১৬ ডিসেম্বর ২০২০ পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিকামী বাঙালির বিজয় অর্জনের ৫০ তম দিবস। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে যে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল এবং সুদীর্ঘ ৯ মাস মুজিবনগর সরকারের বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচরদের দ্বারা যে যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল, ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী ও মিত্র বাহিনী তথা ভারতীয় বাহিনীর সম্মিলিত কমান্ডের নিকট ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমপর্ণে মধ্য দিয়ে সেই যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। বাঙালিরা আধুনিক বিশ্বে সর্বপ্রথম একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। আজকে ৪৯ বছর পেরিয়ে ৫০ বছরে পা দিয়েছে আমাদের এই রাষ্ট্র। বিজয়ের এই দিনে আমাদের পিছনের দিকে তাকানো উচিত। সেই সময় আমরা কেমন বিজয় চেয়ে ছিলাম এবং কেমন বাংলাদেশ ছিল আমাদের প্রত্যাশায়? এটিই আমাদের আলোচ্য বিষয়।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমরা যারা সেদিন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম কেউই বাংলাদেশ এখন যে পর্যায়ে আছে, এমন একটি দেশ চাইনি। সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর উত্থান, দুর্নীতি, দুরাচারী কর্মকাণ্ড এবং দুষ্কর্ম যেভাবে আমাদের সকলের উপর চেপে বসেছে এমন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশা নিয়ে আমরা যুদ্ধ করিনি। আমরা একটি সুন্দর, স্বাধীন, গণতান্ত্রিক, পরিচ্ছন্ন, বৈষম্যহীন এবং বিজ্ঞানমনস্ক রাষ্ট্রের জন্য যুদ্ধ করেছিলাম।
একথা অনস্বীকার্য যে দেশ স্বাধীনের পর বিগত ৪৯ বছরে সমগ্র দেশে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবেও আমাদের বিশাল অর্জন আছে। তবে এই সময়ের মধ্যে আমাদের যে মূল দর্শন তথা মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা সেই প্রশ্নে আজ আমরা একটি কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি। কেননা দেশে ক্রিয়াশীল অন্ধকারের শক্তিগুলো ( রাজাকার, আলবদর, আলশামসের সদস্যরা এবং তথাকথিত নিরপেক্ষতার নামে সেদিন যে গ্রুপটা দেশের বিভিন্ন মাদ্রাসা পরিচালনা করত) যারা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের পক্ষে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভূমিকা রেখেছিল তারা আজ আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। দেশবিরোধী এই শক্তিগুলো আইসিস, তালেবান, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর আর্থিক সহয়তায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার লক্ষে মাঠে-ময়দানে ধর্মের নামে উগ্র মতবাদ প্রচার ও বিভিন্ন ধরনের উস্কানিমূল বক্তব্য দিয়ে জাতিতে বিভক্তি সৃষ্টির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
আমরা আজ তাদের সতর্ক করে দিতে চাই, ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত ও দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জত-সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে আমরা যে বিজয় অর্জন করেছি সেই বিজয়কে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির কাছে কখনোই নস্যাৎ হতে দিতে পারি না। সুতরাং যারা বাংলাদেশ ও দেশের অগ্রযাত্রাকে ভালোবাসেন, এদেশের সার্বভৌমত্বকে অক্ষুণ্ণ রাখতে চান এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি যাদের শতভাগ আনুগত্য আছে আসুন আমরা এই অপশক্তিকে পরাভূত করতে একাত্তরের মতো আবারও ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলি।
জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু। জয়তু বিজয় দিবস।