুঝতে পারবে। তাদের ধারণা নেই বলে এমন বলছে।
ভাসানচরকে মালদ্বীপের সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, মালদ্বীপের মতো একটি দেশ শুধু দ্বীপ আর দ্বীপ। ভাসানচর এর চেয়ে অনেক নিরাপদ। আমাদের দ্বীপগুলো মালদ্বীপের চেয়ে অনেক বড়।
তিনি রোহিঙ্গারা চলে যাওয়ার পর ভাসানচরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্যাডেট কলেজ করার প্রস্তাব দেন; একই সঙ্গে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য এত সুন্দর ব্যবস্থা করার জন্য বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে ধন্যবাদ জানান।
কক্সবাজারের চেয়ে ভাসানচরে চ্যালেঞ্জ কম মন্তব্য করে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. হাবিবে মিল্লাত এমপি বলেন, রোহিঙ্গাদের ম্যানেজ করা অবশ্যই চ্যালেঞ্জের। কারণ ১১ লাখ মানুষ বাংলাদেশে আছে এটি সবার জন্য চ্যালেঞ্জ। কিন্তু সত্য কথা হলো আমরা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে অভ্যস্ত। আমাদের কাছে (রেড ক্রিসেন্ট) ভাসানচরে কক্সবাজারের চেয়ে চ্যালেঞ্জ অনেক কম। বাংলাদেশে নেভি যেভাবে কাজগুলো গুছিয়ে নিয়েছে, আমার মনে হয় সমস্যা এখানে অনেক কম।
রোহিঙ্গা পরিবারগুলোকে ফ্যামিলি প্ল্যানিংয়ের আওতায় আনা হচ্ছে জানিয়ে ডা. হাবিবে মিল্লাত বলেন, বিষয়টিতে আমাদের নিজেদের মধ্যে ও ঢাকায় কথা হয়েছে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর সেখানে টিম পাঠাবে, তারা সেখানে থাকবে। সারাদেশে যেভাবে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর কাজ করে রোহিঙ্গারাও সেই সুবিধা পাবে। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিও এ ক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে।
ডা. হাবিবে মিল্লাত বলেন, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি সরকারের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ১৯৯২ সাল থেকে এ পর্যন্ত কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন আশ্রয় ক্যাম্পে বসবাসকারী নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত বলপূর্বক বাস্তচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের (রোহিঙ্গা) বিভিন্ন প্রকার মানবিক সহায়তা প্রদান করে আসছে। রেড ক্রিসেন্ট ভাসানচরের রোহিঙ্গাদের আগামী তিন মাস খাদ্যসহায়তা দেবে। যেহেতু সেখানে যাতায়াত ব্যবস্থার সমস্যা রয়েছে। রেড ক্রিসেন্টের পক্ষ থেকে সে সহায়তাও করা হবে। সাথে সাথে সেখানকার পয়ঃনিষ্কাশনেও সহায়তা করা হবে।
রোহিঙ্গাদের হাতের কাজ শেখানো হবে জানিয়ে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের কাউকে হাতের কাজ, কাউকে সবজি চাষ শেখানো হবে, যাতে তারা ব্যস্ত থাকে। এছাড়া তারা যেহেতু মানসিক ক্ষত নিয়ে মিয়ানমার থেকে এসেছে তাই তাদের সাইকো সোশ্যাল সাপোর্ট দেওয়া হবে। আমরা তাদের বলে এসছি কি কি আপনাদের লাগবে আমাদের জানান আমরা আপনাদের পূর্ণ সুবিধা দেব।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন সোসাইটির ট্রেজারার লুৎফুর রহমান চৌধুরী হেলাল, অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন, ব্যবস্থাপনা পর্ষদ সদস্য ডা. শেখ সফিউল আজম ও সোসাইটির চট্টগ্রাম ইউনিটের কর্মকর্তারা।